ট্রাভেল পোস্ট- "মাওয়া ঘাটে এক মেঘলা দিনের স্মৃতি"

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। প্রতি সপ্তাহের মত আজও আমি একটি ভ্রমণ পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ভ্রমণ পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।

image.png

ভ্রমণ সবসময়ই মনকে প্রফুল্ল করে। আর যদি গন্তব্য হয় বাংলার তাজমহলের মতো এক আকর্ষণীয় স্থান, তবে সেই অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে আরও বিশেষ। কয়েকদিন আগে আপুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে গিয়েছিলাম প্রকৃতির মাঝে।যাতে করে প্রকৃতির ভালোবাসায় একটু প্রাণ খুঁজে পাই। তবে সেদিন এমন সুন্দর প্রকৃতি দেখে আমি নিজেও বেশ মুগ্ধ ছিলাম। যার জন্য আজ তার কিছু আনন্দ আপনাদের মাঝে ভাগ করে নিতে চলে আসলাম। মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না । কারন কোথাও ঘুরতে গেলে মনের সাথে সাথে দেহেও ফিরে আমে প্রাণ চঞ্চলতা আর সতেজতা। তাই তো মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে চেষ্টা করি। আর এই কারনেই মাঝে মাঝে চেষ্টা করি একটু ঘুরে বেড়াতে।

WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.32.37_bb8b478c.jpg

বেশ কিছুদিন আগে এক বিশেষ দিন কাটিয়েছিলাম আপুর সাথে। আমরা সেদিন ঘুরতে গিয়েছিলাম মাওয়া ঘাটে। ভ্রমণের নাম শুনলেই মন ভরে যায় এক অজানা উত্তেজনা আর আনন্দে। কিন্তু সেদিনের অনুভূতি যেন আরও বেশি সুন্দর ছিল, কারণ দিনটা ছিল মেঘলা। আকাশের ধূসর মেঘ আর চারপাশের প্রকৃতির শান্ত পরিবেশ এক অপূর্ব আবহ তৈরি করেছিল। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে পদ্মার বিশাল জলরাশি যখন চোখের সামনে ভেসে উঠল, মনে হচ্ছিল আমি যেন এক অচেনা জগতে এসে পৌঁছেছি। পদ্মার ঢেউ খেলা জলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে মনে হয় নদীও যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল ঢেউ—এই খেলায় নদীর ভিন্ন রূপ চোখে ধরা দেয়। আমরা প্রথমেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে এই সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। নদীর বাতাস চুলে খেলা করছিল, সেই ঠাণ্ডা হাওয়া যেন মনকেও ছুঁয়ে যাচ্ছিল। প্রকৃতির এই টান যে কত গভীর হতে পারে, সেদিন নতুন করে বুঝেছিলাম।


WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.32.36_4e678324.jpg

চারপাশে মানুষজন ছিল, কেউ নদীতে নৌকা ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউবা পরিবারের সাথে এসে নদীর তীরে গল্প করছে। কিন্তু তবুও নিজের মনে হচ্ছিল, যেন আমরা প্রকৃতির সঙ্গে একান্তে সময় কাটাচ্ছি। দূরে নৌকা চলার দৃশ্য, মাঝেমধ্যে ভেসে আসা ইঞ্জিনের শব্দ, আর আকাশে মেঘের খেলা—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি তৈরি করেছিল। পরে আমরা নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির আরও কাছে চলে গেলাম। চারপাশের সবুজ গাছপালা আর হালকা কাদামাটির গন্ধে মনে হচ্ছিল শহরের কোলাহল থেকে যেন অনেক দূরে এসেছি। প্রতিদিনের ব্যস্ততা, কাজের চাপ কিংবা নানা দুশ্চিন্তা সেই মুহূর্তে আর কোনোভাবেই মনে আসেনি। প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, এটাই আসল জীবন, যেখানে শুধু শান্তি আর সৌন্দর্য।


WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.32.33_fee0a136.jpg

হাঁটতে হাঁটতে আমরা গিয়ে বসেছিলাম এক জায়গায়, যেখানে ছোট ছোট দোকান ছিল। সেখান থেকে গরম গরম চা খেলাম। মেঘলা দিনে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার আনন্দ সত্যিই আলাদা। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা হাতে নিয়ে যখন নদীর দিকে তাকাই, তখন মনে হয় জীবনের সব ক্লান্তি মিলিয়ে যাচ্ছে। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা এই মুহূর্তের ভেতরেই লুকিয়ে আছে। আপুর সাথে গল্প করতে করতে সময়টা আরও আনন্দময় হয়ে উঠেছিল। আমরা ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে করছিলাম, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলছিলাম। সেই আলাপের ভেতর লুকিয়ে ছিল হাসি, মজা আর গভীর ভালোবাসা। ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখার আনন্দ নয়, বরং কাছের মানুষের সাথে স্মৃতি তৈরির এক দারুণ উপলক্ষ। সেদিন আপুর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত এখনো মনে আছে স্পষ্টভাবে।


WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.31.26_a8647a80.jpg

আকাশে মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিল, কিন্তু তা আমাদের আনন্দে কোনোভাবেই ভাটা ফেলেনি। বরং মনে হচ্ছিল মেঘের এই ছায়া, বাতাসের এই ছোঁয়া আর নদীর এই রূপ—সবকিছু মিলে আমাদের জন্য এক বিশেষ উপহার হয়ে এসেছে। আমরা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়ে যেন নিজের ভেতরের প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছিলাম। সেদিন সময় কেটে গিয়েছিল খুব দ্রুত। কখন যে সকাল থেকে বিকেল হয়ে গেল, টেরই পাইনি। পদ্মার তীর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, এই জায়গাটা যেন আমাদের ডাকছে আবারও ফিরে আসতে। ভ্রমণের শেষ মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, জীবনে বারবার এমন জায়গায় আসা উচিত, যেখানে মন ভরে যায়, হৃদয় শান্ত হয় আর সম্পর্কগুলো আরও গভীর হয়ে ওঠে।


WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.31.26_711e35dd.jpg

সেদিনের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে দাগ কেটে আছে। মাওয়া ঘাট শুধু একটি ভ্রমণস্থল নয়, বরং আমার কাছে এক টুকরো স্মৃতি, যেখানে আছে প্রকৃতির সৌন্দর্য, আপুর সাথে কাটানো সোনালি সময় আর জীবনের ছোট ছোট সুখের উপলব্ধি। আমরা সবাই জীবনে নানা ব্যস্ততার ভেতর ছুটে চলি, কিন্তু মাঝে মাঝে এমন একটি দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সুখ আসলে খুব সহজ। সেটা পাওয়া যায় এক কাপ চায়ের কাপে, মেঘলা আকাশের নিচে, আর প্রিয়জনের সাথে কাটানো নির্ভেজাল সময়ের ভেতরেই।


WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.31.24_00b463a9.jpg

মাওয়া ঘাটের সেই ভ্রমণ আমার মনে চিরকাল একটি বিশেষ জায়গা করে থাকবে। আমি যখনই চোখ বন্ধ করি, তখনই দেখতে পাই পদ্মার ঢেউ খেলা জল, আকাশের মেঘ আর আপুর সাথে ভাগ করে নেওয়া সেই মধুর মুহূর্তগুলো। জীবনের অনেক স্মৃতি সময়ের সাথে ম্লান হয়ে যায়, কিন্তু কিছু কিছু মুহূর্ত হৃদয়ের ভেতর চিরকাল বেঁচে থাকে। মাওয়া ঘাটের সেই দিন আমার কাছে ঠিক তেমনই একটি স্মৃতি।


WhatsApp Image 2025-09-29 at 23.31.25_ea21a60f.jpg

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা ভ্রমণ পোস্ট। আশা করবো আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অরেনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুনি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

1000028235.png

1000028233.gif

image.png

Sort:  
 3 days ago 

মাওয়া ঘাটের কথা আমি অনেক শুনেছি এবং এখানে ভ্রমণ করার ইচ্ছে ছিল৷ তবে এখনো পর্যন্ত সেখানে যাওয়া হয়নি৷ আজকে আপনার কাছ থেকে এই মুহুর্ত দেখে বেশ ভালোই লাগলো৷ যেভাবে আপনি এখানে আজকের এই সুন্দর ফটোগ্রাফি এবং সবকিছুর মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছেন তা দেখে বেশ ভালই লাগছে৷ ধন্যবাদ আপনাকে এত চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷