ট্রাভেল পোস্ট-বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি দেখতে যাওয়ার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। প্রতি সপ্তাহের মত আজও আমি একটি ভ্রমণ পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ভ্রমণ পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।

ভ্রমণ সবসময়ই মনকে প্রফুল্ল করে। আর যদি গন্তব্য হয় বাংলার তাজমহলের মতো এক আকর্ষণীয় স্থান, তবে সেই অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে আরও বিশেষ। কয়েকদিন আগে আপুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে গিয়েছিলাম প্রকৃতির মাঝে।যাতে করে প্রকৃতির ভালোবাসায় একটু প্রাণ খুঁজে পাই। তবে সেদিন এমন সুন্দর প্রকৃতি দেখে আমি নিজেও বেশ মুগ্ধ ছিলাম। যার জন্য আজ তার কিছু আনন্দ আপনাদের মাঝে ভাগ করে নিতে চলে আসলাম। মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না । কারন কোথাও ঘুরতে গেলে মনের সাথে সাথে দেহেও ফিরে আমে প্রাণ চঞ্চলতা আর সতেজতা। তাই তো মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে চেষ্টা করি। আর এই কারনেই মাঝে মাঝে চেষ্টা করি একটু ঘুরে বেড়াতে।

কিছু জায়গা আছে যেখানে গেলে মনে হয় সময় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। সেই জায়গাগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। কয়েকদিন আগে আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম সেখানে। বাইরে থেকেই জাদুঘরের বিশাল ভবন আর তার চারপাশের পরিবেশ মনে এক ধরনের গাম্ভীর্য এনে দেয়। ভেতরে ঢুকতেই এক অদ্ভুত নীরবতা আর ইতিহাসের গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। মনে হয় যেন কয়েক শত বছর আগে ফিরে গিয়েছি। আমাদের সেদিনের ভ্রমণ সত্যিই ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছিল। জাদুঘরে ঢোকার পর আমরা একের পর এক গ্যালারি ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। প্রতিটি গ্যালারিতেই যেন নতুন এক দুনিয়া অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। তবে যার কথা আজ বলতে চাই, সেটি হলো গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি ভরা একটি গ্যালারি। সেখানে ঢুকতেই মনে হলো আমি শহর থেকে হঠাৎ করেই গ্রামে চলে গেছি। ছোট ছোট প্রতিকৃতি আর ছবির মধ্যে ফুটে উঠেছিল বাংলার প্রাণ, বাংলার মানুষ আর বাংলার জীবনযাপন।

প্রথমেই চোখে পড়ল গ্রামের মহিলাদের তাত বোনার দৃশ্য। কাঠের তাতের ওপর বসে মহিলারা সুতো দিয়ে কাপড় বুনছেন। তাদের মনোযোগী মুখভঙ্গি, হাতের মেহেদি লাগানো আঙুল আর পাশে সাজানো রঙিন সুতো সবকিছু এতটাই জীবন্ত মনে হলো যে, মনে হচ্ছিল শব্দ শুনতে পাচ্ছি। শোনা যায় তাত বোনা শুধু কাপড় তৈরির কাজ নয়, এটি গ্রামের মহিলাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক শিল্প। রঙিন শাড়ি, গামছা কিংবা লুঙ্গির মতো পোশাক তৈরির এই প্রক্রিয়াটি শুধু দৈনন্দিন জীবনের অংশই নয় বরং গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক দিক। সেই মুহূর্তে মনে হলো আমি যেন গ্রামের উঠোনে বসে এক মহিলা তাত বুনছেন, তার সঙ্গে আলাপ করছি। এরপর দেখলাম গ্রামের হাটের দৃশ্য। একেবারে ছোট্ট বাজারকে প্রতিকৃতির মাধ্যমে সাজানো হয়েছিল। সেখানে শাকসবজি বিক্রি করছে কৃষক, গরু-ছাগল কিনছে গ্রামবাসী, আর চারদিকে ভিড় জমে আছে। এমন দৃশ্য আমাদের সবার পরিচিত হলেও শহরে থেকে সেই স্বাদ পাওয়া যায় না। গ্রামের হাট শুধু কেনা-বেচার জায়গা নয়, এটি গ্রামের মানুষের মিলনমেলা। গল্পগুজব, খোঁজখবর নেওয়া আর একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানো সবকিছুই মিশে আছে হাটের মধ্যে। প্রতিচ্ছবিতে যেন সেই সরগরম পরিবেশ হুবহু ফুটে উঠেছিল।

তারপর আমরা দেখলাম রাখালের দৃশ্য। মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর গরু চরাচ্ছে ছোট্ট এক রাখাল। তার হাতে বাঁশি, আর মুখে হাসি। দূরে খোলা আকাশ আর গরুর সারি। এই দৃশ্য দেখে মনে পড়ল আমাদের দেশের গ্রামীণ জীবনে রাখালের গুরুত্ব কতখানি। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরু নিয়ে মাঠে ঘোরে। রাখালদের বাঁশির সুর একসময় বাংলার গ্রামে খুব পরিচিত ছিল। এখন হয়তো শহরের মানুষ সেই সুর শোনার সুযোগ পায় না, কিন্তু প্রতিচ্ছবিতে তা এত জীবন্তভাবে ফুটে উঠেছিল যে, মনে হচ্ছিল সত্যিই বাঁশির শব্দ ভেসে আসছে। সবশেষে চোখে পড়ল গ্রামের বাড়ির উঠানে হাঁস-মুরগি খাবার খাওয়ার দৃশ্য। উঠোনে দানাপানি ছড়িয়ে দিচ্ছে একজন মহিলা আর চারপাশে ছুটে বেড়াচ্ছে মুরগি আর হাঁস। এই দৃশ্যটি এতটাই স্বাভাবিক আর প্রাণবন্ত যে মনে হচ্ছিল আমি আমার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছি। গ্রামের ঘরের উঠান, কাঁচা মাটির ঘর আর আশপাশে গাছপালার ছায়া সবকিছু মনে করিয়ে দিল শৈশবের কথা। ছোটবেলায় যখন গ্রামে যেতাম তখন প্রতিদিন সকালে হাঁস-মুরগির ডাকেই ঘুম ভাঙত। সেই স্মৃতি হঠাৎ করেই চোখের সামনে ভেসে উঠল।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এই গ্যালারির প্রতিটি ছবি যেন আমাদের শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দিল। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিক জীবনের ভিড়ে আমরা অনেক সময় ভুলে যাই আমাদের মূল কোথায়। গ্রামীণ জীবন আমাদের দেশের প্রাণ, আমাদের সংস্কৃতির আসল রূপ। সেই জীবনযাপন, সেই সরলতা আর পরিশ্রমের সৌন্দর্যই এই গ্যালারির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ভ্রমণের সময় আমি লক্ষ্য করলাম অনেক মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি প্রতিচ্ছবি দেখছে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। তাদের চোখের ভেতরেও আমি দেখলাম বিস্ময় আর আনন্দ। হয়তো তারা সবাই তাদের নিজ গ্রামের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিল। গ্রাম শুধু একটি জায়গা নয়, এটি আমাদের অনুভূতি, আমাদের স্মৃতি আর আমাদের শেকড়।

জাদুঘরের এই অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আমরা শহরে থাকি বলে অনেক সময় গ্রামকে শুধু একটি দূরের জায়গা হিসেবে দেখি। কিন্তু আসলে গ্রামের জীবনই আমাদের দেশের মূল চিত্র। মাটির গন্ধ, খড়ের ঘর, খোলা মাঠ, নদী, কাশফুল, হাটবাজার, রাখালের বাঁশি এগুলোই বাংলাদেশকে সত্যিকার বাংলাদেশ বানিয়েছে। সেদিন জাদুঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন শুধু ইতিহাস বা শিল্পকলা দেখিনি, আমি আসলে নিজের দেশের আত্মাকে ছুঁয়ে দেখেছি। গ্রামীণ জীবনের প্রতিটি ছবি আমার হৃদয়ে নতুন আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। শহরের আধুনিকতার ভিড়ে দাঁড়িয়ে মনে হলো আমাদের আসল সৌন্দর্য, আসল শক্তি আর আসল পরিচয় লুকিয়ে আছে গ্রামে। ভ্রমণ শেষে যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন এক ধরনের তৃপ্তি কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল এই ভ্রমণ শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং নিজেকে নতুনভাবে চিনতে শেখার জন্য ছিল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের এই অভিজ্ঞতা আমার কাছে এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। যখনই গ্রামের কথা মনে পড়বে, আমি চোখ বন্ধ করে এই প্রতিচ্ছবিগুলো মনে করতে পারব।

আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত মাঝে মাঝে এমন জায়গায় যাওয়া, যেখানে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় হয়, যেখানে আমরা নিজেদের প্রকৃত রূপ দেখতে পাই। কারণ গ্রামই আমাদের জন্মভূমির প্রাণ, আর সেই প্রাণের ছোঁয়া না পেলে আমরা কখনো পূর্ণ হতে পারব না।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা ভ্রমণ পোস্ট। আশা করবো আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অরেনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুনি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।


