বিকেলের প্রকৃতি দেখতে হাতির ঝিলে কিছুক্ষন
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। প্রতি সপ্তাহের মত আজও আমি একটি ভ্রমণ পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ভ্রমণ পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।
ভ্রমণ সবসময়ই মনকে প্রফুল্ল করে। আর যদি গন্তব্য হয় বাংলার তাজমহলের মতো এক আকর্ষণীয় স্থান, তবে সেই অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে আরও বিশেষ। কয়েকদিন আগে আপুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে গিয়েছিলাম প্রকৃতির মাঝে।যাতে করে প্রকৃতির ভালোবাসায় একটু প্রাণ খুঁজে পাই। তবে সেদিন এমন সুন্দর প্রকৃতি দেখে আমি নিজেও বেশ মুগ্ধ ছিলাম। যার জন্য আজ তার কিছু আনন্দ আপনাদের মাঝে ভাগ করে নিতে চলে আসলাম। মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না । কারন কোথাও ঘুরতে গেলে মনের সাথে সাথে দেহেও ফিরে আমে প্রাণ চঞ্চলতা আর সতেজতা। তাই তো মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে চেষ্টা করি। আর এই কারনেই মাঝে মাঝে চেষ্টা করি একটু ঘুরে বেড়াতে।

মন আর দেহ—দুটো জিনিস আসলে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে। যখন দেহ অসুস্থ হয়, তখন মনের ভেতরেও এক ধরনের ভারী বোঝা নেমে আসে। আবার যখন মন খারাপ থাকে, তখন শরীরেও নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। কয়েকদিন হলো আমারও ঠিক এই অবস্থাটা হচ্ছে। শরীরটা একেবারেই ভালো নেই, বারবার মনে হচ্ছে যেন অসুখের বাসা বেঁধেছে। মাঝে মাঝেই ক্লান্ত লাগে, ছোটখাটো অসুবিধাই যেন বড় হয়ে দাঁড়ায়। আর মনের দিক থেকেও খুব একটা উজ্জ্বল সময় কাটছে না। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, জীবনটা যেন এক অচল গলিতে আটকে গেছে।


তবুও জীবন থেমে থাকে না। মন খারাপ হলেও কোনো না কোনোভাবে একটু আশার আলো খুঁজে বের করতে হয়। তাই একদিন আপুকে নিয়ে চলে গেলাম হাতিরঝিলে। ভেবেছিলাম একটু হলেও পরিবর্তন আসবে, অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও অন্যরকম পরিবেশে গিয়ে মনটা হালকা হবে। বিকেলের হাতিরঝিল একেবারেই আলাদা এক রূপে ধরা দিল। শহরের ভিড়ভাট্টা, কোলাহল, ধুলো আর যান্ত্রিক শব্দ থেকে বের হয়ে সেখানে পৌঁছে মনে হলো এক শান্ত নিরবতার মাঝে ঢুকে পড়েছি। সূর্যের আলো তখন ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসছে, লেকের জলে একরকম সোনালি আভা পড়ছে। পানির উপর হালকা বাতাস বইছে, সেই সঙ্গে ঢেউয়ের মৃদু শব্দ যেন হৃদয়ের ক্লান্তিকে একটু একটু করে ধুয়ে দিচ্ছে।


লেকের ওপরে ছোট ছোট লঞ্চ চলছিল। এগুলো মূলত যাত্রী পারাপারের জন্য, তবে বাইরে থেকে দেখলে মনে হচ্ছিল যেন ছোট ছোট খেলনার নৌকা জলের বুকে দুলছে। প্রতিটি লঞ্চের ভেতরে নানা রকম মানুষ—কেউ কাজ শেষে বাড়ি ফিরছে, কেউ হয়তো ঘুরতে বেরিয়েছে। তাদের সবার চোখেমুখে ভিন্ন ভিন্ন গল্প, কিন্তু জলের সাথে তাদের মিলেমিশে থাকা এক অনন্য সৌন্দর্য তৈরি করছিল। আমি অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে সবকিছু দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল প্রকৃতি আর লেক মিলে একে অপরকে আলিঙ্গন করছে। চারপাশে সবুজের ছোঁয়া, পানির ঝলমলে রূপ আর নৌকার চলাফেরা একসাথে যেন এক স্বপ্নিল দৃশ্য তৈরি করেছিল। আপু পাশে বসে বারবার বলছিল, “দেখো, কেমন সুন্দর লাগছে না?” আমি শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলাম, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যেন একটা শান্তির ঢেউ বইছিল।

শরীরের অসুখ যেমন সহজে দূর হয় না, মনের অসুখও তেমন হুট করেই চলে যায় না। তবে সেই বিকেলের হাতিরঝিল আমাকে শিখিয়েছে, কিছু সময়ের জন্য হলেও পরিবেশ বদলে নিলে ভেতরের ভার অনেকটাই হালকা হয়ে যায়। শহরের ভেতরেও এমন একটা জায়গা আছে যেখানে দাঁড়িয়ে মনে হয়, এখনো প্রকৃতি আমাদের হাতছানি দিচ্ছে, এখনো সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় যদি আমরা খুঁজে নিতে চাই। আমি লক্ষ্য করলাম, লেকের আশপাশে ছোট ছোট পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা একা একা ঘুরতে আসা মানুষজন হাঁটছিল। কারও হাতে আইসক্রিম, কারও হাতে চা, কেউ বা শুধু হেঁটে বেড়াচ্ছে। তাদের হাসি, গল্প, উচ্ছ্বাস যেন পরিবেশটাকে আরও জীবন্ত করে তুলছিল। মানুষের ভিড় থাকলেও তাতে কোনো বিরক্তি ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল সবাই এখানে এসেছেন নিজেদের ক্লান্তি দূর করতে, একটু শান্তি খুঁজতে।

কিছু সময় লেকের ধারে দাঁড়িয়ে থাকার পর আমি যেন ধীরে ধীরে নিজের ভেতরে পরিবর্তন টের পাচ্ছিলাম। শরীরটা তখনো দুর্বল ছিল, কিন্তু মনের ভেতর এক অদ্ভুত স্বস্তি আসছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেন একটুখানি হলেও আবার বাঁচার শক্তি ফিরে পাচ্ছি।আমরা জীবনে কত সমস্যার ভেতর দিয়ে যাই, কত অসুখ আমাদের ঘিরে ধরে। কখনো শারীরিক, কখনো মানসিক। কিন্তু প্রকৃতির কাছে গেলে সেই সব সমস্যাই একটু হলেও হালকা হয়ে যায়। হাতিরঝিল আমাকে সেই কথাই মনে করিয়ে দিল। হয়তো আমি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাইনি, কিন্তু অন্তত কিছুটা প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছি।

বিকেলের আলো যখন আরও ম্লান হয়ে এল, তখন লেকের ওপর বাতিগুলো জ্বলে উঠতে শুরু করল। জলের ওপর সেসব আলো প্রতিফলিত হয়ে একেবারেই অন্য রকম সৌন্দর্য তৈরি করল। শহরের লাইট আর লেকের নরম ঢেউ যেন মিলে এক রঙিন ক্যানভাস তৈরি করেছিল। আমরা তখন ধীরে ধীরে হাঁটছিলাম, পাশে বসা মানুষজনের কথাবার্তা শুনছিলাম, আর নিজের ভেতর নতুন করে বাঁচার তাগিদ অনুভব করছিলাম। অসুস্থতা আমাদের শরীরকে দুর্বল করে, মনের ভেতর অন্ধকার ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু সেই অন্ধকারের ভেতরেও যদি আমরা একটু আলো খুঁজে নিতে পারি, তবে জীবনটা আবারও সুন্দর মনে হয়। হাতিরঝিলের সেই বিকেল আমার কাছে সেই আলোর মতোই ছিল। হয়তো সাময়িক, হয়তো ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সেই সময়টুকু আমাকে মনে করিয়ে দিল—আমি এখনো বেঁচে আছি, আমি এখনো অনুভব করতে পারি, আমি এখনো সৌন্দর্য দেখতে পারি।

ফিরে আসার পথে মনে হচ্ছিল, এই ভ্রমণটা সত্যিই প্রয়োজন ছিল। দেহের অসুখ হয়তো এত তাড়াতাড়ি যাবে না, কিন্তু মনের অসুখ ধীরে ধীরে সেরে উঠতে শুরু করেছে। জীবন যতই কঠিন হোক, আমাদের একটু চেষ্টা করতে হয় নতুন করে বাঁচার জন্য। প্রকৃতি সেই চেষ্টাকে সহজ করে তোলে, শুধু আমাদের চোখ খুলে দেখতে জানতে হয়। হাতিরঝিলের সেই বিকেল আমার জীবনের এক বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে। ক্লান্ত শরীর, ভারী মন আর অসুস্থতার ছায়া সত্ত্বেও আমি খুঁজে পেয়েছিলাম শান্তি, প্রশান্তি আর নতুন আশার আলো।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা ভ্রমণ পোস্ট। আশা করবো আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অরেনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুনি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।


