সমাজ পরিবর্তনে দরকার সুন্দর মন।
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি সবাই ভাল আছেন,আমিও ভাল আছি। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব কিছু চিন্তা ভাবনা |
---|
আমার বেড়ে ওঠা ছিল গ্রামে।আর দশটা সাধারণ গ্রামের মতই ছিল আমাদের গ্রাম৷ গ্রামে আমাদের পরিবারের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। মানে গ্রাম্য শালিস দরবারে আমাদের পরিবারের মতামত নেওয়া হত এবং বিচার করার জন্য ডাকা হত। এখনো এই ধারা চলমান আছে।যদিও অন্য কাকারা এখন এগুলো তে মাথা ঘামান না।কিন্তু আমার বাবা এখনো এই ধারা বজায় রেখেছেন।
গত শুক্রবার পড়ছিলাম,এমন সময় গ্রাম থেকে দুজন লোক হাজির। দুই গ্রাম বাসীর মাঝে মারামারি হয়েছে তারই সালিশ শুক্রবার।সেজন্য বাবাকে বলতে এসেছে। তাদের কথার গল্পের ফাকে একজনের একটু খানি কথা আমার কানে আসল, তার চিন্তা টা আমার বেশ ভাল লাগেছে।
যার কথা বলছি উনি একজন কনস্ট্রাকশন কর্মী। তবে উনি হেড মিস্ত্রী।আর উনি সাধারণ ব্রিজ তৈরির কনট্রাক্ট নেন,অর্থাৎ ব্রিজ তৈরি করতে যে শ্রমিকের প্রয়োজন তা সাপ্লাই দেন।আগে কর্মী ছিলেন বর্তমানে নিজেই সাপ্লাইয়ার,আর বেশ টাকা আয় করেন।ফলে এখন বেশ দুপয়সা আয় করেন, আর এটিই এখন প্রতিবেশীর চক্ষুশূল হয়েছে। ফলাফলা এই মারামারি।
মারামারির কারন অতি তুচ্ছ। এই কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার, ধরি উনার নাম সুলতান আর বিবাদির নাম আমজাদ। এখন আমজাদ আর সুলতান প্রতিবেশী। কিন্তু বর্তমানে সুলতান এর অবস্থার উন্নতি আমজাদ এর সহ্য হয় না তাই সে ঝগড়ার তাল খোজে।মানে টিপিক্যাল বাঙালি প্রতিবেশী আরকি। কিছুদিন আগে আমজাদ সাহেব এর একটি মুরগী সুলতান সাহেব এর বাড়ি ঢোকে। সুলতান সাহেব এর স্ত্রী মুরগীটিকে তাড়িয়ে দেয়,এটা নিয়ে দুই পরিবারের মহিলাদের মাঝে মারামারি।মারামারি শুরু করে আমজাদ সাহেব এর পরিবার।সুলতান সাহেব এর পরিবার মার খায়,কিন্তু এদিকে আমজাদ সাহেব এর পরিবার কেস করার হুমকি দিচ্ছে।অপরাধ মুরগী চুরি।সেটারই সালিশ।
তাই সুলতান সাহেব,আমজাদ সাহেব দুজনই এসেছেন। তখন সুলতান সাহেব বললেন এই কুরবানি ঈদে আমার আন্ডারের শ্রমিকরা আমার থেকে বকশিশ চাইলো।আমি চাইলে না করতে পারতাম কিন্তু আমি দিয়েছি।তবে তাদের ও শর্ত দিয়েছিলাম আমি যা দেব তাই নিতে হবে। তখন আমি তাদের প্রত্যেককে একটি করে মুরগী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। যদি প্রত্যেককে টাকা দিতাম তবে প্রত্যেককে ২০০/৩০০ করে দিলেই মিটে যেত কিন্তু আমি মুরগি ই দিয়েছি।যাতে ঈদের দিন সবাই মিলে পরিবার নিয়ে মাংস খেতে পারে,অন্যের আশায় বসে থাকতে না হয়। এতে মোট ২০০০০খরচ হয়ে গেল,যেটা আমার মোট পাওনার বিরাট অংশ। কিন্তু তাতে আমার আফসোস নেই। তারা হাসিমুখে ঈদ করতে পারবে এটাই আমার শান্তি। আর আমি কিনা ওর একটা মুরগী চুরি করব?
দেখুন চিন্তা টা কত সুন্দর। তিনি বকশিশ না দিলেও পারতেন। এই বকশিশের টাকা টা কিন্তু সম্পূর্ণ তার নিজ পকেট থেকে গেছে।তিনি যে খুব ধনি এমন নয়,তারও মোটামুটি চলে।২০০০০টাকা হয়ত অনেকের কাছে কিছু না।কিন্তু উনার মত মানুষের কাছে অনেক কিছু। কিন্তু তারপরেও তিনি সবার খুশির কথা ভেবে পিছপা হননি।সত্য কথা বলতে উনার জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত আমি কাজটা করতাম না। আমার মাথায় থাকত নিজের পরিবার নিয়ে কিভাবে আরো ভালভাবে ঈদ কাটানো যায়।
উনার কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ আমাদের প্রিয় rme দাদার সেদিন স্পেশাল হ্যাংআউটে বলা কথা গুলো মনে পড়ে গেল। দাদাও কিন্তু সেদিন বললেন একা একা হয়ত মজা করা যায় কিন্তু আনন্দ হয় সবাইকে নিয়ে। দাদা স্টিমিট থেকে অনেক টাকা আয় করতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু উনি সেই রাস্তা বেছে না নিয়ে উনি সবাইকে সাথে নিয়ে ভাল থাকতে চেয়েছেন। যেমনটা করেছেন সুলতান সাহেব। দাদা ও সুলতান সাহেবের মত এমন মানুষদেরই সমাজের প্রয়োজন। তবেই সমাজ পরিবর্তন হবে,বৈষম্য ঘুচে যাবে।সবার মুখের হাসি থাকবে৷ আসুন আমরা সবাই এই মহান মানুষদের অনুসরন করি এবং সমাজকে সুন্দর করি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
তার বকশিতার বিষয়টি আমার কাছেও ভালো লেগেছে, আমার মনে হয় ওই বিচারে তার ওই উদাহরণটা সবারই ভালো লেগেছে বলে মনে হয় এবং আমি আপনার সাথে একমত আমাদের দাদাও চাইলে নিজের জন্য অনেক কিছু করতে পারতেন এই প্লাটফর্মে কিন্তু তিনি আমাদের কথা ভেবেছেন, আপনার আজকের লেখাগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
বর্তমান সমাজ এমন একটা পরিবেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে কারোর ভালো কারো সহ্য হয় না। আসলে মানুষের বিবেক-বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার কমে যাচ্ছে । সেই কারণেই এই ঝগড়া বিবাদ এর সৃষ্টি। যাইহোক, যে মানুষটির কথা বললেন তার চিন্তাশীল কর্মকাণ্ড আজকে তার সফলতার পথে নিয়ে গিয়েছে । যেমনটা কোরবানি ঈদে শ্রমিকদের মধ্যে নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে খুশি করাতে পেরেছে। এটাই অনেক বড় পাওয়া খুবই ভালো লাগলো পড়ে।
আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদা আর সুলতান সাহেবের মতোন মানুষ যেমন সমাজে প্রয়োজন। তেমনি প্রয়োজন আমজাদ এর মতোন মানুষ গুলোর মানসিকতার পরিবর্তন। তবেই সমাজ সামনএর দিকে এগুবে।
সুলতান সাহেবের এই মহানবতা দেখে তার প্রতি শ্রদ্ধা চলে আসলো। তিনি অনেক বড় মনের মানুষ। হয়তো তার জায়গায় থাকলে আমিও এতগুলো টাকা খরচা করতাম না। কিন্তু আমজাদ সাহেবের মত এমন পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি শুধুই ঘৃণা। এমন প্রতিবেশী অবশ্যই থাকবে।
যাই হোক সুলতান সাহেবের মত আমাদের rme দাদাও মহত্ত্বের পরিচয় দেয়।
সত্যি সুলতান সাহেবের কাজটি অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে আনন্দ করতে চেয়েছেন এবং ভালো থাকতে চেয়েছেন। আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যিই আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমাদের প্রিয় দাদার সাথে সুলতান সাহেবের চিন্তা ও ধারণার বেশ মিল রয়েছে। তাই সমাজকে সুন্দরভাবে গঠন করার জন্য এ ধরনের মানুষগুলো সত্যিই আমাদের সমাজে অনেক অনেক প্রয়োজন।
হ্যা আসলেই এমন মানুষদের প্রয়োজন আমাদের। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
এখন কিন্তু সময় এসেছে সমাজ পরিবর্তন করার। কারন এ সমাজে আমজাদের মত লোকরা যতদিন থাকবে ততদিন সমাজ থেকে অশান্তি দূর হবে না। বেশ সুন্দর করে আজ আপনি আমাদের মাঝে পোস্টটি তুলে ধরেছেন। আপনার লেখাগুলো সত্যিকার অর্থে আমায় বেশ মুগ্ধ করেছে। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
হ্যা আমজাদ সাহেব এর মত লোক দের আগে ভাল মানুষ বানাতে হবে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
বেশ চমৎকার একটি পোস্ট আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইজান। খুবই খুশি হলাম আপনার সুন্দর এই পোস্ট দেখতে পেরে। যেখানে সমাজ পরিবর্তন নিয়ে সুন্দর কথা আপনি উপস্থাপন করেছেন আমাদের মাঝে। সুলতান সাহেবের যুক্তি এবং কার্যক্রমটা সত্যি প্রশংসনীয়।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য
সুলতান সাহেব আসলেই বড়ো মনের অধিকারী। আসলে গ্রামে টিপিক্যাল প্রতিবেশীর অভাব নেই।আসলে ছোট খাট বিষয় গুলো নিয়েই অনেক বড়ো ধরনের অঘটন গুলো ঘটে যায়।পোস্টেও সেটাই পরিস্কার। পৃথিবীতে কেউ যেন কারো ভালো দেখতে পারে না সহ্য হয় না কেউ ভালো চললে কিংবা ভালো কোন কাজ করলে।আসলেই তো যে মানুষ এতোগুলা মুরগী বিলিয়েছে অন্যের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য আর সে মুরগি কেন চুরি করবে আসলে মনে হয় শত্রুতার বশবর্তী হয়ে এসব বলেছেন। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ মামি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।