এক রাতে ইঁদুরের সাথে ধস্তাধস্তির গল্প

in আমার বাংলা ব্লগlast year


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি ইঁদুরের গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।


ইঁদুরের সাথে ধস্তাধস্তির গল্প:

IMG_20231118_061108_352.jpg


সময়টা ছিল বর্ষাকাল। চারিদিকের পুকুরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। আমি যেই রুমে থাকি তার সামনে দুইটা পুকুর রয়েছে। এদিকে রাস্তার পাশেও রয়েছে পুকুর। পুকুরের ধার করেছিল বেশ অনেকগুলো ইঁদুরের গর্ত। মাছের খাবার দেয়ার সময় লক্ষ্য করতাম ইদুর পুকুরের ধার দিয়ে চলাচল করে। বোনের ইদুর বলে কথা। দেখতে যত বড়, লেজ তত বড়, গায়ের লোমগুলো বড় বড়। আমি প্রায় দিন একটি ইদুর এমন ভাবে লক্ষ্য করি মাছের খাবার দিতে গিয়ে। বর্ষার পানিতে পুকুরের ধার পরিপূর্ণ হয়ে উতলিয়ে যাওয়ার মত। এরপরে ইঁদুর আর সেই জায়গায় চলাচল করতে পারেনা। ইঁদুর মূলত পুকুরের ছোট ছোট শামুক খায়। যেখানে পাঙ্গাস মাছের খাবার দেওয়া হয় সেই জায়গার আশেপাশে ছোট ছোট শামুখে পরিপূর্ণ হয়ে যায় খাবার খেতে আসে। আর সেই শামুক গুলা তুলে তুলে খাওয়ার চেষ্টা করে ইদুরে। যেহেতু বৃষ্টির পানি হয়ে পুকুর পরিপূর্ণ, তাই ইঁদুরের চলাচল বন্ধ হয়ে গেল এবং শামুক খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। আমি মনে মনে সেই ইদুরের চিন্তা করছিলাম, যখন মাছের খাবার দিতে যায়।


IMG_20231118_061312_158.jpg



কিছুদিন পর ঠিক সেম সেই ইদুরের দেখা পেলাম আমার নিজের রুমে। অর্থাৎ পুকুরে তার খাবার খাওয়ার আর সুযোগ নেই, তাই রুমের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করতে এসেছে অর্থাৎ খাবার খুঁজতে এসেছে। আর ঠিক এভাবেই পুকুর থেকে এখন রুমের মধ্যে জ্বালাতন শুরু করেছে ইঁদুরটা। সারাদিন কাজকর্ম শেষে যখন ঘুমাতে যাই লাইট অফ করি,ঠিক তখনই ইঁদুরের অত্যাচার শুরু হয়ে যায়। আমার সব সময় অভ্যাস ছিল মোবাইল রাখার পাশাপাশি ছোট টর্চলাইট পাশে রাখা। যখনই যে পাশে শব্দ শুনি, সেই পাশে টর্চ লাইট জ্বালায়, তখনই দেখি সেই ইদুরটা আমার রুমের মধ্যে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমার রুমে আসার পিছনে বড় কারণ রয়েছে, পাঙ্গাস মাছের রেডি ভাসমান খাবারের প্যাকেট আমার রুমের এক কোনায় রাখা হতো। সেই খাবার খাওয়ার লোভে ইদুরটা আসতো। তবে দিনের দিন তার অত্যাচার এতটা বেড়ে গেল রাতের ঘুম যেন আমার হারাম হয়ে গেল। একটু ঘুম আসতে না আসতে, তার দাবড়িয়ে বেড়ানো, এটা সেটা ফেলে দেওয়া, এমনটাই চলতে থাকলো। দিনের বেলায় বাড়িতে সবাই বলাবলি করতো তোর রুমের মধ্যে রাতে যুদ্ধ চলে নাকি। কারণ এভাবে কয়েকটা ইঁদুর অত্যাচার শুরু করে দেয়। বুঝতে পারছেন উপরে টিনের চাল, রুমের মধ্যে বেশ অনেক কিছু জিনিস রয়েছে। নিরব নিস্তব্ধ রাতের সাউন্ড একটু বেশি হয়ে থাকে।

একদিন রাতে ইঁদুর টাকে আমি মারার চেষ্টা করলাম। তবে রুমের মধ্যে অনেক জিনিস থাকাই কোন ভাবে তাকে মারতে পারলাম না। তবে আমি একটা জিনিস ভালো ভাবে লক্ষ্য করেছিলাম, তা হচ্ছে ইঁদুরটা দেওয়াল বেয়ে উপরে উঠতে পারছে না। লাফিয়ে লাফিয়ে দেয়ালের গায়ে যেতে গিয়ে আবার পড়ে যাচ্ছে। এরপর সে আমার খাটের নিচ দিয়ে দরজার এক কোণে ফাঁকা জায়গা সে ফাঁকা জায়গা দিয়ে বের হয়ে বাইরে চলে গেল। তখনই বুঝতে পারলাম ইঁদুরটাকে খুব সহজে মারা যাবে। তবে তাকে দেখেই যেন ভয় লাগে। একলা রাতে তার সাথে ধস্তাধস্তি করাটাও কঠিন। তারপরের দিন প্লান পরিকল্পনা প্রস্তুত। জানি প্রত্যেক রাতে সে আসবে আর অত্যাচার করবে। আমি আমার রুমের মধ্যে পর্যাপ্ত জিনিস বের করে রুম ফাঁকা করে রাখলাম যেন ইঁদুরটা রুমের মধ্যে প্রবেশ করলে তাকে মারতে পারি। আর ঠিক সেভাবে প্রস্তুতি রেখেছিলাম। আর রেখেছিলাম সুন্দর একটা সাইজ আলা লাঠি। গতরাতে যেই দরজার ফুকুট দিয়ে বের হয়ে গেছে সেটা বন্ধ করে রাখার ব্যবস্থা রাখলাম।



IMG_20231118_061154_322.jpg


পরবর্তী রাত্রে রাত বারোটার পর ইদুরটা রুমের মধ্যে আসলো। এরপর মাছের খাবারের বাস্তা সহ এক এক জিনিসের উপর লাফিয়ে বেড়ানো অর্থাৎ তার মত উৎপাত চালিয়ে যাচ্ছে। আমি সাথে সাথে বেড থেকে উঠেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছি, ফুকুট বন্ধ করে দিয়েছি। এরপর রুমের মধ্যে আলো জ্বালালাম। ইঁদুর তো আমার এমন পরিকল্পনা দেখে অবাক। সে রুমের মধ্যে এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছে, তাতে কোন লাভ হচ্ছে না কোন জায়গা ফাঁকা নেই। তবে এমন মাঝামাঝি রাত্রে একটা ইঁদুরের সাথে ধস্তাধস্তি করা বেশ কঠিন ব্যাপার। আমি যখন তাকে মারার চেষ্টা করলাম সে এমন লাফ দিচ্ছে যেন গার উপর উঠে পড়লে বিপদ। কখনো খাটের উপর দাঁড়িয়ে তার গায়ে আঘাত করার চেষ্টা। কখনো মাছের খাবারের বস্তার উপর দাঁড়িয়ে তার গায়ে আঘাত করার চেষ্টা। এদিকে চেয়ার ছিল, চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে তার গায়ে আঘাত করার চেষ্টা। ঠিক এভাবেই ধস্তাধস্তি চলতে থাকল প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট। রুমের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা করেছিলাম কিন্তু সব তো আর ফাঁকা হয়নি। হাঁপিয়ে গেলাম কিছুটা সময়ে রেস্ট গ্রহণ করেছিলাম। ইঁদুরটাও বেশ এক কর্নারে রেস্ট গ্রহণ করেছিল। খাবার শুরু হল শিকার করা। সে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছোটাছুটি শুরু করল, লাফাতে শুরু করলো আর জোরে জোরে সাউন্ড শুরু করলো। আমি লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করতে পারছি না কোন স্থান এর দিকে, কারণ রুমের মধ্যে থাকা অন্যান্য জিনিস ভেঙে যাওয়ার ভয় রয়েছে। এদিকে প্রচন্ড ঘেমে গেছি আমি। ইঁদুরটা বেশ হাপিয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় থামছে আর এমন ভাবে সাউন্ড করছে মনে হচ্ছে যেন গোঙড়াচ্ছে। অতঃপর গত রাতে যে পথ দিয়ে বের হয়ে গেছিল, সেখানে আমি কাপড় জাতীয় জিনিস গুঁজে রেখেছিলাম। সে এসে তার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। এরপর আমার সুযোগ হয় আঘাত করার। অবশেষে আমি তাকে শিকার করতে পারলাম। ইতোমধ্যে রাত একটা বেজে গেছে। আর এভাবেই গেছো ইদুরের দীর্ঘদিনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।



গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিইঁদুর
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 last year 

আপনার রুমে ইদুরের অত্যাচারের বিস্তারিত পড়ে তো মনে হচ্ছে আমার রুমের চিত্র। আমার রুমেও রাত্রিবেলা ইঁদুর ডাকাত পড়ে।পনেরো বিশ মিনিট ইঁদুরের সাথে লড়াই করে অবশেষে শিকার করতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো।এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া ইঁদুরের পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 last year 

হ্যাঁ আপু অনেক ধস্তাধস্তির পর শিকার করতে পেরেছি।

 last year 

খুবই পেইন দিয়েছে ইদুরটা মনে হচ্ছে আপনাকে! ট্ম জেরির যুদ্ধ দেখেছি অনেক কিন্তু ইদুর-মানুষের এই যুদ্ধাবস্থার গল্প এই প্রথম পড়লাম।

যাহোক। অবশেষে তাকে কতল করতে পেরেছেন শুনে ভাল লাগল।

 last year 

একদম ঠিক বলেছেন আপনি।

 last year 

ইঁদুরের অত্যাচারে আমরা নিজেরা অতিষ্ঠ। তাহলে বাহিরের ইঁদুর আপনার ঘরে চলে আসলো। আর ইঁদুর এত সহজেই মারতে পারা যায় না। ইঁদুরগুলো একটু আওয়াজ পেলে পালিয়ে যায়। তবে ইদুর পছন্দের জিনিসও নষ্ট করে ফেলে। তবে ইদুর শিকার করেছেন অনেক ভালো করেছেন। তবে আমি নিজেও ইঁদুরের অত্যাচার অতিষ্ট। খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।

 last year 

আমরা সকলেই কমবেশি ইঁদুরের অত্যাচারের ভুক্তভোগী।

 last year 

সত্যি বলতে আমার বাড়ির আশপাশেও কয়েকটি ইঁদুর রয়েছে বেশ জ্বালাতন করে রাতের বেলায়। ইঁদুরের ধস্তাধস্তি করার গল্পটি পড়ে সত্যি অনেক মজা পেয়েছি 🤭 আপনি আসলে অনেক রসিক একজন মানুষ । ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আপনার এই সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ভালো লেগেছে যেন খুশি হয়েছি।

 last year 

ইদুরের অত্যাচার অনেক বড় অত্যাচার। এমন ঘটনা প্রায় বাড়িতে ঘটে থাকে। কিছু দিন আগে আমার সাথে এমনটা হয়ে ছিলো তবে সেটা ছুচো ছিলো। রান্না ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র ফেলে দিতো প্লেটের উপর পটি করে দিতে যেতো। অনেক ঝামেলাই পড়ে গিয়ে ছিলাম। ইঁদুর আপনার পরিকল্পনা দেখে অবাক হয়েছে এই কথাটা পড়ে বেশ মজা পেয়েছি।

 last year 

হ্যাঁ হঠাৎ সে তো বুঝতে পারিনি আমি এত সুন্দর ভাবে প্রস্তুত রয়েছি তার সাথে যুদ্ধ করতে।

 last year 

বিষয় সত্যি অনেক মজা ছিলো ভাই।😁

 last year 

ইঁদুর আসলেই অনেক বেশি অত্যাচার করে। বিশেষ করে তারা মাছের খাবার গুলো নষ্ট করে দেয়। আপনার বাড়ির তে ফাঁকা জায়গা না থাকার কারণে ইঁদুর বের হতে পারেনি আর এই কারণেই তাকে ধরতে পেরেছেন।

 last year 

অনাকাঙ্ক্ষিত অত্যাচার।