দ্বিতীয়বারের মতো গলাকাটা লাশ দেখার গল্প
হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
আনুমানিক ২০০০ সালের দিকে আমাদের গ্রামের রাস্তা পাকা করা হয়। এরপর রাস্তার দুই পাশ দিয়ে আম-কাঁঠাল ইপিলিপি গাছ লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বেশ কিছু মহিলাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। দীর্ঘ বছর ধরে গাছগুলো বড় হতে থাকে। গাছগুলোর পাশাপাশি আমরাও বড় হতে থাকলাম। একটা সময় আমাদের বাড়িতে বেশ অনেকগুলো ছাগল পুষতো। তাই ছাগলের পাতা সংরক্ষণ করতাম রাস্তার পাশের ইপিলিপিল গাছ থেকে। হাই স্কুলে উঠলাম। পাশের গ্রাম বানিয়াপুকুর। সেই গ্রামে আমাদের অনেকগুলা বন্ধু হল। আশেপাশের চার গ্রামের ছেলেমেয়েরা আমাদের স্কুলে পড়তে আসতো। বানিয়াপুকুর গ্রামের একটি ছেলে ভালো পর্যায়ের বন্ধু হল। ছেলেটার নাম রানা। সে শখ করে ছাগল পষতো। ২০০৬ সাল, ছেলে ক্লাস সিক্সের ভর্তি হয়েছে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়া আসা। তাই রানার বাবা শখ করে তার একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিল। সাইকেলটা দেখতে বেশ দারুন ছিল। সে তার সাইকেলটা নিয়ে এসে রাস্তার ইপিলিপিল গাছ থেকে পাতা সংরক্ষণ করার চেষ্টা করত। কিন্তু সে আমার মত গাছে উঠতে পারত না।
আমি প্রায় মাঝেমধ্যে তাকে পাতা পেড়ে দিতাম আর আমি আমার ছাগলের জন্য নিয়ে আসতাম। স্কুল থেকে বাড়ি এসেই খাওয়া দাওয়া করে আমি চলে যেতাম। ওদিকে রানাও খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিকেলে সাইকেল নিয়ে চলে আসতো। দুই গ্রামের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় আমরা ছাগলের জন্য পাতা পারতাম, বসে গল্প করতাম এভাবেই বিকালটা পার করতাম। এভাবেই মাঝেমধ্যে দুই বন্ধুর চলাচল। বছরকে বছর যেতে থাকলো। তখন মনে হয় ক্লাস এইট কি নাইনে উঠেছি। সে থেকে আস্তে আস্তে ছাগলের ঘাস পাতা সংরক্ষণ করা বন্ধ হয়ে গেল। বাড়িতে ছাগল গরু আর পুষলো না। আব্বা বলতো বাড়িতে এখন ছাগল গরু থাকলে আমার দুই ছেলের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে। নাইন টেন ভালোভাবে লেখাপড়া করলে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট হবে। তখন লেখাপড়ার প্রতি দুই ভাই মনোযোগী হয়ে পড়লাম। কিন্তু আমার অভ্যাস রয়েছে মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে আমার সাইকেলটা নিয়ে বিকেল মুহুর্তে ঘুরে বেড়ায়।
একদিন বিকেল বেলায়। আমি এমনিতে সাইকেল চালিয়ে আসলাম বানিয়া পুকুরের লাস্টের বাড়ি গুলার পাশ থেকে। এরপর বাড়িতে এসে সাইকেলটা আব্বা নিয়ে নিল। আব্বা মড়কা বাজারে হার্ট করতে গেল। যত সম্ভব সময় টা ছিল এখনকার মত ফেব্রুয়ারি মাস নাকি অন্য মাস অতটা স্মরণে নেই। এরপর কেন জানি আবার একলাই হাঁটতে হাঁটতে আমি সেই পর্যন্ত গেলাম। অর্থাৎ বিকেল মুহূর্তে তো আর কোন কাজ নেই। শুধু পড়া আর একটু ঘুরে বেড়ানো। আর মনটা একটু আনচান করতো হয়তো রানা সাইকেল নিয়ে সেখানে আসতে পারে। বন্ধুরা পাশের গ্রাম ১৬ টাকা থেকে প্রাইভেট পড়ে বানিয়া পুকুরে যেতে পারে অথবা আমার গ্রামের বন্ধুরা ফিরতে পারে। এমন চিন্তা নিয়েই তিন রাস্তার মোড়ের দিকে ঘোরাঘুরি করে আসলাম। পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে উঠে শুনতে পারলাম বানিয়াপুকুর গ্রামের একটি মানুষকে কেটে ফেলা হয়েছে। লাশটা একদম রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে। লাশ পড়ে রয়েছে একটি ইপিলিপিল গাছের গোড়ায়। এমন কথা শুনে খুবই আশ্চর্য হলাম। রাস্তার পাশে মানুষ মেরে ফেলেছে। রাতে মানুষটা চিল্লাতে পারেনি। রাস্তা দিয়ে কোন মানুষজন যায়নি। ডাকাতদের কেউ দেখে ফেলেনি। বিভিন্ন চিন্তা হতে থাকলো। দেখলাম তিন রাস্তা দিয়ে মাঠের মধ্য দিয়ে মানুষজন ছুটে চলছে লাশ দেখার জন্য।
আব্বা গল্প করলেন, ছেলেটাকে কাল বিকেলে মড়কা বাজারে সেলুনে দেখলাম সেভ করছে। পাড়ার অন্যান্য মানুষেরাও বলল হ্যাঁ মড়কা বাজারে কালকে দেখলাম। এরপর আমরা বেশ কয়েকজন মিলে লাশটা দেখতে গেলাম। যে দেখতে পারলাম লুঙ্গিটা হাটু পর্যন্ত বের হয়ে রয়েছে। গলাকাটা লাশ, মাথাটা রাস্তার ধার করে পড়ে। পা দুটা রাস্তা সোজা উপরের দিকে। মানুষটা বেশ কিছুটা শ্যামলা চেহারার, নাম ছিল আতিয়ার। কিছুদিন পর রানার মুখ থেকে জানতে পারলাম আমাদের নিচ ক্লাসে পড়ে, এমন একটি মেয়ের বাবা ছিল ভিকটিম। বিষয়টা জেনে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল। তখন শুধু ভাবনা হতো মেয়েটার লেখাপড়াটা হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। স্কুলে যখন ওই মেয়েটাকে দেখতাম, তখন শুধু ভাবতাম যদি এমন ঘটনা আমার জীবনে হতো; তাহলে লেখাপড়া বাদ দিয়ে আমাদের মাঠে নেমে পড়তে হতো। আব্বা আছে বলে সৌভাগ্য, লেখাপড়া করতে পারছি নিশ্চিন্তে। আমার আব্বা আমাদের ভালো রেজাল্টের আশায় ছাগল গরু বেচে দিল। যেন আমাদের সময় লস না হয়। আর এই মেয়েটার বাবা গোরস্থানে চলে গেল। এরপর জানতে পারলাম আমাদের এক চাচাতো বোনের দেবর ছিলেন ভিকটিম। এরপর আরো মানুষের মুখে জানতে পারলাম, যাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি সন্ত্রাসী দলের সদস্য ছিলেন। কোন ব্যক্তির স্ত্রীকে বের করে এনেছিলেন। এমন কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তার এই পরিণতি। রাত্রে মুখ বাধা কিছু সন্ত্রাসীরা, বাড়ি থেকে মানুষটিকে জোর করে উঠিয়ে এনেছিল। পাড়াগাঁয়ের অনেক মানুষ নাকি দেখেছিল কারা যেন তাকে নিয়ে যাচ্ছে মাঠের মধ্য দিয়ে। এরপর সকালে এই অবস্থা। এমন ঘটনা গুলো সত্যিই অবাক করে দেয়। না জানি কত মানুষের জীবন এভাবেই ঝরে যায়। ভেঙে যায় সুন্দর একটি পরিবার। নষ্ট হয়ে যায় বউ বাচ্চার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
গল্পের সামঞ্জস্য | ফটো |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
ঘটনার লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
X-promotion
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
09-02-25
বেশ ভয়ংকরী গল্প শেয়ার করেছেন ভাইয়া।আমাদের এখানেও একটি মেয়ের মাথা বিচ্ছিন্ন করে মেরে রেখেছে ও তার শিশু বাচ্চা কে মেরে পুতে দিয়েছে।যেখানে আমরা কেউ আমাদের বাঁচার গ্যারান্টি দিতে পারি না এক সেকেন্ড আর সেখানে মানুষ খুন করে ফেলে মানুষ কি মর্মান্তিক ঘটনা।সত্যি তাই আপনাদের পড়ালেখার ক্ষতি হবে জন্য ছাগল গরু পালা বন্ধ করেছে আর ওই মেয়েটির বাবাকেই পৃথিবী থেকে তুলে দিয়েছে। সে যতোই অপরাধী হোক না কেন সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর তাকে মেরে ফেলার অধিকার কারো নাই। দেশে আইন তো আছে।খারাপ লাগলো গল্পটি পড়ে। ধন্যবাদ সত্যি ঘটনা টি আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।
মনে হল এমন ঘটনা অনলাইনে শুনেছি