একটি গরুর গল্প
হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
আমি ক্লাস সিক্সে থাকতে আব্বুর সাথে বামুন্দি বাজারে গেছিলাম গরু কিনতে। সময়টা ২০০৬ সাল। বাইরে চলাচলের সুযোগ মাত্র এগুলা ছিল। বিশেষ কোনো কারণ কে কেন্দ্র করে আব্বুর সাথে কোথাও যাওয়া হতো এছাড়া একাকী কোনখানে যাওয়া হতো না। যাই হোক আব্বুর হাত ধরে রয়েছি। বামুন্দি সবজি বাজারটা হাটের দিন জমজমাট হয়ে ওঠে। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকে না। মানুষের ভিড়ে আব্বা আমার হাত ধরে রেখেছে না জানি হাত ফসকে যাই আর আমি ছোট মানুষ কোন দিকে চলে যায়। ঠিক এভাবে সবজি বাজার থেকে গোহাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সামনে রয়েছে একটি বাজার সেটা হচ্ছে জামা কাপড়ের খোলা বাজার। এখানে নতুন পুরাতন উভয় ধরনের জামাকাপড় কিনতে পারা যায়। ঠিক এমন স্থানে যখন অবস্থান করছি তখন রাস্তার উপর দিয়ে একটি গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গরুটার গায়ের রং সাদা। গরুটা দুই পা ফেললে এক পা পিছিয়ে যায়। গরুর এমন দৃশ্য দেখে আমি আনন্দ করছিলাম। একজন ব্যক্তি গরুর টানছে, দুইজন ব্যক্তি গরু ঠেলছে। তারা গরুর ব্যাপারী। গরুটা যখন চলতে চাচ্ছে না তখন তার লেজ বাকি চেপে ধরা হচ্ছে। গরুটা তখন লাফ দিয়ে দুই পা এগিয়ে চলছে আবার থেমে যাচ্ছে আবার পিছিয়ে আসছে আর শুয়ে পড়ছে। এমন রহস্য আমাদের মত ছোট বয়সী যারা ছিল তারা দেখে আনন্দ করছিল। আর পথচারী বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষেরা বেশ ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছিল। এদিকে রাস্তার এপাশের ওপাশের গাড়ি গুলো থেমে গেছে গরুর এই পাগলামি দেখে। বুঝতে পারছেন হাইরোড থেকে ভেতরের রাস্তা।
আব্বা আমাকে বললেন গরুটা পার হয়ে যাক। মানুষের ভিড় কমে যাক। ততক্ষণে তোমার জন্য একটি জামা প্যান্ট কিনে নেই। আমরা জামা-প্যান্ট কেনার জন্য খোলা বাজারের মধ্যে প্রবেশ করলাম। খোলা বাজার এমনভাবে সাজানো মাঝখানে মানুষের চলার পথ আর দুই পাশ দিয়ে শুধু জামা কাপুড়ের বাজার। যাইহোক জামাকাপড় কিনে নেওয়া হয়ে গেছে। গরুটা গরুর হাটের মধ্যে চলে গেছে। রাস্তার যানজট কমে গেছে। তখন আমরা গরু হাটে চলে গেলাম। বেশ অনেকগুলো গরু দেখাশোনা হলো দামদর হল। একটা সাদা গরু দেখতে খুব সুন্দর ছিল। আমরা বারবার সেই গরুটা নিতে চায় কিন্তু 1000 টাকার জন্য নেয়া হচ্ছিল না। আমরা যে দাম বলছিলাম ওনারা এক হাজার টাকা বেশি বলছিলেন সব সময়। কিন্তু তার পাশে যে শুয়ে পড়া মেচলা গরুটা আমাদের কপালে রয়েছে সেটা কে জানতো। পাশাপাশি দুইটা গরুর মধ্যে দাম দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। মেচলা গরুটার গায়ের চামড়া টান দিয়ে তারা দেখাচ্ছে যে দেখুন এই গরুটার গায়ের চামড়া ঢিল দ্রুত মোটা হবে। ওই গরুটার চেয়ে একটু বড়। আর ওই গরুটা তো মোটা হয়ে গেছে। ঠিক এভাবে গরুর দালালরা যেভাবে মানুষকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে পটায় আর কি। যাইহোক সে মেসলা গরু আমাদের কপালে জুটে গেল। গরুটা নিয়ে আমরা রাস্তা দিয়ে হাটাতে হাটাতে বাড়ি আসবো। বেশ কিছুটা পথ অর্থাৎ বামুন্দি বাজারের এরিয়া পর্যন্ত ভালোভাবে হাঁটতে হাঁটতে আসলো। এরপর ছাতিয়ান নামক গ্রামের দীর্ঘ রাস্তা সেই গরু হাটবে না। আমরা রাস্তায় দেখেছি গরুর লেজ বাকিয়ে গরু দৌড় করানো হচ্ছিল। আব্বাকে বললাম এরকম করেই গরুটাকে হাটানো হোক। ঠিক এভাবে আমরা চেষ্টা করতে থাকলাম। কোনরকম ছাতিয়ান গ্রামটা পার হলাম। ফাঁকা রাস্তায় এসে গরু আর হাটবে না তো হাটবে না। তখন আব্বা বলল বাজারের মধ্যে শুয়ে পড়ছিল সেই গরুটা আমাদের কপালে জুটলো না তো। ভালো করে দেখে তারপর আমার নিশ্চিত হলো হ্যাঁ এ তো সেই গরুটা। এই গরুটাই আমাদের কপালে জুটবে কে জানতো।
আমাদের অনেক কষ্ট হল। আমাদের গ্রামের মানুষ যারা বামুন্দি হাটে সাইকেল চালিয়ে গেছিল, তারা বাড়ি ফিরছে। তাদের সাথে দেখা হচ্ছে। বামুন্দি বাজার থেকে আমাদের বাড়ি সাড়ে আট নয় কিলো দূর এই রাস্তা দিয়ে। সবে মাত্র দেড় দুই কিলো পথ অতিক্রম হয়েছি। আমাদের পাড়ার দু একজন ভাইয়ের সাথে দেখা হল। আব্বা তাদেরকে বলল আমার বড় ভাইয়ের কথা। সে যেন বাড়ি থেকে টর্চ লাইট নিয়ে পাশের গ্রাম শহড়া-বাড়িয়া পর্যন্ত এগিয়ে আসে। কারণ এই গরু নিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। যখন এই কথা বলা হচ্ছিল তখন সবে মাত্র আসরের আজান হয়েছে। যে ঘন্টা বেলা রয়েছে এখনো। যেখানে এক ঘন্টা রাস্তা সেখানে দেড় ঘন্টা দুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগ রাস্তা পার হতে পারি নাই এখনও। ছাতিয়ান মাঠের মধ্যে বিকেল শেষ শেষ হয়ে গেল। পিছন থেকে দেখা গেল দ্বিতীয় যে গরুটার দাম দর করা হচ্ছিল সেই গরুর ব্যাপারিরা গরুটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসছেন। অর্থাৎ ওই গরুটা বেচাকেনা হয়নি। উনাদের বাসা ছিল আমাদের বাসা থেকে ২ গ্রাম পরে। পথের মধ্যে তারা বলল ভাই আপনি ভুল করেছেন। আমাদের গরুটা নিলেন না। ওই গরুটা নিয়েছেন। ওই গরুটা আপনার বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে যান কানদিয়ে ছেড়ে দেবে। বাজারে আনার সময় রাস্তায় থেকে থেকে এভাবে জায়গায় জায়গায় শুয়ে পড়ছিল আর এই নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছিল তারা। তখন আমরা আরো নিশ্চিত হলাম হ্যাঁ এই সেই গরুটা আমাদের কপালে জুটে গেছে। উনারা আমাদের উপর একটু রাগান্বিত মনোভাব পোষণ করল আবার বাপ ছেলের কষ্ট দেখে মায়ার দৃষ্টিতে তাকালো। অতঃপর সে ব্যাপারিরা আমাদের সহযোগিতা করলেন। তাদের গরুর গলার দড়ির সাথে আমাদের গরুর গলা বেঁধে দিলেন। এরপর তাদের গরুর গায়ে দু একটা করে কঞ্চি দিয়ে বাড়ি মারছে এবং আমাদের গরুর গায়ে দু পাঁচটা করে বাড়ি মারছে। কি আর করার বাড়িতো পৌঁছাতে হবে। দেখা যাচ্ছে সেই গরু মাঝেমধ্যে আমাদের গরুটার গুতা মারছে। আর এভাবেই গরু দুইটা দৌড়াতে থাকলো আমরাও বেপারীদের সাথে সাথে জোরে জোরে হাঁটতে থাকলাম দৌড়াতে থাকলাম। আর এভাবে শহরবাড়িয়া গ্রামের শেষ পর্যন্ত আমাদের নিয়ে আসলো। তারা বলল আপনারা অন্য মানুষের কথায় বিশ্বাস করে ফেললেন। তার এত সুন্দর করে মিথ্যা বলল আর আপনারা গরুটা নিলেন, ভালো মানুষ হওয়া ভালো কিন্তু এত সহজ সরল হওয়া ভালো না। মিথ্যা শুনে কিনে ফেললেন,আর আমাদেরটা নিলেন না। এভাবে শুধু রাগ দেখাতে থাকলো। তবে তাদের মধ্যে একজন বেপারী জোয়ান মোটাসোটা দেখতে ভয়ঙ্কর চেহারা। আমার কাছে কেমন জানি বারবার তাকে চোর ডাকাত মনে হচ্ছিল। কথাবার্তা গুলাও যেন কেমন কেমন ছিল। ওরা আলাদা রাস্তায় চলে গেল। আর আমরা আমাদের রাস্তা চলে আসলাম। আসার সময় বারবার মনে হচ্ছিল এমন মানুষ সহযোগিতা করবে ভাবনার বিষয়। আব্বা বারবার বলল আমরা যে এমন বিপদে পড়বো কে জানত। আর তাদের কথাবার্তা বাজারের মধ্যে দেখতে কেমন কেমন লাগছিল তাই তাদের গরুটা আমরা নেইনি। কিন্তু তারা যে সহযোগিতা করবে কে জানতো।
সহযোগিতা করা এই গরু বেপারীদের মধ্যে ভয়ংকর চেহারার মানুষটা সত্যি এমন অদ্ভুত টাইপের ছিল যে, কম দামে গরু বিক্রয় করলেও তার সাথে ভালো নরম শরম মানুষরা কেউ কথা বলবে না। যেকোনো মানুষ ভাববে সে গরু চুরি করে এনে বিক্রয় করছে। আর সেই সময় ছিল চোর ডাকাতের সমস্যা অনেক বেশি। যাইহোক এরপর একপ্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম যে মাঝখানের মাঠে রাস্তা পার হলে বাড়ি পৌঁছাব। তবে হাসির বিষয় ছিল এ রাস্তাটুক পার হতে খুব জোর কুড়ি মিনিট সময় লাগবে। সেখানে আমাদের লেগে গিয়েছিল প্রায় দেড় ঘন্টা। গরুটা আমাদের ঠিক সেই ভাবেই কষ্ট দিয়েছে। এদিকে আমার ভাই লাইট হাতে দীর্ঘ পথ এগিয়ে এসে, আশায় দাঁড়িয়েছিল। আরো ভয় পাচ্ছিল রাস্তার পাশ দিয়ে পাঁচ ছয়টা বড় বড় বটগাছ ছিল এজন্য। বট গাছের শেষে একটি পানি বের হওয়া ব্রিজ। স্কুল পাড়া থেকে দীর্ঘ এ বটগাছের এদিকে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। এখনো নাই। শুধু এক ঘর হয়েছে তাও অনেকটা দূরে। আর তখন তো রাস্তা ছিল মেটে রাস্তা। বুঝতে পারছেন কতটা ভয়ানক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম আমরা। আব্বা বারবার বলছিল। সহযোগিতা করা গরুওয়ালারা যদি খারাপ মন মাইন্ড নিয়ে আমাদের মেরে ফেলে দিত বা গরুটা নিয়ে যেত তাহলে আমাদের কিছু করার ছিল না অথবা গরুটা আমাদের থেকে যেকোন কৌশলে নিয়ে গেলেও কিছু করার ছিল না। কারণ দীর্ঘ তিনটা মাঠ পার করে এসেছে তারা। ততক্ষণে এশার আজান হয়ে গেছে। বর্ষার সময় ঘন অন্ধকার রাত। কে যেন বিপদ ডেকে আনার মত। আর এটাই ছিল অতীতের এক হাস্যরস ও ভয়ংকর ঘটনা।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | বামুন্দী বাজার |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
Photo editing | PicsArt app |
ঘটনার লোকেশন | মেহেরপুর |
ব্লগার | @Sumon09 |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |