ভরখালিকালি প্রতিষ্ঠা হওয়ার গল্প❤️

in আমার বাংলা ব্লগ12 days ago

হ্যালো

কেমন আছেন সবাই। আশা করছি খুবই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও ভালো আছি সুস্থ আছি আপনাদের আশির্বাদে ও সৃষ্টি কর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।
আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো একশো বছর আগে ভরকখালী কালি কি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো সেই গল্প। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG_20250511_142230.jpg

গাইবান্ধা জেলায় বোনারপাড়ায় ভরখালী কালি বাড়ি অবস্থিত।
এই ভরতখালি কালিবাড়ি কি ভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সে গল্প আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।গল্পটি লোকমুখে প্রচলিত।

ভরতখালি তে এক পুরোহিত বাস করতেন। পূজা অর্চনা করে তার দিন কাটতো।সব সময় ভগবানের আরাধরা করতেন।

বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে পুরোহিত কে সপ্ন দেখালেন শয়ং মা কালি নিজে। একদিন পুরোহিত ঘুমিয়ে ছিলেন হঠাৎ তার কুঁড়ে ঘরটি আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো এবং পুরোহিত দেখতে পেলেন শয়ং মাকালি তার ঘরে তার সামনে তাকে বলছে কি রে ঘুমিয়ে আছিস আমি তো তোর ঘরে আসবো।পুরোহিত হাত জোর করে বল্লেন এতো আমার সৌভাগ্য মা তুমি আমার ঘরে আসলে।কবে কখন আসবে বলো তখন মাকালি বলেছে সূর্যোদয়ের আগে নদীর পাড়ে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসিস আমি সূর্য উঠার পর কিন্তুু আসবো না।একথা বলার সাথে সাথে পুরোহিতের ঘুম ভেঙে গেলো এবং পাশেপাশে দেখলো কেউ নাই।

তিনি তরিঘরি করে বিছানা ছেড়ে উঠলেন এবং বাড়ির পাশের যে নদী আছে সে নদীর পাড়ে মহাকালীর কথা মতো চলে গেলেন নদীর পাড়ে এবং অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন মাকালী আসবে এবং তাকে নিয়ে আসবেন।

বেশ কিছু সময় দাড়িয়ে থাকালেও মাকালির দেখা পেলেন না। রাতের দেখা সপ্নকে নিছক সপ্ন ধরে নিলেন পুরোহিত এবং সূর্যোদয়ের আগে সে ঘরে নিত্য পুজা দেন এবং সে জন্য ভাবলেন স্নান সেরে বাড়িতে আসবে।

স্নান করতে জলে নামলেন এবং একটি ডুব দিয়ে উঠতেই দেখতে পেলেন একটি কাঠের টুকরো ভেসে আসছে তিনি মনস্থির করলেন যে এই কাঠের টুকরোটি সে বাড়িতে নিয়ে যাবে। নিয়েও আসলেন এবং পুজারার ঘরের এক সাউডে রেখে পুজা সেরে বিশ্রাম নিচ্ছেন তখন হঠাৎ তার ঝিমুনি চলে এসেছে এবং তাকে বলছে আমাকে চিনতে পারিসনি আমাকে যে নিয়ে আসলি আমাকে লাল শালু কাপড় দিয়ে ডেকে রাখ আমি আসবো।মনে রাখিস সাতদিন লাল শালু কাপড়টি খুলবি না।

পুরোহিত চমকে উঠলেন এবং বাজার থেকে লাল সালু কাপড় কিনে নিয়ে এসে কাঠের টুকরো টি ডেকে দিলেন।

একদিন দুদিন তিনদিন চলে গেলো কিন্তুু কাঠের টুকরোটির কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারলো না।পারবেই বা কি করে কাঠের টুকরোটি তো লাল সালু কাপড় দিয়ে ঢাকা।

পুরোহিতের যেন তর সইছে না কবে সে মাকালিকে দেখতে পারবে। সে ভাবলো ছয়দিন তো হয়ে গেলো আজ একটু দেখবো কাপড় টি খুলে যে কথা সেই কাজ সে লাল শালু কাপড়টি খুলে দেখলেন এবং দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন। সত্যি তো মা এসেছে এসেছে মাকালি কিন্তুু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সাতদিন হওয়ার আগেই দেখার কারণে পুরাপুরি ভাবে মাকালি কাঠ থেকে বের হয়ে আসেনি।মাকালির চরন আসার আগেই দেখা হয়েছে আর সেজন্য মাকালির পুরা শরীর এসেছে শুধু চরন ছাড়া। এই কালি প্রতিমাটি কাঠ থেকে বেরিয়ে এসেছে জন্য একে কাষ্ঠকালী ও বলা হয়ে থাকে কাঠের টুকরো মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করার পর সেই কাঠের টুকড়ে থেকে শিকর বের হয়ে একটি বট গাছের জন্ম হয়েছে।সেই বট গাছে তেল সিঁদুর ও দুধ কলা দিয়ে পূজা করা হয়ে থাকে।

পুরোহিত মাকালির প্রতিষ্ঠা করলেন এবং এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো এবং সবাই দূরদূরন্ত থেকে পূজা করতে আসতে শুরু করলো।বৈশাখ মাসে মাকালির প্রতিষ্ঠা জন্য বৈশাখ মাস জুড়ে মেলা হয় ও প্রতি শনি মঙ্গলবার কালীপূজা হয়ে থাকে।তাছাড়া বারোমাসে শনি,মঙলবার পূজা হয়ে থাকে।

১৯৭১ সালে পাকবাহিনী ভরতখালি কালি মন্দির ভাঙতে গিয়ে পারেনি কারণ মন্দিরের বারান্দায় ওঠার সাথে সাথে না কি পাকবাহিনীর নাকে মুখে রক্ত উঠতো। সেজন্য আর কালিমন্দিরটি ভাঙতে পারেনি।
অনেক জাগ্রত একটি মন্দির এই কালি মন্দির টি।হিন্দু দের পাশাপাশি অনেক মুসলিম ধর্মালম্বীদেরও এখানে মানত করতে দেখা যায়।

আমি প্রতি বছর যাওয়ার চেষ্টা করি প্রতি বছর যাওযা যদিও বা হয় না তবে মাঝে মাঝে চেষ্টা করি যাওয়ার।
এবছরও আমরা গিয়েছিলাম পহেলা বৈশাখের দিন সবাই মিলে ভরতখালি কালিবাড়িতে। অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছিলাম মেলায় গিয়ে।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্য কোন পোষ্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20250510_115147.png

IMG_20250510_115136.jpg