রম্য গল্পঃ- আমাদের আব্দুল গনি নানা।
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলে ভাল আছেন। আমরা আমাদের প্রিয় কমিউনিটির অবস্থা জানি। এই থমথমে পরিবেশ হালকা করতে আমি একটি রম্য গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। নাম আমাদের আঃ গনি নানা।

আমাদের বাড়ির আব্দুল গনি নানা। তিনি পারেন না এমন কাজ বোধ করি ধরায় নেই। ছোটবেলায় দেখেছি তিনি গরম কালে তরমুজ আর বাঙ্গি বিক্রি করতেন। শীতকালে বিক্রি করতেন খেজুরের রস। তিনি খালে, বিলে, নদীতে মাছ ধরতেন। তিনি সবই করতে পারতেন। তিনি সাইকেল চালাতে পারতেন। তিনি ভ্যান চালাতে পারতেন। তিনি রিক্সা চালাতে পারতেন। তিনি বড় বড় লাটিম ঘোরাতে পারতেন। তিনি ঘুড়ি বানাতে পারতেন। তিনি ঘুরি উড়াতেও পারতেন। ওই সময় বিশ্বাস করতাম, হেনও কোন কাজ নাই যা তিনি পারেন না।
ছোট থেকে যখন একটু বড় হলাম, তখন আমাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল। যার কারনে আব্দুল গনি নানার কাজগুলো আর দেখা হলোনা। কারণ সেই সকালবেলায় আমরা স্কুলে যেতাম। সারাদিন স্কুলে থেকে দুপুর বেলা বাড়ি চলে আসতাম। নিচের ক্লাসে ছিলাম। আমাদের দুপুরেই শেষ হয়ে যেত। যারা বড় ক্লাসে পড়তো, তারা সারাদিন........ সারাদিন...... সারাদিন....... সারাদিন...... সারাদিন...... সারাদিন..... সারাদিন..... থেকে একদম বিকেলবেলা আসতো। আমরা যদিও সে সময় আব্দুল গনি নানাকে নাক ঢেকে ঘুমানো টা দেখতে পারতাম, বড় ক্লাসের ছেলেরা তো সেটাও পারতনা। তাদের চেয়ে আমরা বেশি ভাগ্যবান ছিলাম।
সেই সবজানা আব্দুল গনি নানা আমাদের বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলেন। আমি খুবই হতাশ হলাম। আমি ভাবতেই পারিনি তিনি এই কাজটি পারবেন না। আমাদের বন্ধু মহলে আলোচনা শুরু হলো, আব্দুল গনি নানা আসলে সব পারেনা। কিন্তু এটা আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমরা ভাবলাম তিনি আমাদের সাথে মজা করছেন। আসলে আমরা ছোট বলে অনেকেই আমাদের সাথে মজা করত। কিন্তু সেটাও আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ আব্দুল গনি নানা আমাদেরকে খুবই ভালোবাসতেন। এমন মজা করবেন, এটা আমরা মানতে পারছিলাম না। কিন্তু পরিস্থিতি সেটাই বলছে। হয় তিনি আমাদের সাথে মজা করছেন, না হয় তিনি আসলেই পারেন না।
আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আসল রহস্য বের করতে হবে। আমরা আবারও আব্দুল গনি নানার কাছে যাওয়ার মনে স্থির করলাম। কিন্তু এবার আমরাও চালাকি করলাম। ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাব। প্রথমে তিনজন, তারপরও তিনজন, মোট ১২ জন। প্রথম তিনজন গেল। আব্দুল গনি নানা পারলেন না। পরের তিনজন গেল। তাও তিনি পারলেন না। পরে আবার তিনজন গেল। তাও তিনি পারলেন না। আমরা তিনজন গেলাম। তাও তিনি পারলেন না। আমরা খুবই ভেঙে পড়লাম। আব্দুল গনি নানা আসলে সব পারেনা। তিনি সাধারণ বাংলা বানান পারেন না।
আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তিনি আমাদের কাছে ডাকলেন। বললেন, নাতিরা শুনো। তোমাদের মত আমার এত ধৈর্য ছিলনা। এই যে তোমরা দিনের পর দিন স্কুলে যাচ্ছ, আমি সেরকম পারিনি। আমার তোমাদের বয়সে একবার স্কুলে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে সকাল বেলা বাবা মা মিলে স্কুলে দিয়ে আসছিল। আর দুপুরবেলা পুরো স্কুল আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এই কারণে তোমরা যেমন চটর পটর বাংলা বলতে পারো, বাংলা লিখতে পারো, বাংলা পড়তে পারো, আমি তোমনটা পারিনা।
যাইহোক আব্দুল গনি নানা আমাদের মনটা ভেঙ্গে দিয়েছে। ভাঙ্গা মন নিয়েই চলে যাচ্ছি আজ।

Link: https://x.com/akib_66/status/1962211197153083548