ছোট গল্প হাবিবের জীবন (পর্ব-০১)।
হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি ছোট গল্প শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারে হাবিব নামের একটি ছোট্ট শিশুর জন্ম হয়। হাবিব ছিল পরিবারের সবার ছোট তাই হাবিবের ভাই বোন সবাই হাবিবকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। হাবিবের চারটা ভাই আর একটি মাত্র বোন ছিল তুলনামূলক হাবিবের বোন হাবিবকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো। একদম হতদরিদ্র পরিবারের হাবিবের জন্ম হয় ছোট থেকে হাবিব অসুস্থ হওয়ার পর খুব একটা চিকিৎসা পেতনা। তাছাড়া সেই সময় যুগের এতটাও পরিবর্তন হয়নি যে কেউ চাইলেই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবে তাছাড়া গ্রামের খুব কম লোকজন শিক্ষিত ছিল যারা অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে পারে। হাবিব ছোট থেকেই অসুস্থ থাকতো তবে তার পরিবারের লোকজন এই বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দিত না। ঠিকমতো তিন বেলা পেট পুরে ভাত খেতে পারে না তার ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়??
সেই যুগে চিকিৎসা শাস্ত্রের অবনতি থাকলেও একশ্রেণীর কবিরাজ লোক সাধারণ মানুষকে নানান ভাবে চিকিৎসা প্রদান করত কেউ কবিরাজি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে ফেলত আবার কেউ এই কবিরাজি পেশা থাকে পুঁজি করে কিছু মানুষকে নিঃস্ব করে দিত। হাবিব অসুস্থ হলেই তাদের গ্রামের একজন কবিরাজের দ্বারা চিকিৎসা প্রদান করা হতো তবে কবিরাজ বিস্তারিত না জেনেই নিজের মন খুশি মতো নানান ওষুধ তৈরি করে দিত যেগুলো খাওয়ানোর পরেও হাবিবের শরীরের কোন উন্নতি হতো না। বয়স বাড়তে থাকে সেই সাথে হাবিব ও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে কিন্তু হাবিবের মা বুঝতে পারত তার অন্যান্য ছেলেমেয়েগুলো যেরকম বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছু বুঝতে শুরু করেছিল সেই তুলনায় হাবিব কিছুই বুঝতে পারত না। ছোট বাচ্চারা নানান অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে বা কোন কিছু দেখলে সেটাকে ডাকার চেষ্টা করে কিন্তু হাবিব সবসময় চুপচাপ থাকতো। ধীরে ধীরে হাবিবের বয়স বাড়তে থাকে আর হাবিবের পরিবারের লোকজন বুঝতে থাকে হাবিব হয়তোবা মানসিক প্রতিবন্ধী হবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাবিব যখন কিছুটা হাঁটাচলা শুরু করল তখন তার পরিবারের সবাই বুঝে উঠল আসলে হাবিব মানসিক প্রতিবন্ধী। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের তুলনায় হাবিবের বোন হাবিবকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসত। হাবিবের বাবার অভাবে সংসার হাবিবের বাবা আর হাবিবের বড় ভাই অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করে নিজেদের পরিবারের সদস্যদেরকে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিত। তারা এতটাই অভাবই ছিল যে তিন বেলা পেট পুরে ভাত খেতে পারত না। হাবিবের মা এবং হাবিবের বোন মাঝে মাঝে অন্যের বাড়িতে কাজ করত সেই সাথে হাবিবের মেজো ভাই অন্যের বাড়িতে শুধু তিন বেলা খাবার বিনিময়ে কাজ করতো। এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পরে হাবিবের বোনের শহরকেন্দ্রিক একটা জায়গায় একজন রিক্সাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে হয়। অভাবী সংসার থাকার কারণে তুলনামূলক অল্প বয়সেই হাবিবের বোনের বিয়ে হয়ে যায় তখন হাবিব অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে কিন্তু ভালো মন্দ কিছুই কখনো বোঝা শিখেনি। শুধু বাবা-মা ভাই বোন ছাড়া অন্য কারো সাথেই হাবিব কোন কথা বলে না। তার বাড়ির আশপাশের কোন ছেলে মেয়ের সঙ্গে কখনো খেলাধুলার চেষ্টাও করে না তবে কুকুর আর বিড়াল নিয়ে হাবিব সব সময় খেলা করত যেটা তার বাড়ির আশপাশের মানুষের কাছে কিছুটা অবাক মনে হতো।
ছোট থেকেই হাবিবকে হাবিবের বোন অনেক বেশি ভালোবাসতো তাই হাবিব তার বোনকে দেখলেই দৌড়ে জড়িয়ে ধরতো তবে যখন হাবিবের বোনের বিয়ে হয়ে যায় তখন হাবিব আর তার বোনকে খুঁজে পেত না সে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারত না তার বোন কোথায় গিয়েছে বা সে বুঝতে পারত না আসলে তার বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর তাদের বাড়িতে সব সময় খুঁজে পাওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন পর যখন হাবিবের বোন তাদের বাড়িতে ঘুরতে আসতো তখন হাবিব সব সময় তার বোনকে আঁকড়ে ধরেই থাকতো। দুঃখের বিষয় যখন হাবিবের বোন তাদের বাড়ি থেকে আবার শ্বশুর বাড়িতে চলে যেত তখন আবার হাবিব একা একা মন খারাপ করে বসে থাকতো। এভাবে কিছুদিন চলার পরে আবার হাবিবের বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়। অভাবে সংসার হওয়ার কারণে বিয়ের পরে খুব বেশি দিন হাবিবের বড় ভাই আর তাদের সাথে থাকতে পারেনি।
হাবিবের বড় ভাইয়ের আলাদা সংসার, হাবিবের বাবার সাথে হাবিবের মেজ ভাই কাজ করে তখন তাদের সংসার পরিচালনা করে। হাবিবের বড় ভাইয়ের বিয়ের প্রায় এক বছর পরে হঠাৎ হাবিবের বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। অতি দরিদ্র হওয়ার কারণে চাইলেও তারা উন্নত চিকিৎসা দিতে পারতো না তবে এলাকার কিছু মানুষের সহযোগিতায় হাবিবের ভাইকে নিয়ে শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার জানিয়ে দেয় হাবিবের ভাইকে আর বাঁচানো সম্ভব নয় কারণ দীর্ঘদিন জন্ডিসে আক্রান্ত থাকার কারণে লিভারের সমস্যা হয়েছে। আর অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়। হাবিবের ভাইকে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো হঠাৎ একদিন সকালবেলায় তাদের বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি আর কান্নার আওয়াজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ বসে আছে আর সবাই কান্নাকাটি করছে।
(..........চলবে)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

এই গল্পের হাবিবের জীবনের একাংশ পড়লাম, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে হাবিবের জন্ম তবে গল্পের শেষের দিকে হাবিবের ভাইয়ের অসুস্থতার বিষয়টি বেশ খারাপ লেগেছে সেই সাথে অবস্থার অবনতি হওয়ার পরবর্তী ঘটনাটা জানার আগ্রহ রয়ে গেল। পরবর্তী পর্বে হাবিবের জীবনের বিস্তারিত পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভাই।
গল্প পড়তে খুব ভালো লাগে আমার।গল্প পড়লে গল্পের মধ্যে ডুবে যাওয়া মানুষ আমি।সুখ কিংবা দুঃখ দুটোতেই নিজেকে ডুবিয়ে ফেলি।আর তাইতো হাবিবের কথা গুলো পড়ে ভীষণ কষ্ট লাগলো।এরপর বড় ভাইয়ের মৃত্যু সত্যি ই হৃদয় বিদারক।অভাবী সংসারের এতো দুঃখজনক ঘটনা মনে সত্যি ই কষ্ট দেয়।এরপর আসলে কি হবে?? জানার অপেক্ষায় রইলাম। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আমাদের দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের জীবনের বাস্তবতা অনেক টা এইরকম। এই হাবিবের মতো। প্রথম পর্বটা বেশ লাগল। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।
তার মানে হাবিবের ভাই মারা গিয়েছে। আর সেজন্যই সবাই কান্নাকাটি করছে। যাইহোক হাবিব যদি ছোটবেলায় ভালো চিকিৎসা পেতো,তাহলে সে হয়তোবা মানসিক প্রতিবন্ধী হতো না। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়। তবে এই গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।