ছোট গল্প হাবিবের জীবন (পর্ব-০২)।
হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? হাবিবের জীবন কাহিনী নিয়ে প্রথম পর্বে যতোটুকু শেয়ার করেছিলাম তার আঙ্গিকে আজকের পর্বে পরবর্তী ঘটনাটা তুলে ধরব। যারা প্রথম পর্ব পড়েছিলেন তাদের কাছে হয়তোবা দ্বিতীয় পর্বটা আরো বেশি আকর্ষণীয় মনে হবে। সকালবেলা হঠাৎ বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি সবাই কান্নাকাটি করছে। তবে হাবিব বয়সে ছোট আবার কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে দেখতে পেল তার বড় ভাইয়ের কুঁড়ে ঘরের পাশে কেউ একজন শুয়ে আছে আর তার চারিপাশ ঘিরে সবাই ভিড় জমিয়েছে। সবাই কান্নাকাটি করছে এ দৃশ্য দেখে হাবিব চোখ মুছতে মুছতে চুপচাপ দিয়ে বসলো। হাবিব লক্ষ্য করল তার বাবা মা ভাই বোন সবাই কান্নাকাটি করছে কিন্তু আসলে কি হয়েছে সেটা তখনও সে বুঝতে পারেনি। প্রতিদিন যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরিবিলি চুপচাপ বসে থাকে ঠিক সেদিনও একই ভাবে চুপচাপ বসে রইল।
একে একে হাবিবের বাড়িতে দূর থেকে লোক আসতে থাকে অচেনা অপরিচিত অনেক লোক আসলো আবার সবাই চলেও গেল। কিছু সময় পর হাবিবের বাড়িতে পাশের মসজিদ থেকে খাটিয়া নিয়ে আসা হল। তখন হাবিব কিছুটা ধারণা করতে পারল হয়তো বা কেউ মারা গিয়েছে কিন্তু কে মারা গিয়েছে সেটা তখনও বুঝতে পারেনি। তবে বেশ কিছুক্ষণ পর হাবিব কিছুটা অনুভব করতে পারল প্রতিদিন সকালে সবাই রান্নাবান্না করে খাওয়া দাওয়া করে কাজে বেরিয়ে পড়ে তবে আজকে সবাই কাজে না গিয়ে একসাথে জড় হয়ে কান্নাকাটি করছে কেন আর হাবিবকে তার মা খেতে দিচ্ছে না কেন। কিছু সময় পর হাবিব ধীরে ধীরে তার মায়ের কাছে গেল তখন দেখতে পেল তার বড় ভাই শুয়ে আছে আর একটা কথা দিয়ে তার বড় ভাইয়ের পুরো শরীর ঢেকে রাখা হয়েছে। হাবিব মানসিক ভারসাম্যহীন ঠিক মতো কথা বলতে পারেনা শুধু তার মায়ের কাছে গিয়েও বলল "মা ভাই" যখন হাবিব এই কথা বলল তখন হাবিবের মা হাবিবকে জড়িয়ে ধরে আরো চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তখন হাবিব বুঝতে পারলো আসলে হয়তো বা তার ভাই পৃথিবীর ছেড়ে চলে গিয়েছে।
সময় ঘনিয়ে আসলো হাবিবের ভাইকে গোসল করানো হলো, আসরের নামাজ পড়ে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। বাড়িতে সবাই পাঞ্জাবি আর টুপি পড়ে ঘোরাফেরা করছে আর হাবিবের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছে। বাইরের লোকজন সবাই পাঞ্জাবি আর টুপি পড়ে ঘোরাঘুরি করছে এই দৃশ্য দেখে হাবিব ঘরে গিয়ে তার পুরাতন ছেড়া পাঞ্জাবি আর টুপি পড়ে সবার সাথে মেশার চেষ্টা করছে। আবার মাঝে মাঝে হাসাহাসিও করছে। হাবিবের ভাইয়ের গোসলের কাজ শেষে খাটিয়ায় করে যখন কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন হাবিবের মা বোন আরো বেশি কান্নাকাটি করছিল তখন তাদের কান্না দেখে হাবিব নিজেও আবার কান্না শুরু করে দিল। পরবর্তীতে যখন খাটি আয় করে হাবিবের ভাইয়ের লাশ কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন হাবিব আবার সবকিছু ভুলে সবার সাথে হাসতে হাসতে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছিল আর মাঝে মাঝে দৌড়াচ্ছিল। আসলে হাবিব পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন যার কারণে তার ভালো-মন্দ বোঝার খুব একটা সক্ষমতা নেই।
হাবিবের বাড়ির পাশের কয়েকজন লোক কবরস্থানে গিয়ে তার বড় ভাইয়ের জন্য কবর খুঁড়েছে। কবর খোলার কাজ শেষে যখন হাবিবের ভাইয়ের লাশ কবরে নামানো হবে তখন হঠাৎ করেই হাবিব চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো। হাবিব চিৎকার করে ভাই ভাই বলে কান্না করছিল। হয়তো বা সে সময়ে হাবিব বুঝতে পেরেছিল তার ভাইকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে আর কবরস্থানে তার ভাইকে রেখে যাওয়া হচ্ছে। হাবিব এতটাই অসহায় ভাবে কাঁদছিল যেটা আগে কেউ কখনো দেখেনি। হাবিব তার মেজ ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছিল তত সময়ে তার বড় ভাইয়ের লাশ দাফনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে তারপরেও হাবিব তার বড় ভাইয়ের কবরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ভাই ভাই বলে কাঁদছিল। হাবিবের এমন দৃশ্য দেখে এলাকার লোকজনের চোখে পানি চলে আসলো।
সময় যায় তবে হাবিবের আর পরিবর্তন হয় না কেন জানি তার ভাইকে হারিয়ে সে কিছুটা শোকাহত হয়ে আছে আগের মত ছোট্ট হাবিব যেমন খেলাধূলা করে বেড়াতো তেমন পরিবর্তন আর দেখা যায় না। হাবিবের দিকে তাকালে মনে হয় সে যেন শোকে কাতর হয়ে আছে। ধীরে ধীরে হাবিবের পরিবারের সবকিছু স্বাভাবিক হতে থাকে। তবে হঠাৎ করেই হাবিবের বড় ভাইয়ের বউ তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হাবিবের বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরে তার ভাবি বাপের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। হাবিবের চোখের সামনেই তার বড় ভাইয়ের পরিবার যেন অল্প সময়ের মধ্যেই হারিয়ে যায়। ভাইয়ের মৃত্যুর পরে পুরো পরিবারটাই যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে আর এই এলোমেলো হওয়াটা হাবিবের কাছে বড় একটা আঘাত হিসেবে মনে হয়েছিল। আবার হাবিবের বাবাও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে চোখের সামনে বড় ছেলের এমন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াটা যেন হাবিবের বাবার কাছে অনেক বড় ধাক্কা।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

স্বাভাবিকভাবেই একটা পরিবারের সদস্যের যদি অকাল মৃত্যু হয় সেক্ষেত্রে সেই পরিবারের উপরে যেন বড় একটা ধাক্কা। হাবিবের বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে তার পরিবারের সবার মাঝে সুখের ছায়া পড়ে যায়। তবে গল্পে অকাল মৃত্যুর এই বিষয়টা বেশ খারাপ লাগলো।
এই গল্পের প্রথম পর্ব পড়েছিলাম।হাবিবের বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে একটি পরিবারের চিত্র সত্যি ই পাল্টে যায়। আমি আমার বাবার চলে যাওয়ার অনুভূতি যেনো টের পেলাম গল্পটি পড়ে। খুব কষ্ট প্রিয় মানুষ হারানোর।যা কিনা একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হাবিব ও বুঝতে পেরেছে।এরপর আসলে কি হলো তা জানবো পরবর্তী পর্বে।
মা বাবার চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু হলে,সেটা কোনো মা বাবা-ই মেনে নিতে পারে না। হাবিবের পুরো পরিবারটা একেবারে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তবে হাবিবের জন্য বেশ খারাপ লাগছে। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।