ছোট গল্প হাবিবের জীবন (পর্ব-০৩)।
হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? হাবিবের জীবন কাহিনী নিয়ে প্রথম পর্বে যতোটুকু শেয়ার করেছিলাম তার আঙ্গিকে আজকের পর্বে পরবর্তী ঘটনাটা তুলে ধরব।
হাবিবের বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর পুরো পরিবারের উপর যেন একটা শোকের ছায়া নেমে আসলো শুধু তাই নয় পরিবারের সবাই অনেক বড় ধাক্কা পেয়েছে। হাবিবের মা বাবা ভাই বোন সবাই নিশ্চুপ যেন জীবনের চাকা থেমে থেমে ঘুরছে। এভাবে দিনের পর দিন কাটতে থাকে হাবিবের ভাই গুলো আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হলেও হাবিবের বাবা-মায়ের উপর থেকে এই শোকের ছায়াটা যেন সরছেই না। হাবিবের বাবা-মায়ের এমন পরিস্থিতি থেকে হাবিব নিজেও সব সময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। মানসিক ভারসাম্যহীন হাবিব তার ভাইয়ের মৃত্যুর পরে এমন শোকাহতভাবে আঘাত পাবে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি সবাই ভেবেছিল হাবিব মানসিক ভারসাম্যহীন সে কোন কিছু বুঝতে পারবে না কিন্তু তার চোখের সামনে তার বড় ভাইয়ের পরিবারের এমন বিলুপ্তি দেখে হাবিব নিজেও শোকাহত। হাবিব সবসময় বারের উঠানে চুপচাপ বসে থাকে কারো সাথে কোন কথাবার্তা বলে না কেউ তাকে ডাকলে শুধু মুখের দিকে চেয়ে থাকে। কয়েক মাস পরে আবার হাবিবের বাবা টুকটাক কাজ শুরু করে তবে হাবিবের খুব বেশি আর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না।
মানসিক ভারসাম্যহীন হাবিব তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর যেন আরো বেশি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে আগে সবার সাথে কথাবার্তা বলতো সবার সাথে হাসি ঠাট্টা করত কিন্তু এখন হাবিবের হঠাৎ এমন পরিবর্তন হয়েছে কারো সাথে কোন কথা বলে না কারো সাথে কোথাও যাওয়ার আগ্রহ দেখায় না সব সময় বাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে থাকতে চায়। হাবিবের বাবা তার বড় ছেলেকে হারিয়ে এবার হাবিবকে নিয়ে টেনশনে পড়ে গেল কেননা হাবিব সবার ছোট আবার হাবিব মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন তার এমন পরিস্থিতিতে হাবিবের বাবার টেনশন বেড়ে গেল। ছেলে যেমনই হোক বাবার কাছে সব সময় সেরা থাকে। ঠিক একই ভাবে হাবিবের বাবা চাইছিল তার ছেলে যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করে যদিও সে মানসিক ভারসাম্যহীন আগে যেমন হেসে খেলে সবার সাথে মিষ্ট কথা বলতো হাবিবের বাবা চায় এখনো একইভাবে হেসে খেলে সবার সাথে চলাফেরা করুক কিন্তু তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে এমন পরিবর্তন হাবিব এর বাবা-মা এমনকি হাবিবের ভাই বোন কারো কাছেই কাম্য নয়।
হাবিবের বাবা চিন্তা করলো হাবিব এখনো ছোট যদি এভাবে সব সময় বাড়িতে বসে চুপচাপ মানসিক চাপে থাকে সে ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীন ছেলেটি দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে অর্থাৎ মানসিকভাবে পুরোপুরি অচল হয়ে যাবে সে ক্ষেত্রে তাকে যদি মানুষের মধ্যে চলাফেরা করানো যায় সে ক্ষেত্রে তার ভাই হারানোর বেদনা ধীরে ধীরে ভুলে যাবে। একদিন বিকেল বেলায় হাবিবের বাবা হাবিবকে সাথে নিয়ে বাজারে আসলো। এলাকার গ্রাম্য বাজারে হাবিব এসে অনেক মানুষের সমাগম দেখে কিছুটা স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সবকিছু দেখতে থাকলো। গ্রাম্য বাজার থেকে হাবিবের বাবা হাবিবকে অল্প কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার কিনে দিল যেটা পেয়ে হাবিব খুবই খুশি হলো। হাবিব মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন আগে কখনো তার বাবার সাথে বাজারে আসেনি তাই এত মানুষের সমাগম একসাথে দেখে হাবিব বেশ খুশি হল।
গ্রাম্য বাজারে আসার পরে হাবিব যেন হাসতে হাসতে তার ভাই হারানোর বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করল। হাবিবের বাবা-মা এই বিষয়টি লক্ষ্য করতে থাকলো আর তাই মাঝে মাঝেই হাবিবের বাবা হাবিবকে নিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য বাজারে আসতো আর হাবিবকে মজার মজার কিছু খাবার কিনে দিত। আশপাশের গ্রামের অনেকেই হাবিবকে বাজারে দেখে আরো কিছু খাবার দাবার কিনে দিত যেগুলো হাবিবকে বেশ খুশি রাখত। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকে হাবিবের জীবন আবার যেন স্বাভাবিক হতে শুরু করল আগের তুলনায় হাবিব অনেকটাই বুঝতে শুরু করেছে মানুষের সাথে কিভাবে ভাব তৈরি করতে হয় সেটা এখন হাবিব ধীরে ধীরে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করেছে আর এটাই যেন হাবিবের বাবা মায়ের কাছে দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল। হাবিব মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে এলাকার লোকজন বেশ ভালোই বাসতো।
একপর্যায়ে হাবিব নিজে থেকেই এলাকার গ্রাম্য বাজারে নিয়মিত আসা শুরু করল। খুব কম সময়ের মধ্যেই হাবিব পুরো এলাকার মধ্যে জনপ্রিয় একটি মুখ হয়ে গেল সবাই হাবিবকে বেশ ভালোবাসতো। বছর ঘুরতেই হাবিব যেন একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো সবকিছু বুঝতে শুরু করল তবে সবকিছু কিছুটা বুঝতে শুরু করলেও হাবিব মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় পরিষ্কারভাবে কোন কিছু বলতে পারত না শুধু ইশারায় সবকিছু বন্ধ আর শুধু হাঁসতো। কয়েক বছর পেরানোর পর হাবিবের যেন সকাল-বিকেল বাজারে আসা তার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে পড়ে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া করেই হাঁটতে হাঁটতে বাজারে চলে আসতো বাজারের বিভিন্ন দোকানদারের সাথে হাবিবের বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। দুপুর হলেই হাবিব আবার বাড়িতে চলে যেত। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার বিকেল বেলায় বাজারে আসতো বেশ রাত হলে বাড়িতে ফিরত। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে হাবিব যেন দিন দিন বড় হচ্ছে আর সবকিছু বুঝতে শিখছে। তবে হাবিবের বাবা-মা হাবিবকে ঠিক একইভাবে ভালোবাসতো হাবিবের বাবা হাবিবকে কখনোই আব্বু ছাড়া ডাকতো না। ছোট ছেলে এবং মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় অন্যান্য ছেলেগুলোর চেয়ে হাবিবকে হাবিবের বাবা একটু বেশি আদর করত।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

আসলে প্রিয়জন হারানোর বেদনা কতটা আঘাত করতে পারে সেটা আমাদের কারোর অজানা নয় তবে এই গল্পের মানসিক ভারসাম্যহীন হাবিব যেন তুলনামূলক তার বড় ভাইকে হারিয়ে একটু বেশিই দিশেহারা হয়ে গিয়েছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারলেও হাবিব যেন এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
গল্পটির আগের পর্ব গুলো ও পড়া হয়েছিল আমার।আজকের পর্বে হাবিবের স্বাভাবিক হওয়া পড়ে খুবই ভালো লাগলো। যদিও সে মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মানুষ। তারপরেও সবার কথা বুঝতে পারে এটা বেশ আনন্দের।এরপর আসলে কি হবে?? আশাকরি খুব শীঘ্রই জানতে পারবো।
হাবিব আগের চেয়ে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। আসলে মানুষের সাথে বেশি বেশি মিশলে,অনেক সময় এই ধরনের সমস্যা কিছুটা ঠিক হয়ে যায়। আশা করি ধীরে ধীরে হাবিব পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। যাইহোক আগের পর্ব দুটির মতো এই পর্বটা পড়েও খুব ভালো লাগলো। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।