গল্প রাইটিং- অন্ধকারের মেয়ে রুনি -১ম পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ13 hours ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।


image.png

রুনি একজন সংগ্রামী মেয়ে। তার জীবনের শুরু থেকেই প্রতিটি দিন ছিল লড়াই, কষ্ট এবং অধ্যবসায়ের গল্প। জন্মেছে এক সাধারণ পরিবারে, যেখানে সুখের খোঁজ ছিল সীমিত আর চাহিদা ছিল অগণিত। তার বাবা একজন সামান্য বেতনের চাকরিজীবী, যিনি মাসের শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন। পরিবারের সংখ্যা অনেক, আর প্রতিদিনের প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে সংসার চালানো ছিল এক কঠিন পরীক্ষা। মা সবসময় সংসারের কাজ সামলাতেন, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে যাতে সন্তানদের পড়াশোনা চালানো যায়।

ছোটবেলা থেকেই রুনি বুঝেছিল যে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে শুধু মেধা নয়, প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি। তার চোখে ছিল এক অদম্য আগ্রহ আর কৌতূহল, যা প্রতিদিনের অভাব-অসুবিধার মাঝেও তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সে নিজের পড়াশোনায় মগ্ন থাকত। তার স্কুল ছিল “বয়েজ অ্যান্ড গার্লস স্কুল,” যাকে এলাকাবাসী পরিচিতি দিয়েছিল “প্রেম নগর।” সেখানে ছেলে-মেয়েদের বন্ধুত্ব, আড্ডা আর কিশোরী প্রেমের গল্প প্রায়ই গুজব হয়ে ছড়াত, কিন্তু রুনি সবসময় আলাদা ছিল। সে কখনও এসব বিষয় নিয়ে মনোযোগ দেয়নি, বরং নিজের জগতে ডুবে থাকত, যেখানে একমাত্র ভালোবাসা ছিল পড়াশোনা।

স্কুলের শিক্ষকরা তাকে চিনতেন তার মেধা আর নিষ্ঠার জন্য। ক্লাসে রোল সবসময় এক নম্বরে থাকলেও, রুনি কখনও অহংকার দেখাত না। তার বানানো নোটগুলো এত নিখুঁত ছিল যে অনেক সহপাঠী ধার নিয়ে পড়ত। কিন্তু ক্লাসমেটদের মধ্যে হিংসা ও ঈর্ষাও ছিল। কেউ বলত, “ও তো স্যারদের পছন্দের ছাত্রী, তাই সবসময় ভালো ফল করে।” রুনি এসব উপেক্ষা করত। তার জন্য একটাই লক্ষ্য—নিজের পড়াশোনা সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করা। রুনি স্কুলে বিনা বেতনে পড়ত। ক্লাস সিক্স থেকে সে বেতন ছাড়া শিক্ষার্থী ছিল, কারণ তার রোল ছিল প্রথম। অন্য ভাইবোনেরা যাদের পড়াশোনায় ততটা আগ্রহ বা মেধা ছিল না, তারা একসময় ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, কিন্তু রুনি থেকে যায় সাধারণ স্কুলেই। তবু সে হাল ছাড়ে না। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় রোদ বা বৃষ্টির মধ্যেও হাসি বজায় রাখত। তার চোখে ক্লান্তি নয়, বরং দৃঢ়তার ঝলক দেখা যেত।

ছোটবেলা থেকেই সে নিজের খাতায় নোট তৈরি করতে শুরু করেছিল। অন্যরা খেলাধুলা বা আড্ডায় ব্যস্ত থাকত, রুনি তখন প্রতিটি অধ্যায় সংক্ষেপে নিজের ভাষায় লিখে রাখত। সে জানত, বই পড়া যথেষ্ট নয়, মনে গেঁথে নিতে হবে, যেন পরীক্ষার হলে স্বাভাবিকভাবে উত্তর বের হয়ে আসে। অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করত, কখনও ঘুমের অভাব অনুভব করত না। ক্লাস টেনে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তার সংসারের চাপও বেড়ে যায়। এসএসসি পরীক্ষা আসছে, কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বই কিনতে বা প্রাইভেট পড়তে টাকা নেই। তবু রুনি থেমে থাকে না। সে জানত, নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে হবে।

এক বন্ধু তার কাছে স্কুলের টেস্ট পেপার ধার করেছিল। রুনি সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখল, মাত্র পাঁচটি স্কুলের টেস্টের প্রশ্নই যথেষ্ট হলে পুরো সিলেবাসে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারবে। সে সেই পাঁচটি টেস্টের প্রতিটি প্রশ্ন দিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করত। প্রতিদিন সকালে এক ঘন্টা এই টেস্টের উত্তর লিখে যাচ্ছিল, সন্ধ্যায় আবার নিজেই যাচাই করত। এই অভ্যাস তাকে শিক্ষকের চাহিদার বাইরে নিজের দক্ষতা তৈরি করতে সাহায্য করেছিল।

প্রতিদিন রাতে ল্যাম্পের মৃদু আলোয় বসে পড়ত। বিদ্যুৎ প্রায়ই চলে যেত। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকতেন, আর রুনি কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে তার পাশে বসে পড়াশোনা করত। অনেক রাতের নিঃশব্দ অধ্যবসায়ই তাকে পরীক্ষার হলে আত্মবিশ্বাস এনে দিত। সে একাই হিসাব রাখত, কোন বিষয়ের প্রস্তুতি কতটুকু হয়েছে, কোন খাতায় কোন বিষয় লিখেছে—সব কিছু। তার নোটের প্রতি পৃষ্ঠা ছিল যত্ন, অধ্যবসায় এবং স্বপ্নের প্রতীক। প্রতিটি পরীক্ষা শেষে ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষকরা তাকে প্রশংসা করতেন। কিন্তু বন্ধুরা কখনও কখনও হিংসা করত। তারা বলত, “ও তো সবসময় সবকিছু পারছে, অথচ আমাদের মতো মেয়ে না।” রুনি এসব উপেক্ষা করত। তার চোখে একটাই লক্ষ্য ছিল—নিজেকে সেরা করে তোলা।

পরীক্ষার দিন সকালে রুনি খুব তাড়াতাড়ি উঠে পড়াশোনা শেষ করে স্কুলে যেত। পরীক্ষার হলে সে শান্ত মনে সব প্রশ্নের উত্তর দিত। প্রতিটি উত্তর ছিল রাতের পরিশ্রম, ল্যাম্পের আলো, ধার করা টেস্ট পেপার, নিজের খাতার নোট—সব মিলিয়ে গড়ে তোলা দক্ষতা। প্রতিটি উত্তর এত নিখুঁত যে শিক্ষকরা অবাক হয়ে তাকাত। পরীক্ষা শেষে রুনি আবারও বইয়ের কাছে ফিরে গিয়ে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করত। কলেজে ভর্তি হওয়ার খরচ, নতুন জীবন, নতুন চ্যালেঞ্জ—সব কিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করত। তার মনে একটাই কথা—আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। ফলাফল ঘোষণার দিন সকালে তার হৃদয় ভয়ে ভরে ওঠে। বিদ্যুৎ নেই, বাবা খবর আনতে পাশের দোকান যান। কিছুক্ষণ পর হাসিমুখে ফিরে এসে বলেন, “রুনি, তুমি অসাধারণ ফল করেছ।” রুনি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিল না। পরে স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন—সে এসএসসি পরীক্ষা ৯৮ শতাংশ নম্বর অর্জন করেছে। তার নাম শ্রেষ্ঠ ছাত্রীর তালিকায়।

বাড়িতে আনন্দের ঢেউ বইছে। মা কেঁদে ফেলেন, বাবা চুপচাপ কেবল মাথায় হাত রাখেন। ভাইবোনেরা খুশিতে নাচছে। তবু আনন্দের সঙ্গে আসে এক নিঃশব্দ উদ্বেগ—কলেজের খরচ কিভাবে চালানো হবে। রুনি চুপচাপ নিজেকে দৃঢ় করে, জানে, যা কিছু হোক সে থেমে থাকবে না। সেই রাত রুনি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল, এই অন্ধকারের মধ্যে থেকেই সে একদিন আলো খুঁজে পাবে। তার চোখে ছিল স্বপ্নের দীপ্তি, আত্মবিশ্বাসের ঝলক, এবং নিজের জীবনের প্রতি অটল বিশ্বাস। রুনি এখন এক নতুন অধ্যায়ের পথে। এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। তার সংগ্রামের গল্প এখানেই শেষ হয়নি। অনেক বাধা, অজানা কষ্ট, নতুন চ্যালেঞ্জ—সবই অপেক্ষা করছে। কিন্তু রুনি জানে, থেমে থাকা তার কাজ নয়। নিজের অধ্যবসায়, জেদ, আত্মবিশ্বাস এবং হাল না ছাড়ার মানসিকতা নিয়েই সে এগিয়ে চলবে।

রুনি শুধু একজন সাধারণ মেয়ে নয়। সে হল এক অদম্য আত্মার প্রতীক। প্রতিটি রাতের ল্যাম্পের আলো, প্রতিটি নোট, প্রতিটি টেস্ট পেপার—সব মিলিয়ে গড়ে তুলেছে তার চরিত্র। এখনো সে অন্ধকারের মধ্যে, তবে তার চোখে দীপ্তি রয়েছে। সে জানে, একদিন এই অন্ধকারকে পেরিয়ে নিজের আলো খুঁজে নেবে। রুনির জীবন এখনো অসম্পূর্ণ, সংগ্রাম চলছে, কিন্তু আশা এবং স্বপ্ন তাকে থামতে দেয়নি। এই প্রথম অধ্যায়ে, আমরা দেখলাম কেবল তার শৈশব ও স্কুলজীবনের সংগ্রাম, অধ্যবসায়, নোটিং, টেস্ট পেপার থেকে প্রস্তুতি, ক্লাসমেটদের হিংসা, এসএসসি পর্যন্ত লড়াই। পরবর্তী অধ্যায়ে দেখা যাবে, সে কলেজে কিভাবে নতুন জীবন শুরু করে, কিভাবে আরও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয় এবং নিজের স্বপ্নকে ছোঁয়ার জন্য লড়ে যায়।

জানিনা আপনাদের কাছে কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটির প্রথম পর্ব ? আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️