হারিয়ে যাওয়া ব্যাগে সবার ঈদের নতুন জামা কাপড় ছিল-অন্তিম পর্ব।।
আমি কমলাপুর সোহাগ বাস কাউন্টারে বেশ কিছুক্ষণ বসে চিন্তা করলাম এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত। যদি বাসায় ফোন করে জানায় যে হেলপার বলেছে বাসে কোন প্রকার ব্যাগ পাওয়া যায়নি,তাহলে সবার মন খারাপ হয়ে যাবে। কারন হারিয়ে যাওয়া সেই ব্যাগে সবার ঈদের নতুন জামা কাপড় ছিল। সবার খুশি সেই ব্যাগের মধ্যে রয়েছে। এখন যদি ব্যাগ না পাওয়া যায় তাহলে আবার নতুন করে সবার জামা কাপড় কিনতে হবে। অনেক গুলো পয়সা অতিরিক্ত খরচ হবে। কিন্তুু সেখানে বসে চিন্তা করলেও কোন লাভ হবে না। তাই আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম। সোহাগ বাসের সেই স্টাফের নাম্বারটা সহ মোট তিন জনের নাম্বার নিয়ে হতাশ মনে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম।
সোহাগের সেই স্টাফের নাম হলো মোহাম্মাদ কামাল হোসেন। তিনি যথেষ্ট ভালো মানুষ। তিনি আমকে আশ্বাস দিলেন যে,ব্যগটা গাড়িতেই আছে। হেলপার আমার ভয়ে মিথ্যা বলছে। আপনি এখন বাসায় যান,বিকালে যোগাযোগ করবেন। আমি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উপর দিয়ে যে লোহার অভার ব্রিজ রয়েছে,সেটা দিয়ে মুগ্ধা বিশ্বরোডে গেলাম। সেখানে থেকে সাইনবোর্ডে যাওয়ার জন্য লাভলি ও লাব্বাইক বাস পাওয়া যায়। এই দুইটি বাস যাত্রাবাড়ি ফ্লাইঅভার ব্রিজের উপর দিয়ে আসে। আর অনাবিল ফ্লাইঅভারের নিচ দিয়ে আসে। আমি সবসময় লাভলি ও লাব্বাইক বাসে চড়েই যাতায়ত করি।
আমার বাসায় আসতে আসতে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। এসেই ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কারন রাতে তেমন ঘুম হয়নি আবার সকালেও না ঘুমিয়ে কমলাপুর চলে গেছিলাম। বারোটা পর্যন্ত ঘুম দিলাম। জুম্মার নামাজের আজান শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই ঐ বাসের হেলপারকে ফোন দিলাম। তার নাম্বার বন্ধ পেলাম যার ফলে ঐ বাসের ড্রাইভারকে ফোন দিলাম। তবে ড্রাইভারের ফোনে কলিং হয়েছে কিন্তুু তিনি ফোন রিসিপ করে নাই। ফোন রেখে গোসল কলে ফ্রেশ হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করতে চলে গেলাম।
জুম্মার নামাজ শেষ করে এসে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কারন যেহেতো রমজান মাস দুপুরে খাওয়া দাওয়ার কোন চিন্তা ভাবনা নেই। দুইটার দিকে সেই হেলপারকে আবার ফোন দিলাম। এবারও তার মোবাইল বন্ধ,ড্রাইভারকে ফোন দিলাম। এবার ড্রাইভার ফোন রিসিপ করেছে। জিঙ্গেস করলাম আপনার বাসের হেলপার কোথায়। তিনি জানায় হেলপার বাস পরিষ্কার করছে। তার মানে বাস ভাদুঘর স্টেশনে পৌছে গেছে। ফোন কেটে সাথে সাথে শ্বশুর বাড়িতে কল দিলাম। সেখানে শালা ও এক ভাগিনাকে ভাদুঘর বাস স্টেশনে পাঠালাম। তারা বাসের নাম্বার ধরে সেই বাসটি খুঁজে বের করেছে। ভাগিনা বাসে উঠে সুটকেসের বক্সের মধেই সেই ব্যাগটি পেয়েছে। এই খবরটি শুনে মনটা শান্ত হয়েছে। যেহেতো ব্যাগ পাওয়া গেছে,যেভাবেই হোক ব্যাগ ঢাকায় আনা যাবে। কামাল সাহেবের কথাই ঠিক। হেলপার বাস চেক না করেই মিথ্যা কথা বলেছে। দায়িত্বের অবহেলা।
যায়হোক ভাদুঘর বাস স্টেশনের সোহাগ কাউন্টারের স্টাফের সাথে কথা বললাম। তিনি জানায় আমাদের কোন পার্সেল নেওয়া নিষেধ। যদি কোন যাত্রী যায় তাহলে ব্যাগটি ঢাকায় পাঠাতে পারি। আমি বললাম আপনাদের লোক ভুল করে ব্যাগ রিটার্ন নিয়ে গেছে। এখন আপনাদের দায়িত্বে ব্যাগ ঢাকায় পাঠান,আপনাদের কমলাপুর কাউন্টারের স্টাফের সাথে আমার কথা হয়েছে। দরকার হলে তার সাথে কথা বলেন। আজকের মধ্যে ব্যাগ যেন ঢাকায় আসে। কথা গুলো একটু কঠিন ভাবেই বললাম। কিছুক্ষন পরে সেই কামাল সাহেব আমার নাম্বারে কল দিয়ে জানায় যে,আমি যেন বিকাল চারটার সময় কমলাপুর কাউন্টার থেকে ব্যাগটা নিয়ে আসি।
চারটার দিকে আমি না গিয়ে আমার এক ভাইয়াকে পাঠালাম। তিনি সাড়ে চারটার সময় আমাকে ফোন দিয়ে জানায় যে,রাস্তায় জ্যামের কারনে বাস তখনও কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে পৌছে নাই। সেখানে আরেকজন স্টাফ আশরাফুল সাহেব আমাকের জানায় যে,যেহেতো আপনাদের বাসা সাইনবোর্ড তাই আমি ইফতারের পরে ব্যাগটা আমাদের সাইনবোর্ড সোহাগ বাস কাউন্টারে পাঠিয়ে দেবো। আপনারা সেখান থেকে ব্যাগটা নিয়ে যাবেন।
ইফতারের পরে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তারা সাইনবোর্ডের পরিবর্তে ভুল করে চিটাংরোড কাউন্টারে ব্যাগ পাঠিয়ে দিয়েছে। কি আর করা সেই ভাইয়াকে আবার চিটাংরোড কাউন্টারে পাঠালাম। অবশেষে রাত নয়টার দিকে সেই ব্যাগটা আমাদের হাতে পেলাম। ব্যাগে আমাদের বাবুর অনেক গুলো জামা ছিল। আর কারো জামার প্রতি এত গুরুত্ব দেয়নি। শুধু মাত্র বাবুর জামা গুলোর জন্য বাবুর মা মন খারাপ করে বসে ছিল। অবশেষে ব্যাগ হাতে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে। মানুষ খুশির জন্যই সব কিছু করে। যদি হেলপার ঢাকা থেকে বাস ছাড়ার আগে ভালো ভাবে চেক করতো তাহলে আমাদের এত হয়রানি হতো না। যায়হোক ব্যাগটা হাতে পেয়েছি,সৃষ্টিকর্তার নিকট কোটি কোটি শুকরিয়া আদায় করি।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
শিরোনাম | হারিয়ে যাওয়া ব্যাগে সবার ঈদের নতুন জামা কাপড় ছিল-অন্তিম পর্ব।। |
স্থান | কমলাপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২৯ /০৩ /২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
তাহলে বাবুর ঈদের জামা এবার বিনে পয়সায় অনেক ভ্রমনই করেছে। বেশ কষ্টই পোহাতে হয়েছে ব্যাগটি পাওয়ার জন্য। আপনার এমন পোস্ট পড়ে বার বার ভাবছিলাম যে ব্যাগটি কি অবশেষে পাওয়া যাবে কিনা। যাক তাহলে ব্যাগটি অবশেষে হাতে পেলেন। আর বাবুর মাও বেশ খুশি হবেন।
জী আপু অবশেষে অনেক কষ্টের পরে ব্যাগটি আমরা হাতে পেয়েছি। ধন্যবাদ।
শেষ পর্যন্ত আপনার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগটি ফিরে পেলেন এটা জানতে পেরে আমিও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। ব্যাগের মধ্যে রাখা সকল নতুন পোশাকগুলো পেয়ে নিশ্চয়ই আপনারা সহ সকলেই আরো বেশি আনন্দিত হয়েছেন।
জী ভাইয়া ব্যাগে নতুন কাপড়ই বেশি ছিল। অবশেষে ব্যাগটা হাতে পেলাম। ধন্যবাদ।
অবশেষে হারিয়ে যাওয়া ঈদের কাপড়ের ব্যাগটি হাতে পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।অনেক ঝুকি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আপনাকে এই ব্যাগের জন্য। ভাবি তো মন খারাপ করবেই বাবুর প্রথম ঈদের নানির কেনা জামাকাপড় হারিয়ে গেছে। অবশেষে ব্যাগটি পাওয়া গেছে জেনে ভালো লাগলো।এবার ভাবির মুখে হাসি ফুটেছে নিশ্চয়ই । ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর করে গুছিয়ে পোস্ট টি আমাদের সাথে শে করার জন্য।
জী আপু ব্যাগ হারিয়ে গেছে ,শুনে প্রথমে খুবই খারাপ লেগেছিল। পরে ব্যাগ পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে। ধন্যবাদ।
আপনাকে দেখছি ভাই অনেক ভোগান্তির স্বীকার হতে হল। পুরো একটা ব্যাগ ভর্তি জামা কাপড় এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এক্ষেত্রে চিন্তা তো হবেই। তবে আমার কথা হচ্ছে, হেলপার বাস চেক না করেই মিথ্যা কথা বলবে কেনো! একটা মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলা করার অধিকার তো তাদের নেই। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ব্যাগটা হাতে পেয়েছেন, শুনে খুশি হলাম।
জী ভাইয়া হেলপার বাস চেক না করেই ম্যানাজারের ভয়ে বলেছে যে,সে বাস চেক করেছে। দায়িত্বে অবেহেলা করেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
এরকম দায়িত্বে অবহেলা করে সে কাজটা ঠিক করেনি ভাই।