ছোটগল্প ( বৃষ্টির গান- শেষ পর্ব )।।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
রাতে ঠিক কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সেটা খেয়াল নেই আদিত্যের। বইটা পাশেই পড়ে আছে। ইলেকট্রসিটি চলে যাওয়ার কারণে গানটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে কখন যেন। ইলেকট্রিসিটি তখনও আসেনি। বেলা তখন এগারোটা। তবে বাইরে আকাশের অবস্থা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে বেলা এগারো টা বাজে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি চলছে। ফোনের দিকে তাকাতেই আদিত্য দেখতে পাই অরুনার বেশ কিছু ম্যাসেজ
মনে হয় আপনি এখনও ঘুমাচ্ছেন। ঘুম ভাঙলে আমাকে ফোন দিবেন। দরকার আছে আপনার সাথে। কিছু কথা ছিল।
অরুনার এমন ম্যাসেজ দেখে কিছুটা হকচকিয়ে যায় আদিত্য। কিছুক্ষণ বাদে যখন ফোন দেয় আদিত্য। ফোনে রিংটন বেজে উঠতেই রিসিভ করে অরুনা। যেন সে আদিত্যের ফোনে অপেক্ষায় করছিল
হ্যা বলুন ফোন ধরে প্রথমেই কথা বলে অরুনা।
আমি কী বলব। আপনি না ফোন দিতে বলেছেন। আপনি বলবেন।
হ্যা বলেছি। বলছি আজকে আপনি ফ্রি আছেন? কিছুটা সময় দিতে পারবেন,
কেন বলুন তো।
না একটু দেখা করার দরকার আপনার সাথে এইজন্য।
এই বৃষ্টিতে বাইরে বের হওয়া তো সমস্যা। তাহলে দেখা কীভাবে করব বলুন।
বৃষ্টি কোন সমস্যা না। ইচ্ছা থাকলে হয়ে যাবে।
আপনার আজকে অফিস নেই জিজ্ঞেস করে আদিত্য।
না আজকে যায়নি। তাহলে কী আমাদের দেখা হচ্ছে?
ঠিক আছে বিকেল চারটার দিকে দেখা করি?
কোথায় দেখা করবেন?
লালবাগ কেল্লার সামনে টপ ভিউতে চলে আসুন। ঠিক আছে।
বিকেল চারটার দিকে দুজনের চলে গেল লালবাগ কেল্লার সামনে টপ ভিউ রেস্টুরেন্টে। এই রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে স্বচ্ছ কাচের জানালা দিয়ে লালবাগ কেল্লাটা বেশ ভালোভাবে দেখা যায়। বৃষ্টির পানির স্পর্শে যেন কেল্লার সৌন্দর্য টা আরও বেড়ে গিয়েছে খেয়াল করে আদিত্য।
এবার বলেন কেন দেখা করতে বললেন হঠাৎ। আমার সাথে কোন দরকার আছে আপনার??
হ্যা দরকার তো আছে। অনেক দিন হলো তো আর কতদিন এভাবে পালিয়ে পালিয়ে থাকবে আদিত্য। এবার নিজের পরিচয় টা দিতে সমস্যা কোথায় তোমার।
হঠাৎ আপনি থেকে তুমি তে চলে এসেছে অরুনা। অরুনার এমন কথা শুনে কিছুটা হতবিহব্বল হয়ে যায় আদিত্য। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। আপনি কী বলছেন।
বুঝতে পারছ না, নাকী বুঝতে চাইছ না? আচ্ছা আমিই বলছি আমার কথা তোমার সত্যি মনে নেই?
না সত্যি মনে নেই। আপনার সাথে কী আমার আগে কখনও দেখা হয়েছিল। জিজ্ঞেস করে আদিত্য।
শ্যামপুরের কথা মনে আছে ২০১১ সাল। শ্যামপুর কথাটা শুনে থমকে যায় আদিত্য। হ্যা শ্যামপুর। তাদের গ্রামের বাড়ি ছিল শ্যামপুর। আগে আদিত্যরা শ্যামপুরেই থাকত। তবে ২০১১ সালে আদিত্যের বাবা মারা যাওয়ার পরে ওরা সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে একেবারে ঢাকা চলে আসে। এখানে এসে আদিত্যের মামারাই ওদের দেখাশোনা করত। তারপর এখানে এই বাড়িটা ওরা তৈরি করে। এবং এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায় । তখন ওর বয়স ১১ বছর। আজ থেকে ১৪ বছর আগের কথা। অরুনার মুখে শ্যামপুর নামটা শুনে যেন সবকিছু ভেসে উঠে চোখের সামনে।
হ্যা। কিন্তু আপনি? ভেবে দেখ আমার কথাও মনে পড়বে। আমি অরুনিমা। তুমি অরুনিমা নামে কাউকে চিনতে একসময় ভেবে দেখ।
মনে পড়ে যায় আদিত্যের। হ্যা অরুনিমা। অরুনিমা থেকে অরুনা। শ্যামপুরে পাশাপাশি বাড়িতে থাকত ওরা। অরুনিমা হাবিল কাকার মেয়ে।ছোটবেলা দুজনের অধিকাংশ সময় একসঙ্গে কাটতো। ভালোবাসার কোন সম্পর্ক না থাকলেও তার চেয়ে গভীর সম্পর্ক ছিল ওদের মধ্যে। তুমি অরুনা মানে অরুনিমা। তাহলে এতদিন কেন বলোনি আমাকে??
আমি তোমাকে প্রথমদিন ইন্টারভিউতে দেখেই চিনতে পেরেছিলাম। তোমার মুখের গঠন সেই ছোটবেলার মতোই আছে। কিন্তু ভেবেছিলাম তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ। নিজে থেকেই কথা বলবে।
কিন্তু না তোমার থেকে কোন সাড়া পেলাম না। যখন ভাবলাম নিজে থেকে বলব তোমার জীবনে আরেকটা ঝড় নেমে আসলো। পরে তুমি চাকরি ছেড়ে দিলে আবার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল।
তুমি চাইলেই তো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতে। তাহলে করলে না কেন।
আসলে আমি দেখছিলাম সৃষ্টিকর্তা আর কতদিন আমাদের এভাবে দূরে রাখে। গতকাল বৃষ্টির মধ্যে যখন তোমার সাথে দেখা হলো মনে হয়েছিল তখনই সব বলে দেয়। কিন্তু ভাবলাম এখন থাক। পরে বলা যাবে।
মা কে হারিয়ে একেবারে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল আদিত্য। ও ভেবেছিল জীবন থেকে সবাইকে হারিয়ে ফেলল। কিন্তু হঠাৎ ছোটবেলার সেই সঙ্গী অরুনিমার আগমন। না এই আগমন অনেক আগেই হয়েছে। তবে সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করেননি। উনি সময় নিয়েছেন।
এবার কিছুটা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে অরুনা। আমার আসাতে কি তুমি খুশি না।
কিছু বলতে পারি না আদিত্য। শেষ কবে সে এমন খুশি হয়েছিল ও নিজেও হয়তো জানে না। রেস্টুরেন্টের মধ্যে slow একটা মিউজিক বাজছে।
If you miss the train I'm on, you will know that I am gone
You can hear the whistle blow a hundred miles,
A hundred miles, a hundred miles, a hundred miles, a hundred miles,
You can hear the whistle blow a hundred miles
ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরে বৃষ্টির তীব্রতা এখন মাঝামাঝি,যাকে বলে ঝিরিঝিরি। বৃষ্টি শুধু পৃথিবীতে একা আসে না। কখনও কখনও ফিরিয়ে নিয়ে আসে আমাদের অতীত কে। ফিরিয়ে দেয় অতীতের স্মৃতি। কিন্তু আজ এই বৃষ্টি আদিত্যকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার অতীতের এক মানুষের সাথে।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Daily task
https://x.com/Emon423/status/1932699273281622528?t=rpZ7RhiK1X5NSvjMsRc-tg&s=19
https://x.com/Emon423/status/1932699532367982954?t=fr3_o5zb9w_GGBfTANlXjA&s=19
https://x.com/Emon423/status/1932699933595123883?t=gJ90mP4i11XXbRf72ZzD_A&s=19
https://x.com/Emon423/status/1932700156623004143?t=75kAd6KjmI6uOYwnhUI5fQ&s=19
https://x.com/Emon423/status/1932700513516372249?t=eabvtJV09efL67Q0oi2Udw&s=19
https://x.com/Emon423/status/1932700661864673598?t=uuzLDmQdIkptqSe5DkenUA&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.