গল্প :- প্রিয়জন // পর্ব - ০৩

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শুক্রবার। ০২রা জুন, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আজকে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে আপনাদের নিকট হাজির হয়েছি।

siblings-gc11837ab2_1280.jpg

Source



দক্ষিণা বাতাস রিমার শরীর স্পর্শ করতেই, রিমার মাথার পাকা ও আধাপাকা ময়লা জমাট বাধা চুলগুলো উড়তে লাগলো। রিমার শরীর ও মনে প্রশান্তি নেমে আসলো। মুহূর্তেই রিমার মনে পড়ে গেল, তার জীবনের অতীত মধুর কথাগুলো। কৃষ্ণচূড়া গাছটি রিমার জীবনের মধুর স্মৃতিগুলোর সাক্ষী হয়ে রয়েছে। সাগরের বাবার সাথে রিমার বিয়ে হয়েছিল বৈশাখ মাসের শেষ দিকে। বিয়ের পরে রিমার স্বামী এই কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে সুন্দর সুন্দর কৃষ্ণচূড়াফুল ছিড়ে রিমার চুলের খোপায় বেঁধে দিত। কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় বসে রিমা এবং তার স্বামী সংসারের সুখ-দুঃখ নিয়ে কতই না কথা বলতো। শুধু তাই নয়, জোসনা রাতে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে রিমা তার স্বামীর সাথে ভালোবাসা বিনিময় করতো। দু'জন দু'জনার হাতে হাত রেখে মধুর আলাপন করতো। প্রথমদিকে রিমার দাম্পত্য জীবনে সুখের কোন সীমা ছিল----এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল রিমা একেবারেই বুঝতে পারিনি।



রিমা প্রতিদিন একবার হলেও কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সেই পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। যে পথ দিয়ে বিয়ের প্রথম দিন তার স্বামীর হাত ধরে শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করেছিল, যে পথ দিয়ে তার প্রাণের স্বামী প্রবাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। সবার অজান্তে সেই পথের দিকে রিমা খাতুন অপলকে চেয়ে থাকে। রিমা যখন পথের দিকে তাকিয়ে তার প্রানের স্বামীর কথা স্মরণ করে তখন তার বুক ফেটে কান্না চলে আসে। রিমার দুটি চোখ দিয়ে অঝরে নোনা জল ঝরতে থাকে। রিমার জীবনের এই দুঃখের যন্ত্রণা হয়তো কেউ উপলব্ধি করতে পারে না, রিমার দুটি চোখের বেদনার জলের মূল্য হয়তো কেউ দিবে না। কিন্তু রিমা বিশ্বাস করে, একদিন সৃষ্টিকর্তা তার সকল দুঃখ দূর করে দিবে, তার প্রাণের স্বামী প্রবাস থেকে তার কাছে চলে আসবে।



সাগর ও ঝর্ণার এইচএসসি পরীক্ষা খুবই নিকটে চলে এসেছে। সেদিন কোচিং শেষ করে সাগর যথা সময় বাড়িতে আসলেও ঝর্ণা দুপুর পর্যন্তও বাড়িতে পৌঁছায়নি। ঝর্ণাকে নিয়ে ঝর্নার বাবা ও মা খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। ঝর্না কোচিং শেষ করে একটি পোশাকের মার্কেটে গিয়েছিল। পোশাকের দোকান থেকে ঝর্না দুইটা ফুলহাতা সুতির জামা ক্রয় করেছে। একই সাথে দুইটা জিন্সের ভালো ব্যান্ডের প্যান্ট ক্রয় করেছে। জামা ও প্যান্ট ক্রয় করে দুপুর পরে ঝর্না বাড়িতে পৌঁছায়। কিন্তু ঝর্না বাড়িতে এসে তার বাবা-মাকে বলে, সে তার একজন বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিল। তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।



সন্ধ্যার সময় ঝর্না পোশাক গুলো নিয়ে সাগরের বাড়িতে চলে এলো। তারপর সাগরের মায়ের হাতে পোশাকগুলো দিয়ে ঝর্না বললো, এগুলো সাগরের জন্য কিনে এনেছি। সাগরের জন্য নতুন পোশাক দেখে সাগরের মা অত্যন্ত খুশি হল ঝর্ণার প্রতি। সাগর নতুন পোশাক পেয়ে বেশ খুশি হল। কিন্তু সাগর ঝর্নাকে বলল, তুমি কেন আমার জন্য এত দামি পোশাক কিনতে গিয়েছো? উত্তরে ঝর্না বললো, গতকাল সন্ধ্যার সময় আমি তোমাদের বাড়িতে এসেছিলাম। তোমাদের বাড়িতে এসেই আমি শুনতে পেলাম যে, এইচএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য তোমার কিছু নতুন পোশাক লাগবে। কিন্তু আর্থিক সমস্যা থাকার কারণে নতুন পোশাক ক্রয় করা তোমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই তোমার জন্য আমি এই পোশাকগুলো উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছি।



ঝর্নার মুখে এরকম কথা শুনে সাগর চোখ তুলে ঝর্নার মুখের দিকে তাকালো। সাগরে তাকানো দেখে ঝর্না বেশি লজ্জা পেল। কিন্তু সাগর যে কি কারনে ঝর্নার মুখের দিকে তাকালো সেটা ঝর্না একবারও বোঝার চেষ্টা করল না। শুধুমাত্র ঝর্না ভাবলো, হয়তো আমার প্রতি সাগরের ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছে। আর ঝর্ণা এটাই সব সময় প্রত্যাশা করে। কারণ ঝর্না সাগরকে অনেক অনেক ভালোবাসে।



গল্পটি চলমান থাকবে। গল্পটির চতুর্থ পর্ব আগামী সপ্তাহের আজকের দিনে অর্থাৎ শুক্রবারে শেয়ার করা হবে।


গল্পের দ্বিতীয় পর্বটি পড়ার লিংক



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 
 2 years ago 

বেশ চমৎকার গল্প উপস্থাপন করেছেন আপনি। প্রিয়জন গল্পের আজকের পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে এই ধরনের গল্প পড়তে মনের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। এত চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম।