নদীর পাড়ের পিকনিক করার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

আসসালামুআলাইকুম/আদাব

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @alif111, বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।

young-8208513_1280.jpg

source

বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে পিকনিক করার মজাটা অন্যরকম। আসলে কিছুদিন আগে আমি যখন নদীর পারে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম। তখন দেখতে পেলাম নদীর পাড়ে কয়েকজন বন্ধুরা মিলে তারা পিকনিক করছে। তখনই মনে পড়ে গেল আমাদের সেই ফেলে আসা দিনের কথা। আমিও বন্ধুদের সাথে নদীর পারে এবং নদীর বালুচরে পিকনিক করেছিলাম। সেই রকম একটি গল্প আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি। আশা করছি গল্পটি ভালো লাগবে।



শীতের এক হাড় কাঁপানো সকালে আমাদের গ্রামের পাঁচ বন্ধু,আমি, মানিক, সাব্বির, জাহিদ আর সোহেল,পিকনিক করার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরীক্ষা শেষ, স্কুল ছুটি, আর এমন ঠান্ডার দিনে কুয়াশা মাড়িয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দিন কাটানোর আনন্দই আলাদা। আগের দিন রাতে গ্রামের মোড়ে চায়ের দোকানে বসেই পুরো পরিকল্পনা করা হলো। কে কী আনবে, কে রান্না করবে, এমনকি কার দায়িত্ব গানের সাউন্ডবক্স আনাসবকিছু ঠিক করে নেওয়া হলো।

পরদিন সকাল সাতটায় দেখা হলো আমতলার মোড়ে। মাথার উপর কুয়াশা, পাশে জমির উপর শিশিরে ভেজা ধানগাছ আর দূরে শিউলি ফুলের গন্ধে মনটা যেন একেবারে তরতাজা হয়ে গেল। সবাই এক হাতে গামলা, অন্য হাতে থলে। মানিক এক হাত দিয়ে হাঁড়ি আরেক হাতে আগুন জ্বালানোর চুলা নিয়েছে, তার মুখটা যদিও বিরক্তিতে ভরা,ওর সব সময় মনে হয় ওরই সবচেয়ে বেশি কাজ পড়ে। সাব্বির অবশ্য আগেই বলে রেখেছে, আমি গান বাজাবো আর বসে বসে ফরমাশ দেবো!আমরা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নদীর পাড়ে। বড় বটগাছের নিচে সুন্দর একটা ফাঁকা জায়গা, পাশে বালুর চর, আর দূরে দূরে গরু চরাচ্ছে কয়েকজন রাখাল ছেলে। নদীর স্রোত ধীরে ধীরে বয়ে চলেছে। আমরা জায়গাটা পরিষ্কার করে শীতের রোদ পিঠে মেখে বসে পড়লাম।

রান্নার দায়িত্ব পড়ল সোহেল আর জাহিদের ওপর। তারা দুজনেই রান্না করতে চায়, কিন্তু দুজনের কারোই আসলে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। ওদের দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না কে চাল ধুচ্ছে আর কে সেটা পানিতে ফেলে দিচ্ছে!প্রথম বিপদ হলো, চুলা ধরাতে গিয়েই। কাঠ ভিজা ছিল, আগুন কিছুতেই ধরছিল না। জাহিদ বলল, "কেরোসিন ঢাল!" আর কেরোসিন এমন ঢালা হলো যে পুরো চুলা যেন আগুনের গোলা হয়ে গেল। মানিক তাড়াহুড়ো করে পানি দিতে গিয়ে হড়কেই নদীতে গড়িয়ে পড়ল! সবার হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাওয়ার অবস্থা।

একটু পর সাব্বির ঘোষণা করল, "আমি একটা আলু ভর্তা বানাবো। দেইখো কেমন হয়!সে আগুনের ওপরে আলু ফেলে রেখে গলায় গান ধরল,ও নদীরে… তুই যায়ে কোন বানে…
আলু তো ততক্ষণে হয়ে গেছে কয়লা। সেই ভর্তা খেয়ে জাহিদ বলল, ভাই, এটা কি ভর্তা, না কয়লার টুকরো?

আমরা নদী থেকে কয়েকটা ছোট মাছ ধরে আনছিলাম আগে থেকেই। জাহিদ বলল, মাছ আমি ভাজব!তেল ভালোভাবে গরম না করেই সে মাছ ছেড়ে দিল। তেলের গায়ে ফোঁস করে ফুটে উঠল আর মাছগুলো লাফ দিয়ে চুলার বাইরে চলে গেল। মানিক বলল, তোর রান্নায় মাছ তো নয়, যেন পটকা বোম!সব ঝামেলা সামলে দুপুর নাগাদ খাওয়ার সময় হলো। পোলাও কিছুটা কাঁচা, মাংসে নুন কম, আর মাছ—সে তো ইতিহাসই হয়ে গেছে! তবুও আমরা সবাই বসে খেলাম হেসে হেসে। খাবার যেমনই হোক, বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার মজাই আলাদা। খাওয়ার পর আমরা গান গাইলাম, কেউ কেউ নদীতে পা ভিজিয়ে হাঁটতে লাগল, কেউ আবার বালুতে গড়িয়ে গড়িয়ে হেসে কুটিকুটি।

সন্ধ্যা নামতেই আকাশে লালচে আলো ছড়াতে লাগল। নদীর উপর দিয়ে হালকা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল, আর দূরে গরুগুলো ঘরে ফেরার পথ ধরেছে। আমরা বসে বসে গল্প করলাম, ভবিষ্যতে আরও পিকনিক করার প্ল্যান করলাম, আর একটু মন খারাপ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলাম।
দফেরার সময় মানিক বলল, খাবারটা যতই অদ্ভুত হোক,আজকের দিনটা আমি জীবনেও ভুলবো না।আমি হেসে বললাম, পিকনিক মানেই তো এমন—হাসি, মজা আর একটু গন্ডগোল!



বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো যেন আনন্দের আর এই হাসি আনন্দ খেলাধুলার মাঝে যেন জীবনটা বেশি উপলব্ধি করা যায়। তাই বন্ধুদের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো অনেক আনন্দদায়ক ছিলো,আপনাদের মাঝে আজকে গল্পটি শেয়ার করতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে🖤✨

Zskj9C56UonWToSX8tGXNY8jeXKSedJ2aRhGRj6HDecqreqo2XAMzrcrFMezsQ2JYvnkCG8natanTeTWALXvA2X1jsqXD4Nf1w7BTTxEyx7JRMmmeNnz.png

ধন্যবাদ সকলকে✨💖

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZw7HFjCLMfDJx3zXx3jXPRfJr7otFtoRfKMmN9rJzpemZGKH1sKHrmfJREqyC...9xLrN7kkzEr3nKpRPcTj6NSZrBzYGbr93rAK2CAinZaxUP2fFhka9ZrPQeMBYoU2r2avcVEfb5m3uJAqvfZ4UMDVMeWvTdncVc9TonRvS2kneML5dvyoyUQZKC.png

ফোনের বিবরণ

ক্যামেরাস্যামসাং গ্যালাক্সি
ধরণরাইটিং ✨
মডেলএম-৩১
ক্যাপচার@alif111
অবস্থানসিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ।

banner-abbVD-1.png

আমার পরিচয়

IMG-20240117-WA0007.jpg
আমার নাম মোঃআলিফ আহমেদ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের একজন ছাত্র। আমি ছোট বেলা থেকেই আর্ট করতে পছন্দ করি।তাই অংকন করতে আমার খুব ভালো লাগে।তাই আমি সময় পেলেই বিভিন্ন চিত্র অংকন করি।বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে ও ফটোগ্রাফি করতে আমার খুবি ভালো লাগে।🌼💖🌼

সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল এবং আমার পোস্টটি সমর্থনকারী সকল বন্ধুদের বিশেষ ধন্যবাদ।🌹🌻