একটি মেয়ের গল্প||
আজ-৫ই কার্তিক||১৪২৯ বঙ্গাব্দ,হেমন্তকাল||
আসসালামুআলাইকুম/আদাব।কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগবাসি? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন?আমিও ভালো আছি।আজকে আমি একটি লেখা নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হলাম।
অনেকদিন আগের কথা,এক গ্রামে দুই মেয়ে এবং মা বাস করতো।বড় মেয়েরনাম শাপলা এবং ছোট মেয়ের নাম ছিল শিউলি। শাপলা ছিল আগের পক্ষের,তাই সৎ মা বড় মেয়েকে একদম ভালোবাসতো না।সবসময় কাজ করাতো,ঠিকমতো খেতে দিত না।ছোট মেয়ে শিউলিকে অনেক ভালোবাসতো,কারণ শিউলি তার নিজের মেয়ে ছিল।এভাবে করেই অবহেলায় শাপলার দিন চলতো।তাদের বাবা শহরে কাজ করতো,অনেকদিন পর গ্রামে আসতো।যখন তাদের বাবা গ্রামে আসতো,মেয়েটিকে সৎ মা ভয় দেখিয়ে বলতো তোর বাবা আসলে বলবি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। আমার নিজের মেয়ের মতোই। আর না বললে বাবা চলে গেলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।মেয়েটি এভাবে করেই তার সৎ মায়ের কথা মতো চলতে থাকে।মেয়েটি রাতে কান্না করে তার মায়ের কাছে অভিযোগ করে,কেন তুমি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলে।তুমি আমাকে ছেড়ে না গেলে বাবা নতুন মাকে আমার দেখাশোনার জন্য নিয়ে আসতো না।আর আমাকে এত কাজও করতে হতোনা।মেয়েটির দিন এভাবেই চলতে থাকে।যখন মেয়েটির নিজের মা মারা যায় ,তখন মেয়েটির বয়স ছিল আট বছর।এভাবে করে মেয়েটির বয়স ১৮পেরিয়ে যায়।
হঠাৎ করে একদিন মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।সেদিন তার বাবা তাদের দেখতে গ্রামেই এসেছিল।তারপর মেয়েটিকে তার বাবা ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যায়।ডাক্তার বলেন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করায়।তারপর ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দেয়।এভাবে কিছুদিন পর মেয়েটি সুস্থ হয়ে ওঠে।মেয়েটি ছিল খুব সুন্দরি,ডাক্তার অল্প বয়সি ছিল।মেয়েটিকে তার ভালো লেগে গিয়েছিল।তারপর প্রায় এক মাস পর,ডাক্তার মেয়েটির বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখে মেয়েটি কাজ করছে এবং তার সৎ মা এবং বোন বসে হাসাহাসি করছে।ডাক্তারের আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না,মেয়েটির অসুস্থ হওয়ার কারণ।তারপর ডাক্তার মেয়েটির মাকে বিয়ের কথা বললে,মেয়েটির মা নাকচ করে বিয়ের প্রস্তাব।মেয়েটির মা বলে তার ছোট মেয়ে শিউলি কে বিয়ে দিবে।তার বড় মেয়ে শাপলা কে বিয়ে দিবে না।কারণ তিনি তার বড় মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারবেন না।বড় মেয়েকে প্রচুর ভালবাসে।তাদের মা বলে,আমার মেয়েদের বয়সের পার্থক্য খুব বেশিনা, বড় মেয়ের বয়স ১৯ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স ১৮।ডাক্তার মেয়েটি যে তার সৎ মেয়ে এটা জানে।তাই ঐদিন আর কিছু না বলে বাড়িতে চলে যায়।
এভাবে প্রায় দুই মাস কেটে যায়।ডাক্তার মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলে।কিন্তু মেয়েটির সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারেনা।তারপর একদিন মেয়েটির মাকে এবং বোনকে হঠাৎ বাইরে যেতে দেখে ডাক্তার।তখন মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে ডাক্তার মেয়েটিকে তার ভালোবাসার কথা জানায়।কিন্তু মেয়েটি রাজি হতে চাইনা তার মায়ের ভয়ে।তারপর ডাক্তার মেয়েটিকে বলে তুমি আমার সাথে আজই চলো,আমরা আজই বিয়ে করে নিই।তারপর তুমি আমার বাড়িতে থাকবে।এখানে আর তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।একপর্যায়ে অনুরোধের পর মেয়েটি রাজি হয়ে যায়। এবং ডাক্তারের সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে।তারপর ডাক্তার মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে।প্রথমে ডাক্তারের বাড়ির লোক মেয়েটিকে মেনে নিতে চাই না।ডাক্তার তাদের একমাত্র ছেলে হওয়ায় মেনে নেয় এবং মা মরা মেয়ে বলে শাপলাকেও তারা ভালবাসতে শুরু করে।তারপর শাপলার বাবা গ্রামে আসলে শাপলার সৎ মা তার বাবাকে সবকছু জানায় এবং মেয়েটির নামে বদনাম করে।তার বাবা কোনো কিছু বিশ্বাস করেনা,কারণ তার মেয়েকে সে ছোট বেলা থেকেই জানে।তারপর মেয়েটির বাবা ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করে,এবং ডাক্তার সৎ মায়ের অত্যাচারের কথা শাপলার বাবাকে বলে।শাপলার বাবা সব কিছু শুনে শাপলার কাছে গিয়ে বলে,মা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি তোকে ভালো রাখতে পারিনি।তুই আমাকে কেন বলিসনি তোর মা তোকে ভালোবাসেনা।তারপর শাপলা তার বাবাকে বলে এসব কথা বাদ দাও বাবা, আমি অনেক সুখেই আছি এখানে ।এখানে সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।তারপর শাপলার বাবা বাড়ি চলে যায় এবং তার স্ত্রীকে শাসন করে।প্রায় এক বছর পর,শাপলার কোল জুড়ে এক কন্যা সন্তান আসে এবং এভাবেই শাপলা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে ।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আমার লেখাটি কেমন লাগলো কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন বন্ধুরা। আবার নতুন কোন লেখা নিয়ে খুব শীঘ্রই আপনাদের সামনে হাজির হবো।সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।আর অবশ্যই সতর্কতার সাথে চলাচল করবেন।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
VOTE @bangla.witness as witness

আপু আপনার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ।শাপলা মেয়েটি ডাক্তার ছেলেটির সঙ্গে বাড়ি থেকে যেয়ে বেশ ভালই করেছিল। সিদ্ধান্তটা তার একদম ঠিক ছিল। যার জন্য সে একটি ভালো জীবন পেয়েছে। আসলে বেশিরভাগ সৎ মারাই এরকমই হয়ে থাকে।বেশ ভালো ছিল গল্পটি। ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহিত করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
খুবই চমৎকার একটি গল্প আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। এরকম ঘটনা হয়তো আমাদের সমাজে অহরহই ঘটছে। বর্তমান সমাজে মানুষের মন মানসিকতা তেমন একটা ভালো নেই সবাই শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ঠিক যেমনটা সৎ মায়ের মধ্যে দেখা যায়। সে তার নিজের মেয়েকে দিয়ে কোনো রকম কাজ করে না কিন্তু সৎ মেয়েকে দিয়ে ঠিকই কাজ করায়। কিন্তু ভাগ্যে যদি কারো সুখ লেখা থাকে তাহলে সেটা যেদিনই হোক ধরা দেবেই। শেষ পর্যায়ে এসে মেয়েটি সুখী হতে পেরেছে এটা জেনে খুবই ভালো লাগছে।
জি ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ইস প্রত্যেকটা শাপলার জীবন যদি এমন হতো তাহলে কত ভালোই না হতো আপু। অনেকদিন পর ভালো সমাপ্তির একটা গল্প পড়লাম। ভালো লিখেছেন।
জি ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভালো লিখেছেন আর গুছানো লেখা।গল্প পড়তে ভালো লাগে তাই গল্প দেখে তাড়াতাড়ি পড়ে নিলাম।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মতামতের জন্য।
Hi, @rahnumanurdisha,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
Your post was picked for curation by @rex-sumon.
Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP