আয়নার অপর পিঠে (পর্ব ৪ )

আজকে আপনাদের সাথে "আয়নার অপর পিঠে" গল্পটির চতুর্থ পর্ব রিভিউ দেব। তো সৌমিত্র আসলে বাড়ি ফিরে ভাবছিলো যে,এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যে মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে গেলো। আসলে সে কোথায় গেলো এবং সেখান থেকে কিভাবে ফিরবেন। এইসব ভাবার পরে সৌমিত্র রাতের দিকে ডিনার সেরে সেই আয়নার সামনে বসে পড়লো এবং সে মনোবল বাড়িয়ে স্থির করলো যে, সে আর এই আয়নার দিকে তাকিয়ে ভয় পাবে না। সে যতক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিল, ততক্ষন আর তেমন কিছুই ঘটলো না। এমন কি সৌমিত্র সাহস করে বললো যে, তুমি কে? আর আমার কাছ থেকে কি চাও? এইরকম ভাবে সবকিছু নরমাল থাকলো, কিছুক্ষন বাদে ঘরে আলো ধীরে ধীরে নিভে গেলো এবং আয়নার কাঁচে ধোঁয়া জমতে লাগলো।

ধোঁয়া জমতে জমতে হঠাৎ করে তার মধ্যে থেকে আবারো সেই ছায়ামূর্তির আবির্ভাব হলো। এই ছায়ামূর্তির চোখ ছিল একদম ঘন কালো অন্ধকার এবং ঠোঁটের কিনারায় যেন একটা মৃদু হাসি। তবে এই ছায়ামূর্তিটি সৌমিত্রকে কিছুই বললো না, শুধু একটা হাত তুললো এবং সেই হাতের তালুতে হঠাৎ করে একটা চাবির প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো। সৌমিত্র এই বিষয়টা দেখে অবাক হয়ে যায় এবং সে ভাবতে লাগে যে, এই চাবিটা আসলে বাস্তবে কোনো জায়গায় আছে? না এই চাবিটি শুধু এই আয়নার অপারে যে একটা অন্য দুনিয়ার দরজা আছে, সেটা খোলার! সৌমিত্র একপ্রকার এই বিষয়গুলো দেখে চমকে যায়। তবে কিছুক্ষন পরে এই ছায়ামূর্তিটি আয়নার থেকে মুছে যায় এবং সৌমিত্র একটা বিষয় লক্ষ্য করলো যে, এই আয়নার কাঠের নিচে একটা দাগ রয়েছে, যেটা সে আগে কখনো দেখেনি।

এখন সৌমিত্র ওই জায়গাটায় হাত দিয়ে চাপ দিয়ে বসে এবং সাথে সাথে সেখানে একটা অংশ বাক্সের মতো খুলে যায়। এরপর সেখান থেকে ওই ছায়ামূর্তিটির হাতে ভেসে ওঠা চাবির মতো একটা পিতলের ন্যায় দেখতে চাবি বের হয়। এই চাবিটা যতটা সাধারণ আর ছোট দেখতে ছিল, ঠিক ততটাই অবাক করার মতো ভারী ছিল। এই ঘটনা যেন সৌমিত্রের সাথে ঘটে যাওয়া একটা অবিস্মরণীয় বিষয়। সৌমিত্র ওইদিন রাতে শুয়ে আর ঘুমোতেই পারলো না, তার চোখের সামনে শুধু এই চাবির দৃশ্য ভেসে উঠছে। ওই রাতটা যেন তার একপ্রকার স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে অর্থাৎ তার আশেপাশে কি হচ্ছে বা সে কোন অবস্থানে আছে, সেটা তার সজ্ঞানে নেই অর্থাৎ পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সৌমিত্র দেখলো সে তার খাটের থেকে ২ হাত দূরে গিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে এবং তার শরীর ঘেমে একাকার, যেন কেউ তার গায়ে জল ঢেলে দিয়েছে এমন অবস্থা।

এই অবস্থায় সে আবারো আয়নার সামনে যায় এবং দেখে আয়না কালো এবং তার থেকে ধীরে ধীরে ছায়ামূর্তির আবির্ভাব হচ্ছে এবং এইবারে একদম স্পষ্ট ভাবে তাকে দেখা দেয়। আর ছায়ামূর্তিটি তাকে বলে যে-"দরজাটা খোলো..আমি ফিরে যেতে চাই...." সৌমিত্র ভাবছে আমার সাথে এইসব কি ঘটছে এক এক সময়ে! যেন ও এইবার সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়, গলার আওয়াজ পর্যন্ত যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তার। ওই মুহূর্তে আবার সেই চাবিটা তার পায়ের কাছে নড়ে উঠছে আর যেন মেঝেতে তার পায়ের কাছে কাঁপছে। সৌমিত্র একটুখানিকের জন্য চিৎকার করে উঠলো, কারণ তার ব্রেনে এইসব যেন একটার পরে একটা জ্যাম হয়ে গেছে। ঘরের লাইট পরে জ্বলে তো উঠলো, কিন্তু ছায়ামূর্তিটি চলে যাওয়ার পরে তার গায়ে আঁচড়ের দাগ দেখতে পায়, যেন নখের আঁচড়ের মতো। ......