আয়নার অপর পিঠে (পর্ব ৩ )

আজকে আপনাদের সাথে "আয়নার অপর পিঠে" গল্পটির তৃতীয় পর্ব রিভিউ দেব। সৌমিত্রর সাথে ওই রাতে অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পরে তার মনের ভিতর যেন একটা ভয়ঙ্কর ভয়ের মধ্যে আটকে গিয়েছিলো। তার কাছে এই আয়নাটা শুধু এক টুকরো কাঁচ আর মনে হয়নি-যেন কোনো এক রহস্যময় জানালা, যার অপারে লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত অজানা জগৎ। হয়তো কোনো আত্মা বা সৌমিত্ররই প্রতিরূপ কেউ। রাতটা কেটে যাওয়ার পরে সকালে উঠে সৌমিত্র আবারো যখন আয়নার দিকে তাকালো, তখন তার শরীর আবারো সেই ঠান্ডা শিরশিরে করে উঠলো। কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো। এমন একটা অনুভূতি তার মনের ভিতর উঁকি দিচ্ছে, যেন- আয়নার কাঁচ স্বচ্ছ আর পরিষ্কার থাকা সত্বেও তার ভিতরে কেউ যেন বসে অপেক্ষা করছে।

গত রাতে সৌমিত্র যখন শুনলো যে- "চাবি চাই..দরজা খুলে দাও..." এইরকম শব্দ তার কানে যেন পরেরদিন সকালেও গমগম করছিলো। সৌমিত্র প্রতিদিনকার মতো ফ্রেশ হয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলো এবং যেতে যেতে সে নিজেকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করলো যে-এইসব শুধুই কল্পনা, শুধু শুধু ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে মনের ভিতরে, যেটা নিছকই মনের একটা ভ্রান্ত ধারণা। ফলে সে এটাকে একটা দুঃস্বপ্নের প্রভাব মনে করলেও কোথাও যেন তার মনের ভিতর মানতে চাইছিলো না, সবকিছুই যেন একটা বাস্তবের মতো লাগতে লাগে। এছাড়া এ কথাটাও সে ভুলতে পারছিলো না, যেদিন তার দোকানের মালিকের কাছে শুনেছিলো এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলো।

সেই ঘটনা কি সত্যি? এই বিষয়টা বারবার তার মনের ভিতরে প্রশ্নবিদ্ধ করতে লাগে। আর যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তো সেই সময়কার খবরের কাগজে এটা নিয়ে লেখা থাকবে। ফলে সৌমিত্র চিন্তা করলো কলেজ শেষে সে কলেজ স্ট্রিটের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে যাবে, যেখানে বহু বছরের পুরোনো খবরের কাগজ আছে। সেখানকার লাইব্রেরিয়ান এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ১৮৮৫ দশক থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে যত খবরের কাগজ ছিল অর্থাৎ নিখোঁজের, সবগুলোই ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগে। অবশেষে ১৮৯১ সালের দিকে একটা নিখোঁজের সংবাদ দেখে, যেখানে এই মেয়ের আয়নার সামনের থেকে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে লেখা ছিল।

আর সেই ঘটনার পর থেকে এই আয়নার ব্যবহার সেখানে পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সংবাদ পুরো বিস্তারিত পড়ার পড়ে সৌমিত্রর মাথায় যেন কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছিলো, কারণ এই ঘটনা একদম সত্যি, কোনো কল্পনা নয় । এই আয়নাই সে বাড়িতে নিয়ে এসেছে, যা প্রায় ১৩০ বছরের পুরোনো একটা আয়না। এখন তার মনে প্রশ্ন এবং কৌতূহল দুটোই জাগে, যে এই আয়নাটার মধ্যে আসলে কি আছে? আর যে মেয়েটা নিখোঁজ হয়ে গেলো, সে ফিরে আসবে কিভাবে?....