শীতের সন্ধ্যায় ভাজাপোড়ার টানে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা,

মাঝে কদিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলাম। গিয়ে বুঝলাম সেখানে কলকাতার সাথে ঠান্ডার আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। আর ঠান্ডা হবেই নাই বা কেন? দিনে সূর্য্যের দেখা নেই বললেই চলে সাথে জোরে জোরে শৈত্য প্রবাহ। সারাদিন ধরেই ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বয়ে চলেছে। রাতে যে হাওয়ার গতি কমবে তার জো নেই। এমনকি হাওয়ার শোঁ শোঁ আওয়াজে রাতে বেশ কয়েকবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়ে গেছিলো। মাঝে তো মনে হচ্ছিলো রাতে হাওয়ার গতিবেগ আরো বেড়ে যায়। তা যাই হোক! ঠান্ডা নিয়ে আপনাদের বেশি বিরক্ত করা ঠিক হবে না কারণ কম বেশি ঠান্ডা সব জায়গাতেই পড়েছে। আসলে আজকের গল্পের মূল কান্ডারি ঠান্ডা নিজেই। বাড়ি গিয়ে ঠান্ডাতে কুপোকাত হয়ে চলে গেলাম গরমা গরম পেয়াজি ও চপের সানিধ্য পেতে।

PXL_20240105_175120912_copy_1209x907.jpg

আপনারা জানেন বাঙালির কাছে শীত মানেই ভাজাপোড়া খাওয়ার আদর্শ সময়। তবে সন্ধ্যের পর জল বরফের ন্যায় হয়ে যায় তাই নিজের হাত নামক জিনিসটিকে রেহাই দিতে এবং মা'কে বিশেষ অত্যাচার না করতেই বুদ্ধি করে দোকানে গিয়ে ভাজা পোড়া খেয়ে আসা ঠিক করলাম। আপনারা ভাববেন ভাজাপোড়া খেতে যাওয়ার জন্য এতো পরিকল্পনা কিসের। আগেই যে বললাম শৈত্য প্রবাহ এবং তার সাথে ভয়াবহ ঠান্ডা! আসলে সন্ধ্যা নামলেই যেমন বীভৎস হাড় হিম করা কনকনে ঠান্ডা তেমনি তার সাথে হু হু করে বয়ে যাওয়া শৈত্য প্রবাহ। সেই জন্য পরিকল্পনা করেও শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সাহস আর হয়নি। পরপর দুদিন পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর বুকে অল্প সাহস জমিয়ে কানে শক্ত করে মাফলার গুঁজে, উইন্ড কাটার জ্যাকেট পড়ে বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গী পাশের বাড়ির এক ভাই!

পাকা রাস্তায় পৌঁছতেই মাফলারের ফাক ফোকর দিয়ে হাওয়া ঢোকার চেষ্টা করা শুরু করলো। তখনও টের পাইনি আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। একপ্রকার হাওয়াকে উপেক্ষা করেই হাটতে থাকলাম। ওই দিকে গরমা গরম চপ আর মুচমুচে পিয়াজি অপেক্ষা করছে যে। রাস্তাতে উঠে অল্প অবাক হলাম। সবে ঘড়িতে ৫:৩০ বাজে, ঠিকমত সন্ধ্যে হয়নি অথচ রাস্তায় কোনো জন মানুষ নেই। যেন ভুতুড়ে গল্পের প্লট!! যদিও ভূত আসলেও সেদিন আমাকে আটকাতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে। ঠান্ডার মধ্যেই অল্প হাঁটা শুরু করতেই জ্যাকেটের ভেতরে গা হালকা গরম হয়ে গেলো।

PXL_20240105_173919192_copy_1209x907.jpg

রাস্তার পাশে মাঝে মধ্যে জন বসতি থাকায় কিছু সময় হাওয়া গায়েও লাগছিলো না তাছাড়া মাফলার জড়িয়ে ছিলাম সে জন্য হয়তো হাওয়া থেকে অনেকটা বাঁচোয়া ছিলো। শৈত্য প্রবাহের সঠিক হদিস পেলাম মাঝে যেখানে বসতি একদমই ছিলো না। যদিও তখন কাঙ্খিত সেই দোকানের কাছাকাছি পৌঁছেই গেছিলাম। জন বসতি পেরিয়ে যাওয়া মাত্রই ঠান্ডাতে বেশ জড়সড় হয়ে গেলাম। ঠান্ডার মধ্যেও দোকানে গুটি কয়েকের খদ্দের ভীড় জমিয়ে আছে। অনেকটা পথ হেটে এসেছি শুধুমাত্র চপ ও পেয়াজি খেলে হাঁটা সার্থক হতো না। শুরুটা তাই ঘুগনি দিয়ে করলাম।

PXL_20240105_175054018_copy_1209x907.jpg

PXL_20240105_175552624_copy_1209x907.jpg

উষ্ণ ঘুগনির প্লেট হাতে নিতেই যেন হাতে ফের রক্ত চলাচল শুরু করলো। অপেক্ষা না করে অল্প ঘুগনি মুখে দিয়ে দিলাম। আহা! পুরো অমৃত! দোকানে আড়ালে দাঁড়িয়ে জমে যাওয়ার আগেই গরমা গরম ডিমের ডেভিল ও আলুর চপ নিয়ে নিলাম।

PXL_20240105_181154183_copy_1209x907.jpg

PXL_20240105_181157412_copy_1209x907.jpg

নিমেষের মধ্যে ডিমের ডেভিল ও আলুর চপ সাবড়ে দিয়ে পেঁয়াজির অপেক্ষা শুরু হলো। কিছুক্ষনের অপেক্ষার পর গরম পেঁয়াজি হাতে পেলাম। গরম পেঁয়াজি ঝাল ঝাল রসুনের চাটনিতে চুবিয়ে টপাটপ মুখে পুরতে শুরু করলাম।




IMG_20220926_174120.png

Vote bangla.witness

Sort:  
 2 years ago 

বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের এখানেও বেশ ঠান্ডা পড়ছে,পাশাপাশি দিন এবং রাতে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। ঘুম ভাঙলেই যেন বাতাসের শব্দ কানে আসে। আসলে এটা শীতকাল বলে কথা। যাই হোক শীতের সন্ধ্যায় আমাদের এখানে বিভিন্ন প্রকার ভাজাপোড়ার আইটেম লক্ষ্য করা যায়, আর আমরা তা খাওয়ার জন্য আট দশ কিলো পথ অতিক্রম করে ও প্রিয় বাজার থেকে খেয়ে আসার চেষ্টা করি। বেশ ভালো লাগলো দাদা সুন্দর এই ব্লগটা।

 2 years ago 

সন্ধ্যাবেলা এমন ভাজাপোড়া একদম অমৃতের স্বাদ পূরণ করে দেয় দাদা। আমি যখন ইন্ডিয়াতে ছিলাম তখন খুব একটা ঠান্ডা ছিল না। তবে বাড়ি আসার দু-একদিনের মধ্যেই বেশ ভাল রকমের ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে শুনলাম। ইন্ডিয়াতে এবার প্রতিদিন সন্ধ্যায় মমো খেয়েছি। আঃ কি টেষ্ট! কোন কোন দিন আবার এগ রোল এবং ফুচকা ছিল। শীতের সন্ধ্যায় এই খাবার গুলোর তুলনা হয়না একদম।

 2 years ago 

শীতকালে এধরনের গরম গরম তেলে ভাজা খাবার গুলো খেতে সত্যি ভীষণ মজা লাগে। কিছুদিন আগে আমিও জমিয়ে খেয়েছিলাম। দাদা পেয়াজু খেতে আমার কাছে ও ভীষণ ভালো লাগে। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

দাদা আপনার বাড়ির দিকে তো তাহলে প্রচুর ঠান্ডা। এমন হাড় কাঁপানো শীতে তো বাসা থেকে বের হওয়াটা খুবই মুশকিল। যাইহোক সাহস করে তাহলে বের হয়ে গিয়েছিলেন ভাজাপোড়া খাওয়ার উদ্দেশ্যে। শীতকালে বিকেলে বা সন্ধ্যার নাস্তায় ভাজাপোড়া খাওয়ার মজাই আলাদা। গরম গরম পেঁয়াজু খেতে আসলেই দারুণ লাগে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো দাদা। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

দাদা, শীতের সন্ধ্যায় গরম গরম মুখরোচোক ভাজাপোড়া খেতে কিন্তু বেশ লাগে। আর আপনি যেভাবে একের পর এক ভাজা পোড়া গুলো খেয়ে সাবার করে ফেললেন, তাতে করে বোঝাই যাচ্ছে ভাজাপোড়া গুলো খেতে কতটা স্বাদ হয়েছিল। আমাদের এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। সেই সাথে রয়েছে ঘন কুয়াশা। তাই বাইরে বের হওয়া যেন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যাইহোক দাদা, শীতের সন্ধ্যায় ভাজাপোড়া খেয়ে খুব সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

সত্যি শহরের মাঝে থেকে শীতের কিছুই টের পাচ্ছি না, আর ঐদিকে শুভ ভাই বলেই যাচ্ছে শীতের ঠান্ডায় নাকি জমে যাচ্ছে, পার্থক্যটাই এখানেই। আমরা শহরের থেকে কিছুই টের পাই না আর গ্রামীন পরিবেশে থেকে তারা সূর্যের দেখাই পায় না হি হি হি। এটা ঠিক শীতের সন্ধ্যায় গমরা গরম ভাজা পোড়া কিছু না হলে জমেই না। আমি প্রায় খাই, তবে মাশরুমের চপটা একটু বেশী খাই। ধন্যবাদ

 2 years ago 

বাড়ি থেকে কলকাতা এলাম দিনের ট্রেনে তাই বুঝতে শহরের থেকে গ্রামের পার্থক্যটা আরো বেশি করে বোঝা গেলো।

মাশরুমের চপ পাওয়া গেলে ভালোই হতো! সেই রকম ভালো খেতে হয়।