ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চাটা দুধ পায় না। || Discrimination is everywhere.
টাইটেলটি পড়ে হয়তো আপনার হাসি পেতে পারে। যাইহোক কিছুটা সময় নিয়ে হাসুন। যদি আপনার হাসি শেষ হয়ে থাকে তাহলে আবারো পোস্টটি পড়া শুরু করুন।
দেখুন উপরে যা লিখেছি সেটা শতভাগ সত্য কথা, যদিও কথাটি একটু ভিন্নভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। চলুন একটু গুছিয়ে আলোচনা করা যাক।
একটি ছাগলের বেশ কয়েকটি বাচ্চা হয়েছে। দেখবেন দুটো বাচ্চা বেশ সবল আর একটি বাচ্চা জন্মগতভাবে বেশ দুর্বল। এবার সবল বাচ্চাগুলো বেশ দাম্ভিকতার সাথে মায়ের দুধ পান করে চলেছে। আর দুর্বল বাচ্চাটা যতবার দুধ খেতে কাছে যায় বার বার সবল দুটোর ঠেলাঠেলি আর লাথির চোটে সে আর দুধ খেতে পারে না। এভাবে চলতে থাকে বেশ কয়েকদিন, ছোট্ট দুর্বল বাচ্চাটা প্রায় মারা যায় যায় অবস্থা। এরপর হঠাৎ একদিন ছাগলের মালিকের নজরে পরলো দুর্বল বাচ্চাটা প্রায় মারা যাচ্ছে, তৎক্ষণাৎ তিনি কিছু দুধ আলাদা করে রেখে ছাগলটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে যান। আসলে মায়ের কোলে তৃপ্তি নিয়ে দুধ খাওয়া আর আলগা দুধ খাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আর মাঝে মাঝে মালিক ঐ ছোট্ট বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়াতে ভুলে যেতেন। যাইহোক কোনভাবে ছাগলের বাচ্চাটার হয়তো প্রান বেঁচে যায় কিন্তু সে দুর্বলতা নিয়েই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। একদিন মালিক ভীষণ আর্থিক সংকটে পরে গেলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ছাগল গুলোকে বিক্রি করে দেবেন। বাজারে নেয়ার পর দেখা গেল তিনটি বাচ্চার মধ্যে সবল দুটি বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেন, এক কষাইয়ের কাছে যিনি আগামীকাল তাদের জবাই করবেন। কিন্তু তিন নাম্বার বাচ্চাটা মালিক কোন ভাবেই বিক্রি করতে পারলেন না। কারন ওটার শরীরে মাংস নেই বললেই চলে। যাইহোক অবশেষে মালিক হাল ছেড়ে দিয়ে ওটাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হলেন। পরবর্তী বেশ কিছু বছর মালিকটি সেই দুর্বল তিন নাম্বার বাচ্চাটাকেই লালন পালন করেছেন। অথচ যেগুলো বেশি লাফালাফি করে দুধ খেয়েছে সেগুলো মানুষের পেটে চলে গেছে।
একটা পরিবারে তিন ছেলে। ছোট জন ভীষণ চালাক আর স্মার্ট, মেজো ছেলে মোটামুটি চালাক এবং বড় জন মাটির মানুষ। বড় জনকে কেউ কেউ গাধা বলে ডাকে, মেজো জনকে ত্যাড়া বলে ডাকে আর ছোট্ট জনকে বাবু বলে ডাকা হয়। তিনজন এক বাড়ির ছেলে হলেও বড় হতে থাকে ভিন্নভাবে। ধরুন বাড়িতে মাছ রান্না হলো মাঝের টুকরোটা সবসময়ই ছোট ছেলেকে দেয়া হয়, লেজটা খায় মেজো, আর বড়টার মাথায় বুদ্ধি নেই তাই মাথা তাকেই খেতে দেয়া হয় যেখানে মাছ মোটেও থাকে না। ঈদের কেনাকাটায় গিয়েছে তিনজন ছোটজন নিজের পছন্দের সব আগেই কেড়ে নিয়ে নিল, মেজো ঘাড় তেড়ামি করে তারটা নিয়ে নিল, অবশেষে বাবার পকেটে টাকা শেষ। বড়টা বাপের পছন্দের সস্তা জামাতে ভীষণ খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে এলো। আশ্চর্য জনক ব্যাপার বড় ছেলেটা ঐ সস্তা কাপড়টা পেয়েই মহা খুশি, কারন সে দেখেছে ছোট দুজন কিভাবে বাপের পকেট লুটে নিয়েছে।
যাইহোক ছোট আর মেজো ভালো স্কুল আর কলেজে পড়ে বেশ বিদ্বান হয়ে ওঠে। আর ওদিকে বড়টা কোন রকম টেনে টুনে মেট্রিক পাশ করলো। এদিকে ছোট দুটোর পড়াশোনার খরচ যোগাতে বাপের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, বাধ্য হয়ে সেই গাধা ছেলেটা সংসারের হাল ধরতে স্কুলে পিয়নের চাকরি নেয়। বাবা একদিন স্ট্রোক করে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পরে যায় আর মা ক্যান্সারে মারা যায়।
ছোট জন বিদেশে চাকরির সুযোগ পেয়ে বিদেশে চলে যায়, সেখানেই বিয়েথা করে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। মেজো পরিস্থিতি খারাপ বুঝে বিয়ে করে একটা ভালো চাকরি জুটিয়ে শহরের দিকে পাড়ি জমায়। আর ঐ গাধা ছেলেটা বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাতে যোগাতে তার ভিটেমাটি সহ সব হারায়। বাবা মারা যাওয়ার সময় শুধু বলে যায় তুই আমার বাপ, কারন তোকে আমি ভালোভাবে বড় করতে পারিনি। কিন্তু তুই আমাকে বড় মনের মানুষ কাকে বলে শিখিয়ে দিলি।
বৈষম্যকারী সবসময়ই ঘুমিয়ে থাকে মিথ্যে আর ছলনার নরম পরশে। হয়তো কোন একদিন চোখ খুলে দেখবে তার চারিপাশে ধেয়ে আসছে মুখোশধারী সুবিধাবাদী সেই শিয়াল কুকুর।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
প্রথম তিনটে লাইন পড়েই হাসলাম।আর পরবর্তীতে লেখাগুলো পড়লাম আর ভাবলাম কত সুন্দর করে বাস্তব জীবনটাকে গুছিয়ে লিখেছেন।হাজার হাজার মানুষের জীবনের গল্প আপনার আজকের লেখায় ঠাঁই পেয়েছে।আর এই বাস্তবতা নিজ চোখে দেখা।যে সন্তান অল্পতে সন্তুষ্ট থাকে আর সবসময় বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে সেই সন্তানই একমাত্র সম্বল হয়ে উঠে। আর যারা জোরপূর্বক সবকিছু আদায় করতে জানে তারা কখনো বাবা মা কে নিজের কাছে রাখে না। যাইহোক ভাইয়া,বাস্তব কিছু কথা তুলে ধরেছেন,খুব ভালো লাগলো পড়ে।
ধন্যবাদ আপনাকে, আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। সেই সাথে আপনি কিছুটা হাসতে পেরছেন জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। চেষ্টা করেছি বাস্তবতা কিছুটা ফুটিয়ে তুলতে, তবে বাস্তবতা আরো করুণ।
অনেক অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া লেখাটি পড়ে। চমৎকার ভাবে সত্যি কথা গুলো লিখে গেলেন।এ কথা গুলো যেনো আমাদের সমাজের ই চিত্র।আবার মনে হচ্ছে যেনো আমাদের চির পরিচিত আমাদের পারবারিক গল্প গুলোর একটি। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই খুব সুন্দরভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
চেষ্টা করেছি নিজের মতো গুছিয়ে লিখার।
বিভিন্ন ভাবে যুক্তি সহকারে বোজানোর চেষ্টা করেছেন। আপনার পোস্ট পরে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। আপনার এধরনের জেনারেল রাইটিং গুলো সব সময়ই শিক্ষনীয় হয়ে থাকে। এধরনের পোস্ট গুলো উপহার দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার পরিবারের জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ লিমন পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
সুবিধাভোগী একটা সময় আর আশেপাশে থাকে না।
ছাগলের উদাহরণ দিতে গিয়ে আপনি বর্তমান সমাজের একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন ভাই। আমি অবশ্য ভাবতেই পারিনি যে আপনার লেখাটা শেষে গিয়ে এরকম একটা মোড় নেবে। আমাদের সমাজে আসলে যারা শিক্ষিত তারাই বাবা-মায়ের দেখাশোনা করে না। অপরদিকে যারা একটু কম শিক্ষিত কিংবা গ্রাম অঞ্চলে থাকে তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে বাবা-মায়ের সেবা করার চেষ্টা করে। আপনি সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে একেবারে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, আমার পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। আমি চেষ্টা করেছি বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার।
এটা ঠিক ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা দুধ পায় না। কিন্তু এটাও আবার ঠিক তিনটা বাচ্চা হলে কোন সময় এর মধ্যে যেকোন একটা বাচ্চা দুধ পায় না সে বড় হতে পারে আবার ছোট হতে পারে। আপনি খুবই দারুণ লিখেছেন ভাই পরিবেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ এত চমৎকার ভাবে লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনার পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগে। আপনার প্রতিটি পোস্টে শেখার মতো অনেক কিছুই পাওয়া যায়। পরিবারের বড় ছেলেদের সব সময় বাবা-মায়ের হাল ধরতে হয়। এবং অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হয়। অবশেষে বাবা মায়ের দোয়াটাই সঙ্গী থাকে। আপনি ছাগলের সঙ্গে মিল রেখে অল্পতে সন্তুষ্টি থাকা ছেলেগুলোর জীবনের গল্প আপনার পোষ্টের মাঝে ফুটে উঠেছে। অসম্ভব ভালো লেগেছে আমার কাছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই, দারুণ একটি পোস্ট আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।