এটিএম বুথে জালিয়াতি। সতর্ক না হলে আপনিও বিপদে পরতে পারেন।

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)
এটিএম বুথে জালিয়াতি
সতর্ক না হলে আপনিও বিপদে পরতে পারেন

ছবিটি পিক্সাবে থেকে নিয়ে কেনভা দিয়ে তৈরি

শুভ রাত্রি আমার বাংলা ব্লগ পরিবার সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আমার আজকের আয়োজন। প্রথমে সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানাই। আজকে আমার ইচ্ছে ছিল একটি রেসিপি পোস্ট করার। কিন্তু হঠাৎ আজকের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মনে পড়াতে চিন্তা করলাম আপনাদের সেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা উচিত। তাই আজকে সবার জন্য একটি সচেতনতামূলক পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম।

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমি বিভিন্ন ব্যাংকের মেশিনারিজ নিয়ে কাজ করি। তার ভেতর এটিএম মেশিন অন্যতম। আমি কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংক এবং এটিএম বুথে ছুটাছুটি করি। ১ থেকে ১৪ তারিখ অবধি আমার কাজের চাপটা থাকে অনেক বেশি। কারণ হচ্ছে এটা স্যালারি পিরিয়ড। এখনকার সময়ে প্রতিটি কম্পানি তাদের কর্মচারীদের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। এর কারণটি হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন।
যাইহোক আমার আলোচ্য বিষয় সেটা না। সমস্যাটা হচ্ছে কর্মচারীরা যখন এটিএম বুথে তাদের কাঙ্খিত টাকা উত্তোলন করতে যায় তখনই বিভিন্ন জালিয়াতি এবং সমস্যার সম্মুখীন হয়। মূলত সেটা নিয়েই আমি কথা বলতে চাচ্ছি।

আজকের ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরি। একটি এটিএম বুথে আমি যখন কাজ করছিলাম। তখন শুনতে পেলাম একজন স্বল্প আয়ের গার্মেন্টস শ্রমিক তার বেতন তুলতে এসে পুরো টাকাটাই হারিয়েছেন। প্রথমে আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি, পরবর্তীতে যখন বিস্তারিত শুনলাম তখন আমি একদমই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। মূল বিষয়টা হচ্ছে একটি মেয়ে গার্মেন্টসে হেলপার হিসেবে চাকরি নিয়েছে সে এটিএম মেশিন অপারেটিং এবং টাকা উত্তোলন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা।

সেই মেয়েটি যখন টাকা উঠাতে আসে একটি লোক তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় এবং তার কাছ থেকে কার্ডটি নিয়ে এটিএম মেশিনে দেয়। এরপর লোকটি কৌশলে তার কাছ থেকে পিন নাম্বারটি জেনে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কার্ডটি এটিএম মেশিনে আটকে যায় এবং টাকা বের হয় না। ঠিক সাথে সাথেই সেই লোকটি ওই জায়গা থেকে সরে পড়ে। মূলত লোকটি খুব কৌশলে ওই মেয়েটির কার্ডটি হাতিয়ে নেয় এবং অন্য একটি নষ্ট কার্ড মেশিনে প্রবেশ করায়।
আপনারা হয়তো জানেন একটি এটিএম কার্ড ৩ বার ভুল পিন দিলে কার্ডটি মেশিন রেখে দেয়। সেই প্রতারক লোকটি খুব তাড়াতাড়ি আশেপাশের অন্য কোন এটিএম বুথে গিয়ে টাকাগুলো উঠিয়ে নেয়।

এরপর সেই মেয়েটির শুধুমাত্র কান্না করা ছাড়া আর কোন উপায় অবশিষ্ট থাকে না। তখন সেই এফটি ম্যানেজারের কাছে এসে পুরো বিষয়টি জানায়। এতক্ষণে আমি আমার কাজ সেরে যখন এফটি অফিসারের কাছে আসলাম তখন পুরো ঘটনাটা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। আমাদের বুঝতে আর বাকি রইল না মূল ঘটনাটা কি কি ঘটেছে। আমরা তখন মেয়েটিকে পুরো ঘটনাটা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তাকে বুঝিয়ে বলে এখন আর বিশেষ কোন লাভ হবে না।
এতক্ষণে সেই মেয়েটির চোখ বেয়ে অনবরত কান্না ঝরে পড়ছে। সত্যিই এটা একটা করুণ দৃশ্য কারণ সারা মাস চাকরি করে মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা স্যালারি পায় আর যদি সেই টাকাটাই কোন জালিয়া চুরি করে নিয়ে যায় তখন এর থেকে বড় কষ্টের আর কি থাকতে পারে আপনারাই বলুন?

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা যদি চোরকে ধরতে যাই সে ক্ষেত্রে অনেক গুলো ধাপ রয়েছে যেমন প্রথমেই অফিসে গিয়ে একটি কমপ্লেন লেখাতে হবে। এরপর ৩ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে যে এটিএম থেকে টাকা উঠানো হয়েছে সেখানকার ভিডিও সংগ্রহ করা হবে এবং সেই ভিডিওর প্রেক্ষিতে লোকটিকে সনাক্ত করা হবে। এরপর আইনের আশ্রয় নিয়ে টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করতে হবে। এখন আপনি একটু চিন্তা করুন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা যার ইনকাম সে কি আরো তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে চোরকে ধরতে যাবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেউ এই কাজটি করতে যায় না কারণ আমাদের দেশে আইনের প্রতি কারো শ্রদ্ধার কিংবা ভক্তি এবং বিশ্বাস কোনটাই নেই।

এখন এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে আমাদের সতর্কতা একমাত্র রক্ষা করতে পারে। আপনি কখনোই আপনার কার্ড কিংবা পিন নাম্বার কারো সাথে শেয়ার করবেন না। কখনো আপনার এটিএম কার্ডটি কারো হাতে দিবেন না। আপনি যদি কোন কারণে এটিএম মেশিন অপারেট করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে এফটি ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে শিখে নিবেন। তাছাড়াও এমনও ঘটনা দেখা গেছে যে স্বামীর কার্ড নিয়ে স্ত্রী সমস্ত টাকা বের করে নিয়ে গেছে। আবার ছোট ভাই বড় ভাইয়ের টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এর মানে বোঝা যাচ্ছে এ ধরনের ঘটনা ইদানিং অহরহ ঘটে চলেছে। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কখনোই কারো ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারো সাথে শেয়ার করবে না। এমনকি স্বামী স্ত্রী হলেও তার সাথেও একে অপরের তথ্য শেয়ার করবে না।

তবে আমাদের অবস্থান থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তা না হলে হয়তো আমরা আমাদের সঞ্চিত টাকা হারাতে পারি। আশা করি আমার আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা কিছুটা হলেও সজাগ হয়েছেন এবং নিজের এটিএম কার্ড এবং তথ্য সংরক্ষণে রাখবেন।
সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।



Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year (edited)

এটিএম বুথে জালিয়াতির কাজ গুলো দিন দিন বেড়ে চলছে। তার জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আপনি ঠিক বলছেন এখন সতর্ক না হলে আমরা বিপদে পরতে পারি। যেহেতু আমারও এটিএম মেশিনের সাথে কাজের সম্পর্ক আছে, তাই এ ধরনের ঘটনা আমার সামনে অনেক ঘটেছে। আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

 last year 

এটিএম বুথে জালিয়াতি হওয়ার কারন রয়েছে। যখন গার্মেন্ট শ্রমিকদের টাকা দেওয়া শুরু করে তখন এটিএম বুথে অনেক লোকের ভিড় হয়ে যায়। আর গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে গ্রাম থেকে উঠে আসা নতুন লোকজন থাকেন। এরা তো আসলে এটিএম বুথ সম্পর্কে জানে না। এর পরে সেখানে কিছু অসাধু লোকজন এর খপ্পরে পরে যায়। আপনার লেখাটি পড়ে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো। গরিব মানুষের টাকা মেরে যে এরা কি সুখ পায় আসলে আমি এটাই বুঝি না। সত্যি সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত। আপনার পোস্টটি আমাদের সকলের জন্য উপকার হলো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।

 last year 

ধন্যবাদ লিমন পোস্টটি পড়ে যথাযথ মন্তব্য করার জন্য। সত্যি বলতে আমাদের দেশটা চোর বাটপারের ছেয়ে গেছে। এখন আমাদের নিজেদের সতর্ক থেকে এদের মোকাবেলা করতে হবে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আপনার আজকের পোষ্ট টি পড়ে আসলে সেই অপারেটর এর জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছিলো। সে নিশ্চয়ই এই শহরে নতুন, নতুন চাকরি, তাই এই ভুল করেছে অচেনা মানুষ কে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় গার্মেন্টস ও ব্যাংক এর সমন্নিত কতৃপক্ষের সহোযোগিতায় নতুনদের সচেতন করতে পারে চাইলেই।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

পোস্টটি পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। আসলে গার্মেন্টস শ্রমিক দের বেতনের সময় হলে এটি এম বুথে অনেক লোকজন ভিড় থাকে। আর এই সময় টাকে কাজে লাগিয়ে ধান্দা বাজ লোক গুলো তাদের সয়তানি চিন্তা ভাবনা করে সরল সোজা লোকদের টাকা মেরে দেয়। আমি একটা জিনিস বুঝি না এরা টাকা মেরে দেওয়ার জন্য এই নিম্ন আয়ের মানুষ গুলোকেই কেন বেছে নেয়। আসলে আমাদের সবার সতর্ক থাকা উচিত। ধন্যবাদ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভালো থাকবেন।

 last year 

আসলেই অতি একটি দুঃখজনক ঘটনা।গার্মেন্টস এ হেলপারের জব যে কতটা কষ্টের যে করেছে কেবল সেই জানে।আর সেই টাকা যদি অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে যায় এখানে জন্য ছাড়া আর আসলেই কিছু অবশিষ্ট থাকেনা।আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া,কেবল মাত্র আমাদের নিজের সচেতনতাই আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।আর অবশ্যই আমাদের দেশের প্রতিটা মানুষ এরকম ঘটনার জন্যে আইনের সাহায্য নিত যদি আইনজীবী বিশ্বস্ত হতো।তাই মানুষ তাদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে।

 last year 

ঘটনাটা পড়ে বেশ কষ্ট লাগলো মেয়েটির এক মাসের বেতনের টাকাটা লোকটা প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নিল। তবে মেয়েটি যেহেতু এটিএম কার্ড নিয়েছে তাই এটিএম কার্ড সম্পর্কে তার বিস্তারিত জ্ঞান থাকা উচিত ছিল তবে তারপরেও এই ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী ব্যাংক থেকে যদি কোন ডিসিশন নেওয়া হতো তাহলে আমার মনে হয় সেটা বেশি ভালো হতো। কিন্তু ব্যাংক এখানে একটা শর্ত দিয়ে দিয়েছে পিন নাম্বার কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না সে ক্ষেত্রে আবার মেয়েটার ভুল বলা চলে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ভাই।এটা আমার অজানা ছিল আপনার উছিলায় জানতে পারলাম আপনাকে অনেক ধধন্যবাদ সুন্দর ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

ভাই মেইন কথা কি জানেন ৷বর্তমান মানুষকে বিস্বাস করা মুশকিল ৷ কারন কিছু কিছু মানুষ মানুষ নয় ৷ পশুর মতো এদের বিবেক মূল্যবোধ মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই ৷
যা হোক সেই মেয়েটার জন্য আপসোস হচ্ছে ৷সারা টা মাস কাজ করে তারপর টাকা ইনকাম ৷ সেটা যে কতটা কষ্ট সেটা বুঝি ৷ এমন ঘটনায় যেন আর কেউ না পরে ৷
আর দিনশেষে এটা ঠিক বলেছেন ৷

আমাদের দেশে আইনের প্রতি কারো শ্রদ্ধার কিংবা ভক্তি এবং বিশ্বাস কোনটাই নেই।