একদিন বাউলা বাতাসে উড়েছিলাম ; জীবন থেকে

in Steem Bangladesh4 years ago (edited)

rretr.jpg
একদিন বাউলা বাতাসে উড়েছিলাম ; জীবন থেকে
তখন আমার বয়স আনুমানিক ৫ /৬।আমাদের গ্রামেই বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তর কৃষি ফার্ম।পুরো নাম বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন,মধুপুর। এখানে কৃষিজ বিভিন্ন ধরনের বীজ উৎপাদন করা হয় এরমধ্যে ধান,গম,ভূট্টা উল্লেখযোগ্য। সময়টা ছিল ভুট্টার মৌসুম।ভূট্টা পেকে
গেছে।গ্রামের কারো মাধ্যমে খবর পেলাম আজ ফার্মে ভূট্টা তুলবে।দেখা যেত ফার্ম কতৃপক্ষ ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলে নেয়ার পর অবশিষ্ট কিছু ভূট্টা থাকতো যা ছিল বীজের অনুপযোগী। তাই তারা এই ভূট্টা জমিতেই রেখে দিত।যা এখনো রাখে।আমাদের গ্রামের অনেকেই এই অনুপযোগী ভূট্টাগুলো কুড়িয়ে নিত।।আমিও সেদিন আসলাম ভূট্টা কুড়ানোর জন্য। ক্ষেতের এক কোণে অনেকেই বসে আছি।ফার্ম কতৃপক্ষ ভূট্টা তুলে নিলেই আমরা সবাই ভূট্টা কুড়াতে শুরু করবো। ভূট্টা গাছ বা শাখা অনেকটাই আঁখ বা ইক্ষু বা আঞ্চলিক নাম কুশাইলের মত
লাগে।আমি দেখলাম অনেক ছেলেমেয়ে এমনকি কিছু বয়স্ক লোকও এইগুলো অন্যক্ষেত যেগুলো থেকে ভূট্টা তোলা হয়ে গেছে সেই ক্ষেত থেকে ওই গাছ ভেঙে এনে আখের মত খাচ্ছে।
আমারো খেতে ইচ্ছা করলো কিন্তু কে তুলে দিবে?আমি ছোট মানুষ ।এত শক্ত গাছগুলো ভাঙা আমার জন্য কষ্টকর কিন্তু খেতে তো হবে! জিব্বাহ কি আর মানে?আমি নিজেই ভুট্টার শাখা ভাঙার জন্য গেলাম। ভাঙতে পারছি না তবে চেষ্টা করতেছি।প্রখর রোদ আর ভীষন বাতাস।বাউলা বাতাস। ঘূর্ণিপাক শুরু হয়েছে।আমি পড়ে গেছি ঘূর্ণিপাকে।ঘুর্ণিপাক আমাকে উপরের দিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ভূমি থেকে প্রায় এক মিটার উপরে উঠে
গেছি।যা নজরে পড়লো সবার কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলো না।কিন্তু সবাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছে।এমন সময় আমার এক ফুফু দৌড়ে এসে আমার পায়ে টেনে ধরলো।আমি মাটিতে
পড়ে গেলাম।ফুফু আমাকে আবার সেই জমির কোণে নিয়ে বসিয়ে দিল ।আর বকাবকি শুরু করলো যা ইচ্ছা তাই বলে।এরপর ফুফু আমাকে বসিয়ে রেখে ভূট্টার গাছ ভেঙে এনে দিল আমি খেলাম।তবে সেদিন আর ভূট্টা কুড়াতে হয়নি খুব সম্ভবত ফুফুই আমাকে কুড়িয়ে এনে দিয়েছিল।
ফুফুটি আমার আজো বেঁচে আছেন।গ্রামে গেলেই দেখা হয়।কথা হয়।আমি জানি না ওইদিন ফুফু না থাকলে কি হত! উড়ে যেতাম কি বাতাসের সাথে নাকি ফেলে যেত?তবে আজো আমি আছি।সেদিনের অনুভূতি কেমন ছিল মনে নেই। তবে বাউলা বাতাসে যে উড়েছিলাম এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে।আর সবার কাছে এই ফুফুর জন্য দোয়া চাইলাম।