ছোট গল্প: ছায়ার ডাক।
🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001।
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসি......
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি সপ্তাহে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট শেয়ার করার চেষ্টা করি সেই ধারাবাহিকতায় আজ একটি ছোট গল্প লিখে শেয়ার করব। আশাকরি আমার লেখা পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
Source
রাত তখন সাড়ে বারোটা। শহরের এক প্রান্তে পুরনো একটি বাড়ি “শান্তিনিকেতন”। বহু বছর ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। মানুষের মুখে মুখে গল্প ওই বাড়িতে নাকি রাত নামলেই কেউ বা কিছু হাঁটে।অয়ন ছিল একজন ফটোগ্রাফার। তার শখ অদ্ভুত ও রহস্যময় জায়গার ছবি তোলা। লোকমুখে শোনা গল্পে আগ্রহী হয়ে সে এক রাতে একাই পৌঁছাল শান্তিনিকেতনে। হাতে টর্চ, ক্যামেরা, আর কাঁপা কাঁপা আত্মবিশ্বাস।বাড়ির ভেতরে ঢোকার পরেই অয়নের মনে হলো যেন কেউ তার পেছনে নিঃশব্দে হাঁটছে। সে পেছন ফিরে তাকাল কেউ নেই। ছাদ থেকে টুপ করে পড়ল একটা পুরনো ফটোফ্রেম। তুলতেই দেখে ছবিটাতে একজন নারী চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা।হঠাৎ ক্যামেরার ফ্ল্যাশ নিজে থেকেই চলতে লাগল। অয়নের চোখে পড়ল দরজার ফাঁক দিয়ে এক ছায়ামূর্তি তাকিয়ে আছে তার দিকে। কণ্ঠে নারীর চাপা গলা “ফিরে যা এখানে কেউ ঘুমায় না”অয়নের শরীর জমে গেল। সে ছুটে বেরোতে গিয়ে দেখে দরজা আটকে গেছে। হঠাৎ চারদিকে নিস্তব্ধতা ভেঙে উঠল শিশুর কান্না, সেইসঙ্গে নারীর দীর্ঘশ্বাস।ঘড়ির কাঁটা থেমে গেল সাড়ে বারোটায়। যেই মুহূর্তে সে দরজা খুলে পালাতে পারল, বাইরের আলোতে ফিরে এসে দেখে তার ক্যামেরায় শেষ তোলা ছবিটা তার নিজের, কিন্তু পেছনে সেই নারীটা দাঁড়িয়ে হাসছে।
অয়ন প্রাণপণে বাড়ি ফিরে এল, শরীর ঘামে ভেজা, নিঃশ্বাস অস্থির। কিন্তু মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সেই ছবি নিজের পেছনে দাঁড়ানো সেই নারীর হাসিমাখা মুখ।পরদিন সকালে সে ছবিটা ভালো করে দেখল। আশ্চর্যের ব্যাপার, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাড়ির একটা ঘরের ভেতর ঝুলছে একটা কুয়ো অথচ সে জানে, বাড়ির ভেতরে এমন কিছু ছিল না।জেদ চাপল অয়নের মাথায়। সে ঠিক করল, আবার যাবে শান্তিনিকেতনে। তবে এবার একা নয় বন্ধু নিলো দুইজন, রানা আর তৃষা। রানা ছিল সাহসী, তৃষা একজন ভূততত্ত্বে আগ্রহী ছাত্র। তারা তিনজন মিলে গেল সেই বাড়িতে দুপুরবেলা।ঘরে ঢুকতেই তৃষা বলল,“এখানে একটা অদ্ভুত কম্পন আছে যেন জমে থাকা অতীত ঘুমোচ্ছে।”তারা ছবির কুয়োর মতো জায়গাটা খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছাল নিচতলার এক গোপন ঘরে। ঘরের মেঝে সরাতেই পাওয়া গেল একটা লোহার ঢাকনা খুলতেই বেরিয়ে এলো সেই পুরনো কুয়ো।তৃষা নিচু হয়ে দেখল, কুয়োর ভেতর কুয়াশার মতো ধোঁয়া উঠছে। ঠিক তখনই একটা ঠান্ডা বাতাস ঘরজুড়ে ছুটে এলো। দরজাটা আবার বন্ধ হয়ে গেল। এইবার তিনজনই বোঝে তাদের কেউ ছাড়বে না এত সহজে।হঠাৎ এক নারীকণ্ঠ কেঁদে উঠল“আমার কবর এখানে আমাকে খুঁজে পাও মুক্তি দাও”অয়নের হাতে থাকা ক্যামেরা নিজে থেকেই ভিডিও রেকর্ড করতে শুরু করল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটি দৃশ্য, যেখানে একজন নারীকে জোর করে ঠেলে ফেলা হচ্ছে কুয়োর মধ্যে আর আশেপাশে কয়েকজন পুরুষ হাসছে।তৃষা ধীরে ধীরে বলে উঠল,“ওকে হত্যা করা হয়েছিল এখন ও চায় সত্য প্রকাশ হোক কবরটা খুঁজে বার করতে হবে।”ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরের দেয়ালে একটা লেখা ভেসে উঠল দেওয়ালের পেছনে। তারা দেয়ালের পলেস্তারা ভেঙে পাথরের নিচে পেল একটা কঙ্কাল, আর এক পুরনো দিনলিপি।দিনলিপিতে লেখা ছিল সেই নারীর কাহিনি এক জমিদার তাকে ভালোবাসার ভান করে ঠকিয়েছিল, গর্ভবতী হলে লোকচক্ষুর আড়ালে তাকে হত্যা করায়।তারা তিনজন পুলিশের কাছে গিয়ে সব প্রমাণ জমা দিল। অবশেষে সেই বাড়ির ভেতর থেকে মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় এবং যথাযথ দাহকার্য করা হয়।রাতের আকাশে তখন পূর্ণিমার চাঁদ। শান্তিনিকেতন বাড়ির ভেতরে সেই কুয়োটা যেন নিঃশব্দে বলে উঠল "ধন্যবাদ"আর তারপর অয়ন বুঝল সব ছবি শুধু স্মৃতি ধরে রাখে না, কিছু ছবি ইতিহাসের ন্যায়বিচারও আনে।
পোস্টের বিষয় | ছোট গল্প |
---|---|
পোস্টকারী | তানহা তানজিল তরসা |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১১ |
লোকেশন | পাবনা |
https://x.com/TanhaT8250/status/1912142810654056823?t=HEK4wh7MGq7eQ_VsCzNaJw&s=19
https://x.com/TanhaT8250/status/1912142553186722127?t=sqM4Kf0Pxq3IXQdYEGtbZg&s=19
https://coinmarketcap.com/community/post/357312342