ছোট গল্প : “হেরে যাওয়া এক জয়ের গল্প”

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু /আদাব

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001


আজ ১৪ জুলাই রোজ সোমবার ২০২৫ ইং:।

বাংলায় ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী.........

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি পরিবার নিয়ে। আপনারা নিশ্চয়ই ভালো আছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।প্রতিদিনের মতো আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ আমি একটি ছোটগল্প পোস্ট শেয়ার করব।আশা করছি আমার লেখা ছোট গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

sadness-2667464_1280.jpg

Source

একটা ছোট শহরের পুরনো একটা ভাঙাচোরা বাসায় একদিন সন্ধ্যায় জানালার পাশে বসে ছিল অনিরুদ্ধ। বয়স ত্রিশ ছুঁইছুঁই, চোখে ক্লান্তি, মুখে নিরবতা। সারাদিন কাজ খুঁজে বেড়িয়ে ক্লান্ত দেহটা টেনে সে জানালার ধারে বসেছিল। বাইরের আকাশটাও যেন তার মনের মতোই ধূসর, উদাসীন।অনিরুদ্ধ এক সময় বড় স্বপ্ন দেখত। ঢাকা শহরে পড়াশোনা করত, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বাসনা নিয়ে। বাবা-মা গরিব ছিলেন, তবুও ছেলের স্বপ্নের পাশে ছায়ার মতো ছিলেন। কিন্তু বাস্তব বড় নির্মম। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বাবা মারা গেলেন। সংসারের ভার, ছোট দুই বোনের ভবিষ্যৎ, আর মায়ের অসুস্থতা সব একসাথে অনিরুদ্ধকে পিষে দিলো।সে নিজের স্বপ্নটা আড়ালে রেখে কাজে নামল। কখনো রাজমিস্ত্রির হেলপার, কখনো দোকানের ক্যাশিয়ার, কখনো আবার ট্রাকের হেল্পার একটা সাদা কলার পরার স্বপ্ন থেকে অনেক নিচে নেমে এল সে। দিনে দিনে যেন নিজের ভেতরের আলোটা ম্লান হয়ে গেল। বন্ধুরা চাকরি পেল, বিদেশ গেল, ফেসবুকে পোস্ট দিল আর সে শুধু “লাইক” দিয়েই রইল।আজ সন্ধ্যায় তার মনে হলো,"জীবন যাত্রার পথে আমি হেরে গেছি…"কিন্তু ঠিক তখনই ছোট বোনটা এসে পাশে বসল। হাতে এক কাপ চা, মুখে ছোট্ট হাসি, বলল দাদা তুমি না থাকলে আমি তো পড়াশোনাই ছেড়ে দিতাম। কাল কিন্তু আমার রেজাল্ট তুমি কিন্তু আসবে কথা দিছো।

অনিরুদ্ধ তাকিয়ে রইল বোনটার মুখে। সেই চোখে সে নিজের একটা ছায়া দেখতে পেল যে ছায়া একদিন স্বপ্ন দেখত। তার মনে হলো সে নিজে হয়তো হেরে গেছে, কিন্তু তার লড়াই কারো না কারো জয়ের কারণ হয়েছে।সে বুঝতে পারল জীবনে সব জয় সার্টিফিকেটে লেখা থাকে না। কিছু জয় নীরবে ঘটে মায়ের মুখের হাসিতে, বোনের স্কুল ড্রেসে, বা নিঃশব্দ একটা চায়ের কাপে।সে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,হ্যাঁ আমি হেরে গেছি তোমার জন্য, তোমাদের জন্য। কিন্তু এই হারা আমি গর্ব করে বয়ে বেড়াবো সারাজীবন।এই হেরে যাওয়াটাই অনিরুদ্ধের আসল জয়। জীবন সব সময় বড় কিছু অর্জনের নাম নয় বরং অন্যের জন্য ছোট ছোট ত্যাগগুলোই এক এক করে আমাদের জীবনকে মহৎ করে তোলে।


পোস্টের বিষয়ছোট গল্প
পোস্টকারীতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ১১
লোকেশনকালীগঞ্জ
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।


১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে,রান্না করতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


Logo.png

Banner.png

20250619_102129.jpg

Sort:  
 5 days ago 

গল্পটিতে অনিরুদ্ধের সংগ্রাম, স্বপ্নভঙ্গ ও আত্মত্যাগের মর্মস্পর্শী চিত্র ফুটে উঠেছে। তার ক্লান্তি, হতাশা এবং শেষ পর্যন্ত আত্মোপলব্ধির মুহূর্তগুলো খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।লেখার ভাষা খুবই প্রাঞ্জল এবং আবেগধর্মী। বিশেষ করে "জীবনে সব জয় সার্টিফিকেটে লেখা থাকে না" বা "নিঃশব্দ একটা চায়ের কাপে"—এর মতো লাইনগুলো গল্পের মূলভাবকে শক্তিশালী করেছে। সর্বোপরি ধন্যবাদ আপু আপনাকে

 5 days ago 

আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাই।