ছোট গল্প: নিঃশব্দ প্রহর।

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু /আদাব

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001


আজ ২৯ জুলাই রোজ মঙ্গলবার ২০২৫ ইং:।

বাংলায় ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

হ্যালো বন্ধুরা........

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি পরিবার পরিজনদের কে নিয়ে আশা করি আপনারা আপনাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক ভাল আছেন। প্রতিদিনের মতো আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি ছোট গল্প পোস্ট শেয়ার করব। আশা করি আমার লেখা পোস্টটি পড়ে আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক আজকের নতুন ব্লাগটি।

hands-3456365_1280.jpg

Sources

একটি ছোট শহরের উপকণ্ঠে কাঞ্চনপুর নামের শান্ত একটি পাড়া। সেখানে একটি পুরোনো দোতলা বাড়ির জানালার পর্দা নড়ে ওঠে প্রতিদিন ভোরে, আর উঠে পড়ে একজন নারী তার নাম আরিশা।বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, চোখে অব্যক্ত এক শূন্যতা, মুখে চাপা এক ক্লান্তি, আর হৃদয়ে যেন গেঁথে থাকা হাজারটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার বাসনা।আরিশার স্বামী তামিম এক সময়ের স্বপ্নবাজ একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। প্রেম করে বিয়ে আর স্বপ্ন ছিল ছোট্ট একটি গ্যালারি খুলে দুজন মিলে জীবন সাজাবে। কিন্তু সময়ের স্রোতে তামিম এখন ঢাকার এক কোম্পানিতে চাকরি করে, মাসে একবার আসে। সংসারের চাকা ঘোরানোর দায়টা প্রায় পুরোপুরি এখন আরিশার কাঁধেই।তাদের একমাত্র ছেলে রায়ান মাত্র ছয় বছরের। স্কুলে যায় ছবি আঁকে আর মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে নিরাপত্তা খোঁজে।এই ছেলেটির জন্যই আরিশা প্রতিদিন ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে নতুন এক যুদ্ধ শুরু করে।সকালবেলা পিঠা বানিয়ে স্কুলে পাঠানো, বাজার করা, বাসন মাজা, ছোটখাটো টিউশনি, আবার রাতে রায়ানের পড়া দেখানো এসবের মাঝেই কোথাও সে নিজেকে খুঁজে ফেরে।প্রতিদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর, আরিশা তার পুরোনো খাতাটা খুলে বসে। সেই খাতায় সে গল্প লেখে।তবে কেউ জানে না।এই তার একান্ত পৃথিবী, যেখানে সে নিজের জীবনের না বলা কথাগুলো লিখে যায়।

একটি সন্ধ্যা, নতুন মোড় এক সন্ধ্যায় হঠাৎ রায়ান জ্বর নিয়ে পড়ে। ডাক্তার জানায় ভাইরাল ইনফেকশন।তিন দিন আরিশা ঘুমায় না।রাত জেগে মাথায় পানি দেওয়া, ওষুধ খাওয়ানো, ভোরে বাজার করা সব কাজ একা।তিনদিন পর যখন রায়ানের জ্বর কমে, তখন এক বুক হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে।কিন্তু শরীরটা আরিশার ভেঙে পড়ে।এই সময়েই পাড়ার এক মহিলা রুমানা আপা, যিনি স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিশার হাতে একখানা চিঠি ধরিয়ে দেন।চিঠিতে লেখা আপনার গল্পগুলো আমরা পড়েছি। আমাদের স্কুল ম্যাগাজিনে আপনি নিয়মিত লিখবেন কি?আরিশা চমকে যায়।ওই মহিলা একদিন হঠাৎ তার লেখা পড়ে ফেলেছিলেন ভুল করে, আর এরপর নিয়মিত খুঁজতে থাকেন তার লেখাগুলো।সেই থেকে শুরু আরিশার নতুন জীবন।স্কুল ম্যাগাজিন থেকে পত্রিকা, পত্রিকা থেকে অনলাইন ব্লগ, আর তারপর একদিন ঢাকার এক বড় প্রকাশনা সংস্থা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।আপনার গল্পগুলো একত্রিত করে আমরা বই প্রকাশ করতে চাই বললেন প্রকাশক।আরিশার চোখ ভিজে আসে।সে ভাবে এই কি তবে স্বপ্নের শুরু?তামিম তখনো ঢাকায়। কিন্তু এবার সে আর কোনো আপত্তি করে না। স্ত্রীর কাঁধে যে আলোর ঝিলিক দেখছে, তা উপেক্ষা করা যায় না। নিঃশব্দ থেকে আলোর দিকে পৌঁছে গেছে। বইয়ের নাম হয়“নিঃশব্দ প্রহর”।বইমেলায় হাজারো পাঠকের ভালোবাসা পায় সেই বই।আরিশা এখন লেখিকা।তবে তার পরিচয় শুধু পেশায় নয় সে একজন মা, একজন যোদ্ধা, আর একজন জীবন্ত অনুপ্রেরণা।পাড়ার মেয়েরা এখন তাকে দেখে বলে আপু আপনি পারলেন…আমরা কেন পারব না?আরিশা তখন হাসে। চোখের কোনে এক বিন্দু জল, আর ঠোঁটে এক আলোকময় আশ্বাস “সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। কিছু কিছু সময় শুরু হয় নিঃশব্দে, ঠিক তখনই জীবন নিজের গান গাওয়া শুরু করে।”এই গল্পটা কেবল একজন আরিশার নয় এটা প্রতিটি সেই নারীর যিনি নীরবে যুদ্ধ করেন এবং নিজের নিঃশব্দ প্রহরকে আলোতে রূপান্তর করেন।


পোস্টের বিষয়ছোট গল্প
পোস্টকারীতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ১১
লোকেশনকালিগঞ্জ
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর লেখার অমিল ও ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেবেন।


১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে,রান্না করতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


Logo.png

Banner.png

20250324_093422.jpg

20250324_093321.jpg

Sort:  
 2 days ago 

এই গল্পটি এক নিঃশব্দ সংগ্রামের, এক মায়ের অব্যক্ত যন্ত্রণার, স্বপ্নভাঙা বাস্তবতার মাঝেও নতুন করে বাঁচার গল্প। আরিশা যেন প্রতিটি সেই নারীর প্রতিচ্ছবি, যারা জীবনের প্রতিকূলতার মাঝেও ভেঙে না পড়ে, বরং নিজের ভেতরের আলোকে খুঁজে নেন নিজস্ব এক পথ।

 2 days ago 

আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।