ছোট গল্প: পরিবর্তনের অগ্রযাত্রা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু /আদাব

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001


আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার ২০২৫ ইং:।

বাংলায় ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।

হ্যালো বন্ধুরা .........

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।প্রতিদিনের মতো আজ একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে। আমি সপ্তাহে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট শেয়ার করার চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ একটি ছোট গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব।আশা করি আমার শেয়ার করা ছোট গল্পটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

boy-4801688_1280.jpg

Source
একটি ছোট গ্রামে এক বাচ্চা ছেলে ছিল, নাম তার সোহেল। সোহেল ছিল খুব চঞ্চল এবং উদ্যমী, কিন্তু একটুখানি স্বপ্ন ছিল তার সে একদিন বড় মানুষ হবে। তার ইচ্ছা ছিল গ্রামটা উন্নত করে দিবে, মানুষের সাহায্য করবে এবং সবার মুখে হাসি ফুটাবে।একদিন গ্রামের পুরনো স্কুলে এক নতুন শিক্ষক এলেন। শিক্ষক ছিলেন অনেক অভিজ্ঞ, তার নাম ছিল মি. রাহিম। তিনি সোহেলের মধ্যে বিশেষ কিছু দেখলেন। সোহেল যে শুধু ভালো ছাত্র নয় তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণও ছিল। তিনি সোহেলকে একদিন বললেন, "তুমি তোমার গ্রামের জন্য কিছু করতে পারো, সোহেল। তোমার মধ্যে শক্তি আছে।"সোহেল খুব খুশি হলো। তার মনে হয়েছিল এই সুযোগ যদি সে না নেয় তবে কখনোই আর পাবেনা। সোহেল তার বন্ধুরা এবং শিক্ষক মি. রাহিমের সাহায্যে গ্রামে একটি স্কুলের উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করলো। নতুন বই ক্লাসরুমে নতুন আসবাবপত্র এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নানা উৎসবের আয়োজন হলো।গ্রামবাসীরা প্রথমে অবাক হয়ে দেখেছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা বুঝতে পারলো সোহেল কতটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে পেরেছে। সোহেলের নেতৃত্বে গ্রামের অনেক মানুষ একত্রিত হলো এবং তারা একসাথে কাজ করতে লাগলো।সোহেল তার স্বপ্ন পূর্ণ করেছিল। সে জানতো, একজন মানুষের ছোট ছোট কাজেও বিশাল পরিবর্তন আনা সম্ভব। তবে সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল সত্যিকারের নেতৃত্ব হলো অন্যদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উন্নতিতে সাহায্য করা।

একদিন সোহেল তার শিক্ষক মি. রাহিমকে বলল, স্যার আমার মনে হয় আমি যদি আর একটু বেশি সহায়তা করতে পারি তাহলে গ্রামটা আরো সুন্দর হতে পারে। আমার আরেকটা পরিকল্পনা আছে, কিন্তু আমি জানি না কীভাবে শুরু করবো।মি. রাহিম তাকে উৎসাহিত করলেন, সাহসী হও সোহেল। তুমি যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকো এবং সঠিক পথে চলো তাহলে তুমি যা চাও তা অবশ্যই সম্ভব।সোহেল ভাবলো সে যদি শুধু শিক্ষার উপর মনোযোগ দেয়, তবে গ্রামের অনেক শিশু এবং যুবকরা পড়াশোনা এবং চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাবে। তাই সে নতুন একটি প্রকল্প শুরু করলো যেখানে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের শিশুরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে। সে নিজে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে ক্লাস চালু করলো এবং গ্রামের স্কুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলো।এক বছরের মধ্যে সোহেলের উদ্যোগে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে উন্নত মানের শিক্ষা অর্জন করতে শুরু করলো। কিছু ছেলে-মেয়ে সোহেলের সাহায্যে কম্পিউটারের উপর দক্ষতা অর্জন করলো, আর কিছু মেয়ে গ্রামেই বিভিন্ন হাতে-কলমে কাজ শিখে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠলো।গ্রামের মানুষও সোহেলের উদ্যোগের প্রতি সাড়া দিলো এবং তারা সবার জন্য একটি ছোট পুঁজি সংগ্রহ করলো যাতে গ্রামের উন্নয়নের জন্য আরও কাজ করা যায়। সোহেল নিজে দিনরাত কাজ করতো, কিন্তু কখনোই ক্লান্ত হত না। তার লক্ষ্য ছিল, সবার জীবনযাত্রা পরিবর্তন করা।কিছুদিন পরে, সোহেল গ্রামে একটি ছোট কিন্তু শক্তিশালী কো-অপারেটিভ সংস্থা শুরু করলো, যেখানে সবাই মিলেমিশে কাজ করতো। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শস্য বিক্রি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজার পেত, এবং গ্রামের ছোট দোকানদাররা একসাথে মিলিত হয়ে তাদের ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য পেল গ্রামের মানুষ মনে করলো সোহেল তো একেবারে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। তার কারণে গ্রামটি সত্যিই বদলে গেছে। সোহেলের উদ্যম, তার নেতৃত্ব এবং তার পরিশ্রমের কারণে একটি ছোট গ্রাম, যা একসময় পিছিয়ে ছিল, এখন সারা অঞ্চলে একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়াল।সোহেল বুঝতে পারলো, সত্যিকারের সুখ হলো অন্যদের সেবা করতে, তাদের জন্য কিছু করা। তাকে আর শুধু বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হতো না তার কাজ এবং উদ্যমই তাকে বড় করে তুলেছিল।এভাবেই সোহেলের উদ্যোগ আর পরিশ্রমের কারণে একদিন তার ছোট গ্রাম হয়ে উঠলো একটি উন্নত, সুখী এবং উদাহরণস্বরূপ স্থান।


গল্পের মূলভাবঃ একজন ব্যক্তির চেষ্টায় এবং দৃঢ় মনোভাবের মাধ্যমে সমাজে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। সোহেল তার ছোট গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে নিজের ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে নানা উদ্যোগ নেয়। তার উদাহরণ দেখিয়ে আমরা শিখতে পারি যে, নেতৃত্বের প্রকৃত মানে হলো অন্যদের সহায়তা করা এবং একসাথে কাজ করে সমাজে পরিবর্তন আনা। সত্যিকারের সাফল্য হলো শুধু নিজের উন্নতি নয়, বরং অন্যদের জন্য কিছু করা।


পোস্টের বিষয়ছোট গল্প
পোস্টকারীতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ১১
লোকেশনপাবনা
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।


১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে,রান্না করতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


Logo.png

Banner.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo11x8ittnXZjCxVzeXe6EcY2LhnYATvoVg9pQWkha9i6dGRh5MNMnu17RgRnajr7iRuLnFnKojVVLT2Uc6.png

Sort:  
 2 months ago 

1740627621360.png

 2 months ago 

আপনার শেয়ার করা আজকের এই ছোট গল্পটা অনেক সুন্দর ছিল। সোহেল খুবই সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছে। আর সুন্দর ভাবে নিজের স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরেছে। আসলে ছোট ছোট লক্ষ্য গুলোর থেকে আমরা বড় কিছু করতে পারি। যেমন সোহেল ছোট লক্ষ্য থেকে বড় পর্যায়ে আসতে পারছে। এরকম উদ্যোগ গুলো সত্যি খুবই ভালো।

 2 months ago 

আমার লেখা ছোট গল্প পড়ে ভালো লাগার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

 2 months ago 

যখন আমরা আমাদের জীবনে ছোট লক্ষ্য গুলো পূরণ করতে পারবো এবং ছোট লক্ষ্য গুলো থেকে আমরা শিক্ষা অর্জন করতে পারব সেই থেকেই আমরা ভালো কিছু অর্জন করার লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো৷ তখন আমরা বড় কোন লক্ষ্য অর্জন করতে যেন আমাদের কাছে একেবারে সহজ মনে হবে৷ আজকে সোহেলের এই ছোট লক্ষ্য অর্জন করার মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি ছোট গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷

 2 months ago 

আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যাক্ত করে পাশে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 months ago 

সোহেলের এমন উদ্যোগ সত্যিই বেশ প্রশংসনীয়। আসলে আমরা অনেক সময় চাইলে অনেক কিছু করতে পারি। কিন্তু আমরা সারাক্ষণ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। তাই অন্যের সেবা করতে পারি না। কিন্তু সোহেলের চিন্তা ভাবনা এককথায় দুর্দান্ত ছিলো। তাই সে গ্রামটাকে উন্নত করতে পেরেছে। যদিও এটা খুব কঠিন একটি কাজ ছিলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 months ago 

আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যাক্ত করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।