শারদীয়া কনটেস্ট ১৪৩২, মহাঅষ্টমীর ফটোগ্রাফি।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি।
"আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যদের জানাই আমার প্রণাম। মহা অষ্টমী মানেই দূর্গা পূজার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন আমাদের কাছে। প্রতিবারের মতো এবারও অষ্টমীর দিন আমার কাছে অনেক আনন্দের ছিল তবে মন খারাপের জায়গাও একটু থেকে গেছে কারণ এবার মহা অষ্টমী অঞ্জলিটা আমি দিতে পারলাম না। তবে রাতে প্রচুর পরিমাণে প্যান্ডেল দেখে এবং তার সাথে সুন্দর মিষ্টি দুর্গা মায়ের প্রতিমা দর্শন করে মনটা ভালো হয়ে গেছে। অষ্টমীর দিন আমরা সপরিবারে অনেক প্যান্ডেল এবং প্রতিমা দর্শন করেছি যা চমৎকার সুন্দর করে তৈরি করেছে দক্ষ কারিগর এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর ক্লাবের সদস্যরা। আজকে সেই অষ্টমীর সুন্দর কিছু প্যান্ডেল এবং প্রতিমার ফটোগ্রাফি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। ফটোগ্রাফি শেয়ার করার সাথে সাথে ভীষণ আনন্দ অনুভব হচ্ছে এই শারদীয়া কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে পেরে। দুর্গাপূজায় প্যান্ডেল দর্শনের জন্য যেহেতু প্রচুর মানুষ এসে থাকে তাই অনেক ভিড়ের মধ্যে এই প্যান্ডেলের ফটোগ্রাফি করা খুবই অসুবিধাজনক হয়ে থাকে। তবুও চেষ্টা করেছি সুন্দরভাবে ফটোগ্রাফি গুলো ক্যামেরাবন্দি করার।
✴️দুর্গাপুজোর মহাঅষ্টমীর ফটোগ্রাফি✴️
*থিমের নাম :- মায়ানমারের হাসিনবিউম প্যাগোডা।
কল্যাণীর সব থেকে জনপ্রিয় আইটিআই মোড়ে অবস্থিত এই প্যান্ডেলটি। প্রতিবছর এই আইটিআই মোড়ের প্যান্ডেলটি অসম্ভব সুন্দরভাবে কারুকার্য করে থাকে কারিগরেরা এবং সুন্দর থিম দিয়ে প্যান্ডেলটি করে থাকেন এখানকার ক্লাবের কর্তৃপক্ষরা। প্রতি বছরের মত এ বছরেও সুন্দর একটি থিম দিয়ে প্যান্ডেলটি তৈরি করেছেন যে থিমের নাম মায়ানমারের হাসিনবিউম প্যাগোডা। প্যান্ডেলটি খুব সুন্দর ভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন রঙের লাইট ব্যবহার করার কারণে ভীষণ সুন্দর কালারফুল দেখা যাচ্ছে। প্যান্ডেলটির লাইটের কালার আবার প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হতেও লক্ষ্য করা গেল।
প্রতিবছর এই প্যান্ডেলটি দেখতে আসলে অনেক বেশি লাইন হয় এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় প্যান্ডেলের সামনে আসার জন্য। তবে এ বছর চমকে গেলাম দেখে যে এ বছর দীর্ঘ লাইন হয়নি এবং দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেছি প্যান্ডেলের সামনে এবং সুন্দর একটি ফোয়ারার দর্শন পেলাম।
প্যান্ডেলে প্রবেশ পথেই সুন্দর কারুকার্য দেখতে পেলাম এবং মাথার ওপরে সুন্দর তিনটি ছোট ঝাড়বাতি ঝুলছে, তবে মাঝখানের ঝাড়বাতিটির চারপাশে সুন্দর কারুকার্য করা রয়েছে।
প্যান্ডেলের ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই মাথার উপরের দিকে নজর গেল ভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা হয়েছে মাথার উপরের ছাদের অংশে। সাদা, নীল এবং সোনালী রং সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে পুরো প্যান্ডেলটির মধ্যে।
প্যান্ডেলটির ভেতরের চারপাশে সুন্দর নকশা দেখা যাচ্ছে। পশু, পাখি, মুখমণ্ডল বিভিন্ন নকশা এছাড়াও অপূর্ব সুন্দর কারুকর্য করা রয়েছে মণ্ডপের চারিদিকে।
আরেকটু সামনের দিকে এগোতে মায়ের রূপ দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অপূর্ব সুন্দর দুর্গা মায়ের মায়াবী মুখমণ্ডল। মায়ের এই প্রতিমা প্রতিবছরই স্বর্ণ দিয়ে অলংকার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ দুর্গা মা এবং তার প্রত্যেকটা সন্তানেরা স্বর্ণের অলংকারে সুন্দরভাবে সেজে ওঠেন এই ক্লাবে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। যে কারণে প্রতিবছরই ফটোগ্রাফি করা নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু এ বছরেই দেখতে পেলাম ফটোগ্রাফি করার পারমিশন দেওয়া হয়েছে। যদিও এত বেশি ভিড় ছিল যে ঠিকমতো ফটোগ্রাফি করাই যাচ্ছিল না। তবুও যতটা পেরেছি ফটোগ্রাফি করার চেষ্টা করেছি।
আসল স্বর্ণ দিয়ে মাকে এমন সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে মায়ের রুপ দেখে আমি যেন মায়ায় পড়ে গেলাম। মাকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে দেখে চোখ ফেরানোর অবস্থা কারোরই যেন থাকে না। তবুও হাঁটতে হাঁটতেই যতটুকু মাকে ভালো করে দেখা যায় ততটুকুই দেখে প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে আসতে হলো।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
তারিখ : 30:09:2025
**থিমের নাম:- আমেরিকার স্বামী নারায়ণ মন্দির।
কল্যাণীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় প্যান্ডেলটি হল এই রথতলা মোড়ের প্যান্ডেলটি। এই প্যান্ডেলটিও প্রতিবার সুন্দর সুন্দর থিম নিয়ে তৈরি করে থাকে এই ক্লাবের কর্তৃপক্ষরা। এবারের থিম আমেরিকার স্বামী নারায়ণ মন্দির। আসল মন্দিরটি কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি তবে থিম অনুযায়ী এই মন্দিরটি দেখে বিষয়টি ভালো লাগলো।
প্যান্ডেলটির ভেতরে প্রবেশ করার আগেই দেখতে পেলাম প্যান্ডেলের দুই পাশে বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তিদের বিভিন্ন জ্ঞানের কথা লেখা রয়েছে এবং তার পাশে তাদের মূর্তিমত তৈরি করা হয়েছে।
ভেতরে প্রবেশপথে সুন্দর ছোট ছোট লাইক লাগানো রয়েছে মাথার ওপরে আর হালকা হালকা কারুকার্য করা রয়েছে যা দেখতে ভীষণই ভালো লাগছিল।
ভেতরে প্রবেশ করতেই মন্দিরটি দেখে মনে হল কোন রাজমহলের মধ্যে প্রবেশ করেছি। চারিদিকে অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য যা দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।
উপরে ঝুলছে সুন্দর একটি ঝাড়বাতি এবং পুরো ছাদের নকশা কোন রাজমহলের থেকে কম নয়।
ছাদের থেকে একটু নিচের দিকের নকশা দেখে মনে হচ্ছে ওপরে যেন আরও একতলা রয়েছে। অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য করা চারিদিকে দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
সোনালী রংয়ের এমন সুন্দর প্যান্ডেল দেখতে দেখতেই চোখ পরল সামনে দুর্গা মায়ের প্রতিমার দিকে। সোনালী রঙের এমন সুন্দর প্যান্ডেলের মধ্যে স্নিগ্ধ সাদা রংয়ের দুর্গা মায়ের এবং তার সন্তানদের প্রতিমা দর্শন করে ভীষণ ভালো লাগলো। দুর্গা মায়ের মুখমণ্ডল ভীষণ সুন্দর এবং মিষ্টি ভাবে তৈরি করেছে কারিগররা। এমন সুন্দর মিষ্টি দুর্গা মায়ের প্রতিমা দর্শন করে প্রণাম জানিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
তারিখ : 30:09:2025
***থিমের নাম:- বৌদ্ধ মন্দির।
এবার আমরা যে প্যান্ডেল এবং প্রতিমা দর্শন করতে এসেছি এটিও অনেক সুন্দর একটি থিমের ওপর তৈরি করা হয়েছে। সিমহাট পল্লী উন্নয়ন সমিতির উদ্যোগে এবারে বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে এই প্যান্ডেলটি তৈরি করা হয়েছে যা দেখতে ভীষণ সুন্দর হয়েছে। প্যান্ডেলের সামনে থেকেই প্যান্ডেলটি দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগছিল। প্যান্ডেলের সামনে দুটো রাস্তা করা হয়েছে প্যান্ডেলে প্রবেশ করার জন্য। এবং দুটো রাস্তার দুপাশেই প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগিয়ে রেখেছে যেন রাস্তাটা অনেক সুন্দর লাগে দেখতে। আর তার সাথে রয়েছে লাইটের তৈরি করা নীল এবং সোনালী রঙের গাছ।
একটু এগিয়ে গিয়েই লাল কার্পেট বিছানো বড় একটি সিঁড়ি দিয়ে আমরা প্যান্ডেলের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে গেলাম। প্যান্ডেলের ওপরে পৌঁছাতেই দেখলাম সুন্দর একটি বৌদ্ধ মূর্তি প্রণামের ভঙ্গিতে রয়েছে। যদিও অনেক মানুষ থাকার কারণে বৌদ্ধ মূর্তিটাকে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।
এবার আবার সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম মায়ের প্রতিমা দর্শন করার উদ্দেশ্যে। তবে সিঁড়ি থেকে নামার সময় দেখতে পেলাম মাথার ওপরে এবং আশেপাশে সুন্দর কাচের মত নকশা করা যেখানে নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই মায়ের মুখটা চোখে পড়ল। এবং সুন্দর একটি দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠলো যা আপনারা এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমেও দেখতে পারছেন।
এই প্যান্ডেলের কারুকার্য বেশ সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে।
মাথার ওপরে এক বিশাল ঝাড়বাতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যার আলোতে পুরো প্যান্ডেলের ভেতরে অংশ আলোকিত হয়ে রয়েছে। ঝাড়বাতির চারিদিকটা সুন্দর লাল নীল নকশা করা হয়েছে।
মায়ের প্রতিমাটি সুন্দর সোনালী রঙের চকচক করছে। মিষ্টি মায়ের মুখমন্ডল দেখে মন ভরে গেল। প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অন্য একটি প্যান্ডেল দেখার উদ্দেশ্যে।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
তারিখ : 30:09:2025
****থিমের নাম:- পালকের রাজমহল।
এবার যে প্যান্ডেলটি দেখা যাচ্ছে এটি চাঁদপাড়া আনন্দ সংঘ ক্লাবের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে পালকের রাজমহল। এই প্যান্ডেলটি আমার কাছে অসম্ভব সুন্দর লেগেছে কারণ এই প্যান্ডেলটি প্রথম দর্শনেই আমার মন কেড়ে নিয়েছে।
প্রথমে ভেবেছিলাম প্যান্ডেলটি হয়তো শুধুমাত্র সাদা রংয়ের কিন্তু পরে দেখলাম যে এই প্যান্ডেলটি আবার রং পরিবর্তন করছে।
খুব সুন্দর ভাবে রাস্তার পাশে অল্প জায়গার মধ্যে এই প্যান্ডেলটি তৈরি করা হয়েছে। এই প্যান্ডেলটিতে ভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা হয়েছে গাছের পাতা, প্লাস্টিকের চামচ এছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে। চারপাশের দেয়ালে সুন্দর করে ময়ূরের মত কারুকার্য দেখা যাচ্ছে এইসব সামগ্রী দিয়েই।
ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম সুন্দর কারুকার্য। মাথার ওপরে ছোট ছোট ঝাড়বাতি লাগানো রয়েছে আর বাকিটা পুরোই প্লাস্টিকের চামচ দিয়ে কারুকার্য করা হয়েছে।
একটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই সুন্দর মায়ের প্রতিমা দেখতে পেলাম। এখানেও মাকে ভীষণ সুন্দর এবং মিষ্টি লাগছে দেখতে। দুর্গা মাকে ভীষণ সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। মায়ের এমন সুন্দর প্রতিমা দেখে মনে আলাদাই শান্তি লাগে।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
তারিখ : 30:09:2025
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।