সত্য ঘটনা | ভয়ংকর ডাকাতের কবলে একটি রাত (শেষ পর্ব) | ১০% @btm-school
(গত পর্বের পর)
ডাকাতরা বাসটাকে ফেলে যাওয়ার পরে আমাদের বাসেই আমার পাশের সিটেই একজন যাত্রী ছিলেন যিনি পেশায় ড্রাইভার, ওনার পকেটে ২৫ হাজার টাকা ছিল, সেটাও ডাকাতরা ছিনিয়ে নিয়েছিল। সবার অনুরোধে তিনি কোনরকমে বাসটাকে চালিয়ে রংপুর শহরের কিছুটা আগে মিঠাপুকুর উপজেলার একটা মেডিকেল কমপ্লেক্সের সামনে নিয়ে যান। কেননা আমাদের বাসের ড্রাইভার অলরেডি ছুরিকাহত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন। মেডিকেলে গিয়ে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। বাসের সুপারভাইজার স্থানীয় মানুষের সহায়তায় বাসের কোম্পানী ও পরে স্থানীয় থানায় ডাকাতির ঘটনা জানিয়ে মামলা করেন।
আমার সিট একেবারে সামনে হওয়ায় এবং প্রথমেই আমার থেকে বিনা বাঁধায় ল্যাপটপসহ দামী সব জিনিসপত্র পাওয়ায় আল্লাহর রহমতে কোন প্রকার শারীরিক আঘাত পাওয়া থেকে আমি বেঁচে যাই। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আমাদেরসহ বাসটাকে ঐ নতুন ড্রাইভার চালিয়ে নিয়ে রংপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল তথা কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যান। সেখানে নেমে একটা ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ভাড়া করে আমি আমার গন্তব্যে চলে যাই। বাসায় গিয়ে রিক্সার ভাড়া পরিশোধ করি। অবশ্য যখন বাস মেডিকেলের ওখানে ছিল তখন বাইরের একজনের থেকে মোবাইল চেয়ে নিয়ে বাসায় জানিয়ে দিয়েছিলাম গতরাতের ঘটনা। সব শুনে সবার একটাই কথা, জিনিসপত্র গেছে যাক, জিনিসপত্র আবারও হবে, জানটাতো বাঁচছে, এটাই আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।
পরে নিজ উদ্যোগে রংপুরের কোতোয়ালী থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম, যাতে অফিসে একটা ভ্যালিড ডকুমেন্ট জমা দিতে পারি যে ডাকাতির কবলে পড়ে ল্যাপটপসহ জিনিসগুলি হারিয়েছি। এই ডাকাতির ঘটনায় এস.আর ট্রাভেলসের পক্ষ থেকে ডাকাতির মামলা করা হয়েছিল কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসব ডাকাতরা ধরা পড়েনি। ঐ সময় স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে এই ডাকাতির ঘটনা ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। ডাকাতির সময় ডাকাতরা সর্বপ্রথমে আমাদের যাত্রীদের থেকে মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নেয়, যাতে কেউ ৯৯৯ অথবা অন্য কাউকে ফোন দিয়ে জানাতে না পারে। যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন যে চেষ্টা করেনি তা নয়, কিন্তু ডাকাতরা ছুরির আগায় সবার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়, দিতে না চাইলে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। মোটকথা, যতক্ষণ তারা বাসের মধ্যে ছিল পুরোটা সময় জুড়ে একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল।
এই ছিল মোটামুটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহতম একটা রাতের ঘটনাবলী যা ৩ পর্বে বিস্তারিত আপনারা জানতে পারলেন। এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আমি আর কখনোই পাইনি। এরপর থেকে আমি আর রাতের বাসে জার্নি করিনা। যেখানেই যাই দিনের বেলাতেই যাওয়ার চেষ্টা করি। এরকম অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখীন আর কেউ না হোক সেই কামনা করি।
বি. দ্রঃ ঘটনার সময়ে আমাদের সবার সব মোবাইল ডাকাতেরা ছিনিয়ে নিয়েছিল, সেজন্য ঘটনার অরিজিনাল ছবি কালেক্ট করতে পারিনি।
সবাই সাবধানে চলাফেরা করবেন, সাবধানে থাকবেন।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জিনিস পত্র গেলেও জীবন টা আসল । আল্লাহ্র অশেষ রহমত ছিলো আপনার উপর এতো বড় বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
জী, ঠিকই বলেছেন।
আল্লাহর রহমত ছাড়া সছি-সালামতে ফিরতে পারতাম না!
অনেক ধন্যবাদ।
লাস্ট পর্বের জন্য অনেক দিন থেকে অপেক্ষায় ছিলাম।
ভাইয়া আর যাই হোক আপনার কিছু হয়নি জানতে পেরে অনেক খুশি হলাম।
জিনিসপত্র তো আসবে যাবে, নিজের জীবনটাই সব থেকে বেশি মূল্যবান।
হ্যাঁ, সেজন্যই কোন আফসোস নাই।
আল্লাহর রহমতে সবই আবার আসবে।
ধন্যবাদ দাদা।