“চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা”

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

আজ আমার মনটা ভীষণ খারাপ। আতঙ্ক আর অজানা এক শূন্যতা আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলেছে। চোখ বন্ধ করলেই শরীর কেঁপে উঠছে ভয়ের আতঙ্কে। দিনের শুরুটা স্বাভাবিক থাকলেও, দুপুরের আগেই এমন এক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে যা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, শুনেছি, কিন্তু এত কাছ থেকে এতো নির্মম কিছু আমি কখনও দেখিনি।

1000066687.jpg

সোর্স

আজ সকালেই সিরাজগঞ্জ শহর থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই। রুটিন মাফিক পথেই যাচ্ছিলাম। নলকা মোড়ে সিএনজি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছিলাম বাড়ির দিকে। সূর্যের আলো কিছুটা তীব্র হলেও মন ছিল বেশ ফুরফুরে। কে জানত, একটু পরেই জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা আমার সামনে দাঁড়াবে!নলকা মোড়ের বিশ্বরোড পার হওয়ার সময় হঠাৎ চোখের সামনে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক দৃশ্য। ঢাকাগামী একটি বিশাল আকৃতির মালবাহী ট্রাক সজোরে ধাক্কা দেয় একটি সিএনজিকে। মুহূর্তের মধ্যে সিএনজিটি উল্টে পড়ে যায় রাস্তার পাশে, অনেকটা দূর পর্যন্ত গিয়ে ছিটকে পড়ে। সংঘর্ষের শব্দ এতটা বিকট ছিল যে, আশেপাশের মানুষ ছুটে আসে।

প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও, চোখের সামনে যা দেখলাম তাতে শিহরিত হয়ে উঠলাম। সিএনজি প্রায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে, মনে হচ্ছিল ওটা বুঝি কোনো খেলনা গাড়ি, যেটা একটা বিশাল হাত চেপে ধরে ভেঙে ফেলেছে। তবে সৌভাগ্যের বিষয় ছিল, সিএনজিতে কোনো যাত্রী ছিল না। শুধু চালক ছিলেন ভেতরে, যিনি গুরুতরভাবে আহত হন। তাঁর শরীর রক্তাক্ত, মুখে ব্যথার ছাপ কিন্তু সৌভাগ্যবশত তখনও তিনি বেঁচে ছিলেন।আমি এবং আশেপাশের লোকজন মিলে দ্রুত তাঁকে রাস্তাঘাট থেকে সরিয়ে কাছের হাসপাতালে পাঠাই। সেই মুহূর্তের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাকটিকে আটকে ফেলে। উত্তেজিত জনতা ট্রাক চালককে ঘিরে ধরে, কেউ কেউ মারধরও শুরু করে দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল দ্রুত। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা ট্রাক চালককে হেফাজতে নেয় এবং ট্রাকটিকে বাজেয়াপ্ত করে।

এই পুরো ঘটনাটি ঘটতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েক মিনিট, কিন্তু এই কয়েক মিনিটই আমার মানসিক ভারসাম্য নাড়া দিয়ে দিয়েছে। আমি শুধু ভাবছিলাম, যদি ওই সিএনজিতে যাত্রী থাকতো! তাহলে কী হতো? হয়তো একটি প্রাণও বাঁচতো না। সেই ভয়াবহ মুহূর্ত বারবার মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে। মনে হচ্ছিল, সময় যেন থেমে গেছে সেই মুহূর্তে।ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, তবে এই একটি ঘটনা আমাকে শিখিয়ে দিল জীবন কতটা অনিশ্চিত, কতটা ঠুনকো। এক মুহূর্তেই সবকিছু বদলে যেতে পারে। জীবনের নিরাপত্তা যেন শুধুই একটি অনিশ্চিত আশ্বাস মাত্র। আজকের এই দিন, আজকের এই দুর্ঘটনা, আমি কখনও ভুলতে পারব না।

দুপুরে ঘটেছিল এই ঘটনা, কিন্তু এখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে এলেও, আমার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে সেই দুর্ঘটনার দৃশ্য। যতবার চোখ বন্ধ করছি, মনে হচ্ছে আমি আবার সেখানে ফিরে গেছি, আবার সেই সিএনজির শব্দ, মানুষের চিৎকার, রক্তাক্ত চালকের মুখ সব কিছু একসাথে ভেসে উঠছে।

জীবন হয়তো আবার আগের মতো চলবে, কিন্তু আমার ভেতরের এই ক্ষত সহজে সারবে না। এই লেখা হয়তো আমার ভেতরের সেই ভার কিছুটা হালকা করবে। হয়তো কেউ পড়ে বুঝবে, কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। আজ আমি শুধু প্রার্থনা করছি, সিএনজি চালক যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।আপনারাও সবাই তার জন্য প্রার্থনা করবেন। আর সবাই যেন সড়কে সচেতন থাকি, কারণ কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তা কেউ জানে না।সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক। (আমিন)


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 last month 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

নিঃসন্দেহে খুবই মর্মান্তিক ও চোখে জল এনে দেওয়া একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা। এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবন কতটা অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী। আপনার মানবিকতা ও দ্রুত সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। সিএনজি চালকের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।