বিকেল বেলায় নদীর পাড়ে ঘোরাঘুরির কিছু মুহূর্তের গল্প।।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে বিকেল বেলায় নদীর পাড়ে ঘোরাঘুরির কিছু মুহূর্তের গল্প শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

আজ বিকেল আমি ও আমার চাচাতো বোনরা মিলে বাড়ি থেকে একটু দূরে চলে গিয়েছিলাম ,নদীর সেই পরিচিত কোণে। সূর্য তখন হালকা করে ঢলে আসছে, আকাশে সোনালি-নীল মিশে একটা নরম রঙের ক্যানভাস তৈরি করেছে। পকেট ভর্তি ঘুড়ি আর খুশির ছোট্ট ঝুলি নিয়ে আমরা সবার আগে নদীর ধারে এসে বসে পড়ি; বাতাসে সোনালি আলোর সঙ্গে মিশে ছিল ধুলো কণার নরম উষ্ণতা। থরে-থরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর ছায়া ধীরে ধীরে দীর্ঘ হচ্ছিল, আর নদীর জলে সেইসব ছায়ার প্রতিচ্ছবি নাচছিল।মোটকথা বিকেলটা যেন ধীরগতিতে কেটে যাচ্ছিল, একপলক থেমে থেকে পৃথিবীটা দেখার মতো।নদীর ধারের মাটি এখনও কিছুটা ভেজা ,পায়ের তলায় কাদা মিশে থাকলেও আমরা তা থেকে বিরতি নিতে পারিনি।বিপুল উচ্ছ্বাসে ঘুড়িগুলো আকাশে ছুঁড়ে দিতেই হতো। বালুকা ও ঘাসের মধ্য দিয়ে দৌয়ের সময় কাঁধে লাগানো বাতাসের চাপ, ঘুড়ির সুতো হাতে চাপে চাপে এনে দেয় এক অদ্ভুতটা উত্তেজনা। বোনেরা হেসে-খেলে, কবর কপালে ঘাম ভিজে গেলেও মুখে আল্টা-সুখ এমন মুহূর্তগুলো যাতে সবকিছু ভাসিয়ে দেয়, গন্ডি মুছে দেয়।

কিছুটা দূরে জেলের একটা পুরোনো কাঠের জাল পড়ে আছে।বাঁশের খুলি আর সুতোয়ের জটিলতা দেখে বোঝা যায় এখানে জীবনটা কত সহজ সরলভাবে চলে। জালের পাশে কয়েকজন লোক বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কেউ মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ছাঁটাচ্ছাঁটা আর আমাদের কিশোরদের খেলা এক অদ্ভুত মিল তৈরি করে। নদীর নীরব ঢেউগুলো মাঝে মাঝে কাদা তীরে এসে নরম স্পর্শ করে, আর সেই মৃদু শব্দগুলো কানে আসে।একটানা ঢেউয়ের শোঁ-শোঁ আর লতাগাছের হালকা কাঁপুনি।যা বিকেলের আভা আরো রহস্যময় করে তোলে।

সূর্য যখন ধীরে ধীরে নিচু হতে থাকে, তখন আলো-ছায়ার মিলনে ছবি তুলতে মন অসাধারণ খুশি পায়।আমাদের ফোনের ক্যামেরা বেস্ট-মোডে ক্লিক করলেই যে তোলা যাবে এমন নরম সোনালি রং। আমরা কোনো পোজই ধরি না, বরং চলাফেরা, হাসি, চেচামেচি।এসবই ক্যামেরার সামনে এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জমে গেল। কারো ঠোঁটের কোণে মাখা মাটি, কারো পায়ের নখের কাছে কাদা ,এই ছোটখাটো বাস্তবতা গুলোই আসল গল্প বলে। এক লোকাল বাচ্চা নদীর ধারে নেমে খেলছে, তার পেছনে সূর্যের প্রতিচ্ছবি আছি।এক চিত্রে আমরা হেলানদারি করে হাত বাড়িয়ে সূর্যকে ধরার ছল করে নিয়েছি।ক্ষুদ্র ভঙ্গিটি কিন্তু সেই বিকেলের অদ্ভুতই মিঠা স্মৃতি হয়ে রইল।

এই সন্ধ্যা আমাদের একটু হলেও পথভ্রান্ত করে দিল।বহু কথা বলা হলো না, তবু চোখে চোখ রেখে অনেক কিছু শেয়ার হল। চাচাতো বোনদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো মানে ছিল একরকম সান্ত্বনা। যদিও শহরের বাইরে না, তবু এখানে প্রতিটি পা রাখা ছিল মুক্তি পেয়েছে।আজকের এই ছোটঘণ্টার গল্পগুলো আমাদের ভাবনাকে সরল করে দিল। নদীর পাড়ে বসে থাকলে মনে হয় শিশু দিনগুলো আবার ফিরে এসেছে।কিভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তাম, কিভাবে আমরা প্রাণভরে হেসে ফেলতাম, সবই যেন একেবারে নিকট।

ফটোগ্রাফি গুলো ভেবে দেখি, তারা কেবল ছবিই নকল করে না। প্রত্যেকটা ফ্রেমে আছে সময়ের একটি খণ্ড কখনো এক ঝটকা বাতাসের ঝাপটা, কখনো কারো হাসির ছটা, কখনো নরম সূর্য শিখার ধোঁয়া। এই খণ্ড গুলো মিলেই গড়ে তোলে আমাদের বিকেলের গল্প, যা হয়তো চোখে ছোট লাগলেও মনে বড় হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার পথে আমরা সবাই এক অদ্ভুত শান্তি নিয়ে হাঁটলাম।হাতের ঘুড়ির লাইন গজায় কুঁচকানো, জুতোতে বালি, রুমাল ভরা কাদামাখা স্মৃতি।এসবই মনে করিয়ে দেয় যে সুখের সম্ভার আদি-উপাদানগুলো সাধারণ এবং কাছের জিনিসেই লুকিয়ে থাকে।

শেষে বলি, এমন বিকেল গুলো হঠাৎ এসে যায়।কিন্তু দীর্ঘক্ষণ মনে থেকে যায়। নদীর পাড়ে ঘুড়াঘুড়ির প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য একটা গল্প বয়ে এনেছে।একটি সরল, নীরব, কিন্তু গভীর গল্প। আমরা ফিরে এসে যখন ছবিগুলো দেখি, তখন শুধু আলো-ছবিই নয়, সেই বিকেলের গন্ধ, শব্দ, হাসি সবই ফিরে আসে।একটানা স্মৃতির মতো ঘুরে বেড়ায়। আশা করি এই ছবিগুলো এবং আজকের সেই সংক্ষিপ্ত যাত্রা আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের হাসি আর কথা রাখবে।আর ভবিষ্যতে কখনো মলিন মনে পরলে শুধু এই স্মৃতি গুলোই যেন আলোকপাত করে উঠতে পারে।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।