"ইফতার উপলক্ষে যমুনার পাড়ে পুরনো বন্ধুদের পুনর্মিলন"

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব মানেই একরাশ স্মৃতি, হাসি, আড্ডা আর ভালোবাসার এক বন্ধন। ২০২০ সালে সবুজ কারণ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করার পর সবাই জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছিলাম। ব্যস্ততার কারণে সেই বাঁধন অনেকটাই আলগা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধান বন্ধুত্বকে মলিন করতে পারেনি। রমজানের পবিত্র উপলক্ষে গতকাল আমরা সবাই আবার এক হলাম, একসাথে ইফতারের আয়োজন করলাম সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পাড়ে।

এ যেন এক অন্যরকম দিন! পুরনো বন্ধুদের একসঙ্গে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন আবার স্কুলের সেই চিরচেনা আঙিনায় ফিরে গেছি। আড্ডা, গল্প, হাসি, স্মৃতিচারণে জমে উঠেছিল পুরো সন্ধ্যা। অনেক বছর পর এমন মিলনমেলা আমাদের হৃদয়ে নতুন করে বন্ধুত্বের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিল। আজকের ব্লগজুড়ে থাকছে সেই অসাধারণ মুহূর্তগুলোর গল্প, যেখানে সময় থমকে গিয়েছিল শুধুই আমাদের জন্য।চলুন তাহলে শুরু করি...

1000061442.jpg

বন্ধুত্বের গল্পগুলো যেন সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়, কিন্তু কিছু মুহূর্ত থেকে যায় আজীবনের জন্য। এমনই এক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম আমরা, আমার, সাদি আর আশিকের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের স্কুল জীবনের বন্ধুদের নিয়ে একটি ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে।২০২০ সালে সবুজ কারণে স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করার পর সবাই যার যার গন্তব্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। কারও সাথে যোগাযোগ থাকলেও, একসাথে বসে গল্প করা, আড্ডা দেওয়া, কিংবা একসাথে হাসি-ঠাট্টা করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাই আমরা পরিকল্পনা করলাম, এই রমজান মাসের এক সন্ধ্যায় সবাইকে একত্রিত করব, যাতে পুরনো বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলো আবারও জেগে ওঠে।

1000061435.jpg

1000061422.jpg

আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলার, যেখানে আমরা সব বন্ধুদের যুক্ত করলাম। আমাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে, সবাইকে ইফতারে আসার আমন্ত্রণ জানালাম। বেশিরভাগ বন্ধুই আগ্রহ প্রকাশ করল, তবে ২-৩ জন তখনো সিরাজগঞ্জে ফেরেনি। তাই আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করলাম এবং অবশেষে গতকাল ইফতার আয়োজন করলাম। এই আয়োজন আমাদের মাঝে এক অন্যরকম উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করেছিল।পরবর্তী ধাপে আমরা সবাই মিলে ইফতারের মেনু ঠিক করলাম। আমাদের খাবারের তালিকায় ছিল কাচ্চি, খেজুর, তরমুজ, পেয়ারা, মুড়ি, ছোলা, বুন্দিয়া, নিমকি, জিলাপি, বেগুনি, চপ, শরবত, মজো এবং পানি। এরপর সিদ্ধান্ত হলো, যমুনা নদীর পাড়কেই আমরা ইফতারের স্থান হিসেবে বেছে নেব। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করার পর সবাইকে জানিয়ে দিলাম যে, ২৮ তারিখ বিকাল ৪টার মধ্যে সবাইকে বাজার স্টেশনে উপস্থিত হতে হবে।

1000061321.jpg

1000061181.jpg

নির্ধারিত সময়ে সবাই বাজার স্টেশনে এসে পৌঁছালো। চারজন বন্ধুকে খাবার কেনার দায়িত্ব দেওয়া হলো, আর আমরা বাকিরা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে থাকলাম। যথাসময়ে খাবার কেনা শেষ হলে, আমরা যমুনার পাড়ের দিকে রওনা দিলাম। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে বন্ধুত্বের এমন এক মিলনমেলা যেন আমাদের স্কুল জীবনের দিনগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।ইফতার গোছানোর সময় মজার কোনো কমতি ছিল না। কেউ প্লেট সাজাচ্ছিল, কেউ পানির বোতল সাজাচ্ছিল, কেউ আবার খামখেয়ালিভাবে দুষ্টুমি করছিল। ইফতার প্রস্তুতির সময় হাসাহাসি, ঠাট্টা-মশকরা আর দুষ্টামিতে মুহূর্তগুলো আরও আনন্দময় হয়ে উঠল।

VideoCapture_20250329-112427.jpg

1000061868.jpg

শেষ পর্যন্ত, সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্তে, সবাই যার যার সামনে খাবার নিয়ে বসে পড়লাম। ইফতার শুরু হতেই হাসি-ঠাট্টার মাত্রা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল। খাবার খেতে খেতে কেউ বলছিল, ‘এই, আমার কাচ্চিটা বেশি নিস না!’, তো কেউ বলছিল, ‘আরে ভাই, তরমুজটা আমাকেই দে!’, আবার কেউ বলছিল, ‘শরবত বানানোতে কে মাস্টার, এটা তো বেশি মিষ্টি হয়ে গেছে!’ ইফতারের পর আমাদের ব্যবহৃত সব প্লেট, গ্লাস, পলিথিন একত্র করে তা আগুনে পুড়িয়ে দিলাম, যেন পরিবেশ নোংরা না হয়। এই সময়টাও ছিল বিশেষ, আগুন জ্বলছে আর আমরা তার চারপাশে বসে গল্প করছি, যেন ছোটবেলার কোনও শীতের রাতের ক্যাম্পফায়ারের মতো অনুভূতি হচ্ছিল।

1000061481.jpg

1000061482.jpg

এরপর এল গ্রুপ ফটো তোলার পালা। প্রথমে যমুনার পাড়েই কিছু ছবি তুললাম, তারপর রাতে বড় একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে গিয়ে আরও কিছু গ্রুপ ছবি তুললাম। স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার জন্য সবাই মিলে যতটা সম্ভব ছবি তোলার চেষ্টা করলাম।ইফতারের পর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আড্ডা আরও জমে উঠল। যমুনার পাড়ে বসে একে অপরের পুরনো গল্প শুনতে শুনতে সময় কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না। হাসি-ঠাট্টা, বন্ধুত্বের সেরা মুহূর্তগুলো যেন আবারও আমাদের জীবনে ফিরে এলো।

1000061436.jpg

একসময় ঘড়ির কাঁটা ৮টার ঘরে পৌঁছে গেল। বিদায়ের সময় এসে গেল, কিন্তু মন চাচ্ছিল না একে অপরকে বিদায় জানাতে। তবু সবাই ধীরে ধীরে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, হৃদয়ে সেই চিরস্মরণীয় মুহূর্তের স্মৃতি নিয়ে।পুরনো বন্ধুদের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো আমাদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। হয়তো সময়ের সাথে আমরা আবার ব্যস্ত হয়ে যাব, কিন্তু এই মিলনমেলার স্মৃতি কখনোই ফিকে হয়ে যাবে না।আর এভাবেই সুন্দর একটি দিনের সমাপ্ত ঘটলো। আর এখানেই আজকের ব্লগটি শেষ করলাম।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"ইফতার উপলক্ষে যমুনার পাড়ে পুরনো বন্ধুদের পুনর্মিলন"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif