স্মৃতিচারণ পোস্ট // রংধনুর রঙে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের গল্প ।।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো "রংধনু দেখার আনন্দে হারিয়ে যাওয়া শৈশব "। আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

আকাশ যখন ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়, আর হালকা রোদের সঙ্গে ধরা দেয় সাতরঙা এক বিস্ময়।তখন মন ঠিক কেমন যেন হয়ে যায়। একটা টান অনুভব করি নিজের ভেতরে, যেটা বলে "এই রংধনুটা আগে কখনো দেখেছো... খুব আগে, খুব আপন ভাবে। হঠাৎ করেই বৃষ্টির পর যখন চোখে পড়ল সেই অপূর্ব রংধনু।শুধু একটা রংধনু কতটা আনন্দ এনে দিতে পারে, সেটা হয়তো ভাষায় বোঝানো যায় না। আজকের বিকেলটা যেন হঠাৎ করেই এক স্বপ্নিল অনুভূতির জন্ম দিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল এক অপরূপ রংধনু। যেন বৃষ্টির পর আকাশ নিজেই তুলে ধরেছে তার রঙিন চাদর। সেই দৃশ্য দেখেই মনের ভেতর কেমন এক অজানা উত্তেজনা জাগল। আর সেই মুহূর্তেই ফিরে গেলাম অনেক অনেক বছর পেছনে আমার শৈশবের দিনগুলোয়।

শৈশবের সেই দিনগুলোতে রংধনু ছিল অলৌকিক এক ব্যাপার। মেঘলা আকাশ, হালকা বৃষ্টি, আর তারপরই হঠাৎ রঙিন এক খোঁপা আকাশে ধরা দিত। তখন না জানতাম তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, না বুঝতাম তার কৌশল ।তবুও বিশ্বাস করতাম, এই রংধনু কোনো এক জাদুকরী পথ, যেখানে গেলে পাওয়া যাবে সোনার পাহাড়, রূপকথার রাজ্য। কাঁচা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, খোলা মাঠে হেঁটে যেতে যেতে, বন্ধুদের সঙ্গে হৈহৈ করতে করতে রংধনু দেখা ছিল এক অনন্য উৎসব। আর সেই উৎসব আজ হঠাৎ করেই ফিরে এলো আমার জীবনে, অনেক বছর পরে, হঠাৎ এক বিকেলে।

রংধনুটি চোখে পড়া মাত্রই মন চাইলো মুহূর্তটাকে ধরে রাখতে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা হাতে নিয়ে ক্যামেরা অন করলাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, এই ছবি তোলার মুহূর্তে আমি শুধু একজন ফটোগ্রাফার ছিলাম না, বরং একজন ফিরে পাওয়া স্মৃতির পথিক ছিলাম। চোখে যেন ভেসে উঠছিল মাটির উঠোন, আমার ছোটবেলার বাড়ির জানালা, মায়ের ডাকে ছুটে আসা সন্ধ্যা, আর সেই সমস্ত নির্ভেজাল হাসি। আজকের ছবিগুলো তাই শুধু রংধনুর নয়, বরং শৈশবের, হৃদয়ের, সময়ের রঙিন এক রূপান্তর।

আমার আশপাশে ছিল চাচাতো ভাই-বোনরা, ওরাও ঠিক আমার মতোই মুগ্ধ। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি বারান্দায়, কেউ হেসে উঠছে, কেউ মোবাইলে ছবি তুলছে, আবার কেউ রংধনুর সাতটি রঙ গুনছে কৌতূহলে। পুরো মুহূর্তটা ছিল যেন এক জীবন্ত স্মৃতিচারণ। হঠাৎ এমন মিলন, এমন উপলব্ধি কেবল প্রকৃতিই এনে দিতে পারে ।একটি রংধনুর মাধ্যমে। আমাদের হাসি, চোখে বিস্ময়, আর সেই মিলেমিশে থাকা আবেগ সবকিছু একসঙ্গে মিশে গিয়েছিল বিকেলের আকাশের রঙে।আমি যখন ছবিগুলো তুলছিলাম, তখন ভেতরে ভেতরে ভাবছিলাম ,সময় কেমন করে চলে যায়! এক সময় আমরা এই আকাশের নিচেই ছোট্ট পায়ে দৌড়েছি, আঙুল তুলে রংধনু দেখিয়েছি একে অপরকে, গলা মিলিয়ে গান গেয়েছি, রংধনু দেখে মনটা কি যে করে। আজ আমরা বড় হয়েছি, কিন্তু আকাশ তো বদলায়নি। সেই একই আকাশ, একই আলো, শুধু আমাদের চোখে জমেছে কিছু অভিজ্ঞতা, কিছু ক্লান্তি। তবুও রংধনু দেখা মাত্রই আবার সেই পুরোনো চোখ ফিরিয়ে আনে প্রকৃতি।

এই ছবিগুলো শুধু আকাশের নয়, একেকটা যেন হৃদয়ের ভেতরে বাঁধা রঙিন অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। রংধনুর সেই সাতটি রঙ যেন আজও ঠিক আগের মতোই জ্বলজ্বল করে, শুধু আমরা বদলে গেছি। কিন্তু প্রকৃতি বারবার তার রঙ দিয়ে আমাদের মনে করিয়ে দেয়।শৈশব এখনও হারিয়ে যায়নি, ঠিক সময় পেলেই সে ফিরে আসে এক একটি রঙিন মুহূর্তে।

আজকের এই অনুভূতি কোনো আলাদা উপলক্ষে তৈরি হয়নি। ছিল না কোনো সাজানো আয়োজন, ছিল না কোনও উৎসবের প্রস্তুতি ।তবুও এই ছোট্ট রংধনু আমাদের মাঝে তৈরি করেছিল এক অনন্য উৎসবের আবহ। একসঙ্গে তাকিয়ে থাকা, একসঙ্গে মুগ্ধ হওয়া, সেই সহজ আনন্দ গুলো আবার ফিরে এসেছিল।রংধনু শেষ পর্যন্ত মিলিয়ে গেল, কিন্তু রেখে গেল অনেক কিছু। সে রেখে গেল চোখে রঙিন রেখা, মনে এক গভীর প্রশান্তি আর হৃদয়ে এক গোপন দোলা। আমি জানি, আবার যখন কখনো রংধনু উঠবে, আমি আবার ফিরে যাব সেই পুরোনো উঠোনে, ছোট্ট আমি-টার কাছে, যে এখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখে।

আজকের বিকেলটা তাই শুধুই একটা দৃশ্য নয়, ছিল এক অমূল্য ফিরে পাওয়া। পরিবার, ভাই-বোনদের সঙ্গে কাটানো সেই রংধনু দেখা, একসঙ্গে তাকিয়ে থাকা, হেসে ওঠা সবকিছু মিলে যেন এক চিরস্মরণীয় অনুভব। যতবার এই ছবিগুলোর দিকে তাকাবো, ততবার মনে পড়বে আজকের বিকেল, রংধনুর সেই মিষ্টি রেখা, আর সেই মুহূর্তে জেগে ওঠা শৈশব।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।