বৃষ্টি- এক অনুভূতির নাম!
27-07-2025
১২ শ্রাবণ , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
বিকেল ঘনিয়েছে সেই অনেকক্ষণ হলো! সূয্যিমামা মুখ লুকিয়েছে মেঘের আড়ালে। আকাশে মেঘেদের গর্জন। চারিদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। বৃষ্টি নামবে এখন। ফোন হাতে বসে পরলাম! মেঘেদের গর্জন বারবার কানে আসছে। কেন যেন অদ্ভূত এক ভালো লাগা খুঁজে পেলাম! বৃষ্টি আসলে এক অনুভূতির নাম, ভালো লাগার জায়গা। কত বিরহ, কত কষ্ট লুকিয়ে থাকে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাঁয়।বৃষ্টি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সোনালী অতীতের কথা, সেই সোনালী শৈশবের কথা! তখন বৃষ্টি হলেই এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো। বৃষ্টি হলেই চলে যেতাম ফুটবল খেলার জন্য। একদিকে মেঘেদের গর্জন অন্যদিকে আমাদের ফুটবল খেলা চলত অবিরত! এদিকে আমার মা আমাকে খুঁজে বেড়াতো। এতো বৃষ্টির মাঝেও কেউ খেলতে যায়!
বৃষ্টির সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হলো টিনের চাল বেয়ে পরা পানির শব্দ! এ শব্দটা লাখটাকা দিয়েও কেনা যাবে না। এটা এক নস্টালজিয়া! বৃষ্টির দিনে টিনের চাল বেয়ে পরা পানির শব্দে রিলেক্স একটা ঘুম হতো! আবার, পরিবারের সবাই মিলে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করাও হতো তখন! তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চোরপুলিশের খেলা! সবার মধ্যেই চলতো তুমুল লড়াই! যে চোর হতো সে খুব সাবধানে থাকতো। পুলিশ ধরতে পারলেই তার জেল মানে সে জিরো পাবে! সে এক অন্যরকম অনুভূতি আসলে! খেলার ফাকেঁ শিম বা বাদাম ভাজাও খাওয়া হতো! সাথে নানা বিষয়ে চলতো আড্ডা! বিশেষ করে ক্লাসে কি হয়েছিল! কার প্লেন কি? এসব নিয়ে আলোচনা হতো। নানা ধরনের ফানি কথার মাধ্যমেও আমরা হাসতাম!
বৃষ্টির দিনে মায়ের হাতের ডিমখিচুরীর স্বাদ আজও যেন মুখে লেগে আছে। এটার তুলনা আসলে কোনোভাবেই হয় না! আমরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও আমার মা ব্যস্ত থাকতো রান্না নিয়ে! বৃষ্টির দিনে মায়ের হাতের খিচুরীর ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝে যেতাম আজ খিচুরী রান্না হচ্ছে! সাথে বেগুন ভাজা অথবা ডিম ভাজা ! গরম গরম খিচুরী খাওয়ার স্বাদ অন্যরকম। সেই যে খিচুরী খাওয়ার অভ্যাস হলো সেটা আজও যায়নি! বৃষ্টির দিন আসলেই আমরা বাঙালিরা বুঝি ডিম খিচুরী। এটা বলা যেতে পারে বৃষ্টির দিনের ঐতিহ্য! এ ঐতিহ্য কখনো পুরাতন হবে বলে আমার মনে হয় না! কারণ আমাদের মা, খালারা এভাবেই আমাদের বড় করেছে! এখনকার জেনারেশনের কাছে এ বিষয়টা হয়তো ছোট মনে হতে পারে। তারা ভাবতেই পারে বৃষ্টির দিনে খিচুরীই খাবে কেন! তাদের ভাবনার সাথে আমাদের ভাবনার রাতদিন তফাৎ!
তবে বৃষ্টির দিন সুখকর সবসময় তা কিন্তু নয়। সারাদিন ঝুম বৃষ্টির কারণে গ্রামের দিকে বন্যার মতো অবস্থা তৈরি হয়ে যেত। আমাদের পুকুর পর্যন্ত ডুবে যেত পানিতে! পুকুরের মাছ সব চলে যেত! মাছ ধরার একটা হিড়িক পরে যেত তখন! সবাই ছোট ছেট জাল নিয়ে নেমে পরতো মাছ ধরার উদ্দেশ্য। বিশেষ করে পুটিঁ, কৈ মাছ, লইট্যা মাছ এসবই বেশি পাওয়া যেত। আর এসব মাছ তরতাজ একদম। খেতেও বেশ ভালো লাগত আমাদের কাছে। মানুষজন জড়ো হতো একসাথে মাছ ধরা দেখার জন্য! যখন কারো জালে বড় মাছ উঠতো সবাই তখন হৈ-হুল্লোড় শুরু করে যেত! সে মোমেন্টটা আসলে বলে বুঝানোর মতো না! তবে গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা হয়ে যেত ভয়াবহ! হাটাঁর মতো উপক্রম তো থাকতোই না! তারপরও উৎসুক জনতা বের হয়ে যেত ছাতা নিয়ে বাহিরের অবস্থা দেখার জন্য!
বৃষ্টির দিন আমাদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও সজীবতা এনে দেয়। কিছুটা সজীবতা আমরা উপভোগ করি। জীবনের ব্যস্ততার ফাকেঁও বৃষ্টির মুহূর্তটা উপভোগ করাও জীবনের একটা অংশ আসলে! বৃষ্টি আসলেই এক অনুভূতির নাম! যা হৃদয়ে থেকে যায় কিছু সময়ের জন্য হয়তোবা আজীবনের জন্য।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে । পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত চার বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
twitter share