আয় বাড়ছে, তবু কেন দরিদ্রতা কমছে না...।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশ একসময় দারিদ্র্য মোকাবিলার এক অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তূপের দেশটি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করেছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছে, পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই গর্বের যাত্রাপথে যেন এক অদৃশ্য ছায়া পড়েছে। আর সেটা হলো দারিদ্র্যের ছায়া।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২১ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা কভিড-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ। সংখ্যাটা শুনতে হয়তো একটি পরিসংখ্যান মনে হতে পারে, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে লাখো পরিবারের দৈনন্দিন সংগ্রাম, খাবারের টেবিলে অনিশ্চয়তা, শিশুদের স্কুল ছাড়ার গল্প, এবং শ্রমিকদের ভোর থেকে রাত পর্যন্ত টিকে থাকার লড়াই।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি অদ্ভুত বৈপরীত্যের মধ্যে রয়েছে। একদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪-৫ শতাংশে স্থির আছে, অন্যদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি ২ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ মানুষ আগের মতোই কাজ করছে, কিন্তু সেই আয়ে এখন আগের মতো জিনিস কেনা যাচ্ছে না। ফলাফল- পরোক্ষ দারিদ্র্যের বৃদ্ধি।
এই অদৃশ্য দারিদ্র্য হলো এমন এক বাস্তবতা, যা পরিসংখ্যান দিয়ে মাপা যায় না। অনেকে হয়তো এখনো দারিদ্র্যসীমার ওপরে, কিন্তু জীবনযাত্রার মান এতটাই কমে গেছে যে তারা প্রতিদিনের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে- মাত্র এক বছরে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ২৪ লাখই নারী। এটা শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং সামাজিক এক ধাক্কাও। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, সেবা খাত বা ক্ষুদ্র ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ দেশের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এখন তাদের কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় পরিবারগুলো আবার দারিদ্র্যের ঘূর্ণিতে পড়ে যাচ্ছে।
আমরা প্রায়ই শুনি ব্যাংক খাতে দুর্নীতি, খেলাপি ঋণ, অকার্যকর নীতি সংস্কার, এবং বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের কথা। এই সমস্যাগুলো কেবল অর্থনীতির শিরায় নয়, বরং সমাজের গভীরে প্রভাব ফেলছে।যখন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয় না, তখন গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্ররা একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শহরে বাড়ে বস্তি, গ্রামে বাড়ে অভিবাসন।
আশার বানী হলো সব নেতিবাচকতার মাঝেও সম্ভাবনা আছে বিশ্বব্যাংকও বলেছে, যদি সরকার নীতিগত সংস্কার, ব্যাংক খাত পুনর্গঠন, এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়, তবে ২০২৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার আবার কমে আসবে। এখন সময় এসেছে সংখ্যা নয়, মানুষ কে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ভাবার। দারিদ্র্য কমানোর জন্য প্রয়োজন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগের প্রসার।
বাংলাদেশ এখন এক সংবেদনশীল সময় পার করছে। সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সম্ভাবনাও কম নয়। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, এটা শুধু অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয় এটা আমাদের সামাজিক কাঠামোর দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি।
প্রশ্ন হলো, আমরা কি এই বাস্তবতাকে বুঝে নতুন পথে হাঁটব, নাকি উন্নয়নের পুরনো ভাষণে নিজেদেরই বিভ্রান্ত করব? দেশ আমাদের সিদ্ধান্তও আমাদের। আমরাই সিদ্ধান্ত নিবো দেশ কোন দিকে যাবে...।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server