শুভ নববর্ষ
ক্যানভা দিয়ে বানানো
প্রাচীন একটি প্রবাদ আছে,"যায় দিন ভাল,আসে দিন খারাপ।"কথাটি যে খাটি কথা তাতে কোন সন্দেহ নেই।এখানে খারাপ বলতে আসন্ন দিনের নতুন চ্যালেঞ্জ,অজানা অ্যাডভেঞ্চার ও অনিশ্চিত জীবনের কথা বলা হয়েছে।বিগত দিন যেমনই যাক তা পার হয়ে গেছে,তাকে নিয়ে আর ভয় নেই,কিন্তু সামনের দিন অজানা। এটাই এই প্রবাদের গূঢ় অর্থ। কিন্তু এই কথাটি মানুষের কাছে দুই ভাবে ধরা দেয়।
এক ভাগের মানুষ এই নতুন আগত দিনের নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন অ্যাডভেঞ্চার ভয়ের সূত্রপাত করে।তারা এই ভয়ে থাকে আগামীকাল কি যেন হয়।তারা এই আগামীকে ভয় করে বর্তমান কে উপভোগ করতে ভুলে যায়।এরাই হল জড়াগ্রস্থ,প্রাচীন,মুমূর্ষু ।
আরেক ভাগের কাছে এই নতুন চ্যালেঞ্জ,নতুন অ্যাডভেঞ্চার হল খেলার মত। তারা উপভোগ করতে পারে অনিশ্চিত আগামীকে।সেই সাথে বর্তমান কেও তারা করে তোলে সুন্দর।হাসতে হাসতে যে কোন কিছুকে বরণ করে নিতে পারে এরা। এরাই নবীন।
সমাজের জন্য প্রাচীনরা বোঝা,এরা অনিশ্চয়তার ভয়ে সমাজকে এগিয়ে যেতে দেয়না।নতুন কিছু গ্রহণ করতে পারে না।এসমাজে তারা অন্ধকার সমতুল্য। অন্যদিকে নবীনরা সেই অন্ধকার সমাজের নতুন ভোরের মত।তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে, নতুন কে স্বাগত জানিয়ে সমাজকে বর্তমান পৃথিবীর উপযোগী করে তোলে। আমাদের সমাজের প্রয়োজন নবীনদের গ্রহণ করে,প্রাচীন মুমূর্ষুদের ত্যাগ করা, তাইতো কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো
এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা
দূর হয়ে যাক, যাক, যাক
এসো, এসো
এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো।
আজ বাংলা নব বর্ষের প্রথম দিন।১৪২৯বঙ্গাব্দ কে পেছনে ফেলে আজ ১৪৩০ কে বরণ করার দিন। নববর্ষ বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই উৎসব পালন করেন। এই দিন সবাই পুরাতন কে পেছনে ফেলে নতুন কে বরণ করে নেয়।
দিন শুরু হয় ছায়ানটের "এসো হে বৈশাখ" গাওয়ার মাধ্যমে।তারপর মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।সবাই তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়।কেউ কেউ পাঞ্জাবী,শাড়ি পড়েন।বাবা-মা ছোট্ট শিশুদের নিয়ে আসেন বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
এ তো গেলো রাজধানী শহরের কথা।নববর্ষ কিন্তু শুধু শহরেই নয় গ্রামেও বেশ জাকজমকের সাথে পালন করা হয়। তবে শহরের আর গ্রামের উদযাপনের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক।গ্রামে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বৈশাখী মেলা বসে।সেই মেলায় বসে নানা ধরনের দোকান কোনটা মন্ডা-মিঠাই এর,কোনটি প্রসাধনীর,কোনটি আবার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর।একসময় এই মেলাগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।এছাড়াও বিনোদনের জন্য আসে নানা রকম সার্কাস,যাত্রা,নাগরদোলা সহ আরো নানা ধরনের বিনোদনমূলক সংগঠণ।
এছাড়া গ্রাম অঞ্চলের আরেকটি সংস্কৃতি রয়েছে। পহেলা বৈশাখে হালখাতার আয়োজন করা। কৃষিপ্রধাণ দেশ হওয়ায় বাংলার প্রাচীন অর্থনিতী অনেকটা কৃষি নির্ভর ছিল।কৃষকরা সারা বছর বাকিতে জিনিস কিনত,ব্যবসায়ীরা সেই হিসাব একটি খাতায় তুলে রাখতেন।তারপর বছরের প্রথমে ব্যবসায়ীরা সেই বাকির টাকা আদায় করে আবার নতুন হিসাব শুরু করতেন।এবং পাওনা আদায় উপলক্ষে সবাইকে মিষ্টিমুখ করাতেন।এটাই হালখাতা।
যদিও এখন নববর্ষের সেই আমেজ টা আর নেই,মানুষ আস্তে আস্তে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে,এছাড়াও রয়েছে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন।ফলে আমরা ধিরে ধিরে নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তাই আসুন নিজেদের সংস্কৃতি কে বাচিয়ে রাখার জন্য আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এসব ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।তাদের উৎসাহিত করি নিজেদের সংসংস্কৃতি কে জানতে।
OR
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
আপনাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা। ঠিক তাই আজ বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের নিজেস্ব সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। এখান সবার দায়িত্ব নিজেস্ব সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করা। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপু বোঝার জন্য
আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ভাইয়া।নববর্ষ বিয়ে বাস্তব কথা গুলো শেয়ার করেছেন।ভালো লেগেছে লেখাটি।নববর্ষ শহরের এবং গ্রামে উভয় জায়গায় ভিন্ন ভাবে পালন করা হয়।আশা করি এই বছর সবার জন্য অনাবিল সুখ বয়ে আনবে।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপনার জীবনেও আসুক অনাবিল সুখ ও আনন্দ।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভাইয়া প্রথমেই আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তবে যাই বলুন না কেন আগেকার মতো আমেজ এখন আর নেই। এখন বাঙালিরা তার নিজের সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। ছোটবেলার পহেলা বৈশাখ গুলো অনেক আনন্দের ছিল। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
ঠিকই বলেছেন আপু। সব আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে।ধন্যবাদ প্রশংসামূলক মন্তব্যের জন্য।
শুভ নববর্ষের সেই অনুভূতি সেই উল্লাস সেই সুন্দর মুহূর্ত মানুষের সাজুগুজু সে দৃশ্যপট এখন খুব কম দেখা যায়। ছোট্টবেলায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান হতো অনেক মজা হতো পবিত্র মাহে রমজান মাস হওয়ায় সেই আমেজ নেই।
আশা করি আবার সেই আমেজ ফিরে আসবে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আপনাকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। নববর্ষ নিয়ে আপনি খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন। নতুন বছরকে খুব সুন্দর করে স্বাগত জানিয়ে গ্রহণ করা হচ্ছে নববর্ষ। তবে আপনি ঠিক বলেছেন নতুন বছরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পুরানা হিসাব করে নতুন বছর চালু করে। আর নতুন বছর নিয়ে কৃষকেরা অনেক কিছু আয়োজন করে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর করে নববর্ষ নিয়ে আমাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
শুভ নববর্ষ আপনার জন্য অবশেষে শুভেচ্ছা রইল। আপনি নববর্ষ নিয়ে খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন। তবে বাঙালির কিছু প্রাচীন ঐতিহ্যজ পোষ্টের মধ্যে তুলে ধরেছেন। তবে আপনি ঠিক বলেছেন নববর্ষ আসলে ব্যবসাগুলো পুরাতন হিসাব হালখাতা টেনে নতুন বছর চালু করে। আর কৃষকেরা নতুন বছর আসলে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে নতুন বছর পালন করে। সত্যি আপনার পোস্টের পরে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
দেখতে দেখতে একটি বছর চলে গেল। আজ বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ পদার্পন করলো। তবে এখন আর আগের মত নতুন বছর উৎযাপনের মাঝে আনন্দ নেই। যত বড় হচ্ছি তত আনন্দ গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
হ্যা ভাইয়া আসলেই দিন দিন সব আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আপনাকেও জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা। ঠিকই বলেছেন ভাইয়া বিদেশী সংস্থার জন্য আমাদের দেশীয় অনুষ্ঠান সাংস্কৃতিক সবকিছুই এখন ভুলে গেছে। আপনার মূল্যবান কথাগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনাকেও ধন্যবাদ সহমত পোষণ করার জন্য।