ছুটির দিনে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
ছুটির দিনগুলো অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু আলাদা হয় আমার জন্য। কারণ আমি সারা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করতে থাকি এই দিনটির জন্য। আর হয়তো এই অপেক্ষাটা আমার হাজবেন্ডও করে থাকে। কারণ সে একটু রেস্ট পায় এই ছুটির দিনে আর আমি একটু তার সাথে সময় কাটাতে পারি এবং ঘুরতে যেতে পারি। তাই সারা সপ্তাহ জুড়ে কাজ করতে থাকলেও এই ছুটির দিনে খুব তাড়াতাড়ি সংসারের সব কাজ করে ফেলি। আর কিছু কাজ তো এমন হয় যা আগের দিন করে এগিয়ে রাখি। তেমনি আজকে ছুটির দিনটা সকাল সকাল সংসারের সব কাজ করে রান্নাবান্না করে নিয়েছি তাড়াতাড়ি। তারপর যথারীতি একটু আলসেমিতে সময় কাটাতে লাগলাম দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে। হঠাৎ করেই মনে হলো অনেকদিন হলো গঙ্গার পাড়ে গিয়ে বসি না। গঙ্গার সুন্দর মনোরম দৃশ্য দেখতে বেশ ভালো লাগে। এবং তার সাথে ভালো লাগে এমন শান্তশিষ্ট পরিবেশে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকতে। তাই আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম গঙ্গারপাড়ে যাওয়ার কথা। আর সেও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। আমরা তখনই তৈরি হয়ে নিলাম বাইরে বেরোনোর উদ্দেশ্যে। বাইক নিয়ে সোজা চলে গেলাম আমাদের প্রিয় গঙ্গার ঘাটে। গঙ্গার ঘাটের এই জায়গাটার সাথে আমার প্রথম স্মৃতি খুবই বেদনাদায়ক কারণ আমি গঙ্গার এই ঘাটে প্রথম এসেছিলাম আমার মায়ের ঘাট কাজ করার জন্য।
তারপর থেকে যখনই এই ঘাটে এসেছি তখনই মায়ের কথাই মনে পড়ে। তবে বেশ দীর্ঘ সময় পর এসেছি গঙ্গা নদীর এই ঘাটে। আজকের পরিবেশটা বেশ সুন্দর লাগছিল। তবে কুকুরগুলো অনেক বেশি বিরক্ত করছিল। ঘুরে ঘুরে শুধু গায়ের কাছে এসে ঘষাঘষি করছে। আর চেটে দেওয়ার চেষ্টা করছে। না জানি ওর কতদিনের চেনা যেন দুজনকে পেয়েছে অনেকদিন পরে। যদিও আমরা এই ঘাটে এসে আগে এই কুকুরগুলোকে দেখিনি, এই কুকুরগুলোর সাথে আমাদের আজ প্রথম পরিচয় তাও এমন ভাবে পেছন পেছন ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন আমাদেরই কুকুর এরা। ঘাটের একপাশে সিড়িতে বসে একটু সুন্দর সময় কাটাচ্ছিলাম, আমরা ছাড়া আরও একজন মহিলা এবং পুরুষ ছিল সেখানে। মহিলাটা কিছুক্ষণ বাদে চলে গেলেও পুরুষটি সেখানেই বসেছিল। হঠাৎ করে দেখতে পেলাম নদীতে একটি সাপ যাচ্ছে। সাপটি দেখে কুকুরগুলোর সে কি লাফালাফি। এক দৌড়ে পেছন পেছন চলে গেল এমনকি গঙ্গার জলে পর্যন্ত নেমে গেল সাপটিকে ধরার জন্য। আমরা অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম কুকুর দুটি কিভাবে সাপটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল যেন তার বন্ধু পড়ে গেছে জলের মধ্যে আর তাকে বাঁচাতে হবে। আমার হাজব্যান্ড যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই কুকুরটি পেছন পেছন যাচ্ছে।
আবার মাঝে মাঝে যখন ভীষণ গরম লেগে যাচ্ছে তখন গঙ্গায় নেমে একটু গা ধুয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল গা ধুয়ে উপরে গা ঝাড়া দিলেই পুরো সেই নোংরা গায়ের জল আমাদের গায়ে এসে লাগতে পারে। তবে কুকুরগুলো এতটাই বুদ্ধিমান যে ওরা কখনোই আমাদের গায়ের কাছে এসে গা ঝাড়া দেয়নি। কিন্তু আমরা এদের জ্বালায় শান্তিতে একটু বসতেও পারছি না। কারণ যখনই একটু বসছি তখনই এরা এসে আমাদের একদম গা ঘেঁষে চলাফেরা করছে এবং জিভ দিয়ে চেটে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অবশ্য এরকম আচরণই এদের ভালোবাসার প্রকাশ। কারণ এরা খুব প্রভুভক্ত হয় তাই এরা ভালোবাসার মানুষ চিনতে পারে। তবে খুব বেশি বিরক্ত করছিল বলে কিছুক্ষণ পর লোকটি কুকুরগুলোকে ডেকে ডেকে সাথে করে নিয়ে চলে গেল। তখন আমরা একটু শান্তিতে বসে কিছু ফটো তুলছিলাম। আবার কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে গঙ্গা নদীর দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। এমন সময় দেখতে পেলাম কুকুরগুলো আবার চলে এসেছে। আমাদের এই গঙ্গা নদীর অপরপ্রান্তে বিস্তীর্ণ ভূমি রয়েছে যেখানে কোন বসতি নেই। এবং এই বিস্তীর্ণভূমির পরে রয়েছে কিছু ঘরবাড়ি এবং রাস্তা। তবে এই বিস্তীর্ণভূমিতে যেহেতু কেউ চলাফেরা করেনা বা ব্যবহার হয় না বলে সেখানে বড় বড় জংলি ঘাস এবং গাছপালা জন্মেছে।
তবে এই ঘাস গাছপালা দেখতে অনেক বেশি সুন্দর কারণ তারা একদম সমান উচ্চতায় রয়েছে। আমরা বসে বসে এমন দৃশ্য উপভোগ করতে করতেই দেখতে পেলাম আরেকটি সুন্দর দৃশ্য। আর এই দৃশ্য হল নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য। গঙ্গা নদীতেই একটি নৌকার ওপরে দুজন বসে মাছ ধরছিল। একজন মাছ ধরছে অপরজন নৌকাটি চালাচ্ছে। নৌকো চালাতে চালাতে প্রায় আমাদের সামনে থেকেই ঘুরে দিক বদল করলো। গঙ্গার এমন সুন্দর দৃশ্য দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। আজকের সারাদিনের সব থেকে সুন্দর মুহূর্ত ছিল এই গঙ্গার পাড়ে কাটানো সময়টা। গঙ্গার পাড়ে বসে এমন কিছু দৃশ্য এবং এমন কিছু মুহূর্ত উপভোগ করে বেশ ভালো লাগলো। আর তার সাথে আমাদের সঙ্গীরাও অর্থাৎ কুকুরগুলিও অনেক ভালো এবং সুন্দর স্বাস্থ্যবান ছিল। বেশ কিছুক্ষণ বসে সুন্দর সময় কাটানোর পর আমরা উঠে পড়লাম অন্য কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের এখানে যেহেতু বাড়ির কাছেই গঙ্গা নদী বয়ে গেছে তাই অনেকগুলো ঘাট রয়েছে পরপর। আর সেই প্রত্যেকটি গঙ্গার ঘাট ভীষণ সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশ রয়েছে। আমরা আবার উঠে পড়লাম আমাদের বাইকে এবং গঙ্গার ঘাট ছেড়ে চলে গেলাম অন্য কাজে।।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।