ফটোগ্রাফি পোস্ট-ঢাকা জাদুঘরে অজানা পাখির সাথে এক মনোমুগ্ধকর সাক্ষাৎ
আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি যে যেখানেই থাকেন না কেন বেশ ভালো আছেন। আমি নিজেও বেশ ভালো আছি। আর ভালো আছি বিধায় চলে আসলাম আজকে আপনাদের মাঝে পোস্ট করার জন্য। সত্যি বলতে কি এখানে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার পর হতে বেশ অন্য রকমের অনুভূতি হচেছ নিজের ভিতর। যা কাউকে বুঝানো যাবে না। আর সেই অনুভুতি নিয়েই আজ আমি নতুন একটি ব্লগ শেয়ার করার জন্য আসলাম। আমি ভাবছি প্রতি নিয়ত আপনাদের মাঝে আমার ভালো লাগার বিষয় গুলো নিয়েই ব্লগ শেয়ার করবো। যার জন্য আজ আমি ভাবছি একটি ফটোগ্রাফি ব্লগ শেয়ার করবো।

সত্যি বলতে ছেলেবেলা থেকেই সব সময় টুকটাক কিছু না কিছু ফটোগ্রাফি করে থাকি। কিন্তু সেই ফটেগ্রাফি করে যে এমন করে কোথাও নিজের অনুভূতি শেয়ার করা যায় সেটা আমার জানা ছিল না। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবৎ যখন কাছের মানুষটিকে এমন করে শেয়ার করতে দেখছি তখন ভাবছিলাম যে আমিও এখানে আমার প্রিয় কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করবো। আর আজ আমার সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় আমি সত্যি বেশ আনন্দিত। হয়তো আপনাদের কাছে আমার ফটোগ্রাফি ভালো লাগবে।
বেশ কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম সোনারগাঁ শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন জাদুঘরে। এই জায়গাটির নাম অনেক আগেই শুনেছিলাম, তবে সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। ভেতরে ঢুকেই মনে হলো সময় যেন একটু থমকে গেছে। অতীত আর বর্তমান এখানে একসাথে মিশে আছে, আর প্রতিটি কোণ যেন বলে যায় ইতিহাসের গল্প। আমি তখন ক্যামেরা হাতে নিয়ে হাঁটছিলাম, আর চোখে যা ধরা পড়ছিল তা ফ্রেমে বন্দি করে রাখছিলাম। প্রথমেই চোখে পড়ে একটি গ্যালারী। সেখানে সাজানো ছিল নানা রকম পুরোনো জিনিসপত্র। পুরোনো দিনের ব্যবহার্য জিনিসগুলো দেখে মনে হলো আমি যেন ফিরে গিয়েছি কয়েক শতক আগের জীবনে। আধুনিক জীবনে যেসব জিনিস ভুলে গেছি বা হারিয়ে ফেলেছি, এখানে সেগুলোকেই যেন নতুন করে খুঁজে পেলাম। প্রতিটি জিনিসপত্রের মাঝে এক ধরনের শান্তি লুকিয়ে আছে, যা ফটোগ্রাফির জন্য অনন্য উপাদান হয়ে ওঠে।

গ্যালারীতে সবচেয়ে যেটা আমার মন কেড়েছিল তা হলো নৌকা। কাঠের তৈরি সেই নৌকাগুলো দেখতে যেন একেকটা শিল্পকর্ম। বাংলাদেশের নদীমাতৃক জীবনের এক অপরিহার্য অংশ এই নৌকা, যা শুধু পরিবহনের মাধ্যম নয় বরং সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতীকও বটে। আলোছায়ার খেলায় নৌকার গায়ে পড়া দাগগুলোকে যখন ক্যামেরায় তুললাম, মনে হলো সেই ছবিগুলো কথা বলছে। এক সময় এই নৌকাতেই কত মানুষের যাত্রা, কত গল্প, কত হাসি কান্না জমে ছিল তা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। এরপর নজরে এলো মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল। এগুলো দেখতে সাধারণ মনে হলেও ফটোগ্রাফির দিক থেকে দারুণ আকর্ষণীয়। মাটির টেক্সচার, রঙ আর আকৃতি এমনভাবে মিশে আছে যে, ছবিতে ধরে রাখলে একেবারেই ভিন্ন আবহ তৈরি হয়। আধুনিক রান্নাঘরের ধাতব বা প্লাস্টিকের জিনিসের তুলনায় এগুলো অনেক বেশি প্রাণবন্ত মনে হয়। ক্যামেরার লেন্সে যখন এগুলোকে কাছ থেকে ধরলাম, প্রতিটি ভাঁজ আর রেখা যেন নিজের গল্প শোনাতে চাইছিল। মনে হচ্ছিল, গ্রামের মানুষদের সহজ সরল জীবনের প্রতিচ্ছবি আমি ছবির মধ্যে ধরে রাখছি।

এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল কাঠেঁর ঢেকি। আগে যেটা দিয়ে ধান ভাঙা হতো, আজ সেটি শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঢেকি দেখে মনে হলো গ্রামীণ জীবনের পরিশ্রম আর সংগ্রামের এক বাস্তব প্রতীক। যখন ছবি তুলছিলাম, মনে হচ্ছিল এর ভেতর দিয়ে গ্রামীণ নারীদের পরিশ্রমী দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কল্পনায় যেন শুনতে পাচ্ছিলাম ঢেকির ছন্দময় আওয়াজ। ছবির মধ্যে সেই অনুভূতি ধরে রাখার চেষ্টা করলাম। আরও একটি জিনিস আমাকে বিশেষভাবে টেনেছিল, সেটি হলো পুরোনো দিনের ঢোল। ঢোল শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, এটি আনন্দ আর উৎসবের প্রতীক। বিয়ের শোভাযাত্রা হোক কিংবা কোনো গ্রামীণ উৎসব, ঢোলের শব্দেই জমে উঠত আসর। জাদুঘরে রাখা সেই ঢোলটির দিকে তাকিয়ে মনে হলো আমি যেন শুনতে পাচ্ছি ঢাকঢোলের তালে মানুষের উচ্ছ্বাস। ছবিতে এটিকে ধরার সময় ফ্রেমে এমনভাবে সাজালাম যাতে তার পুরোনোত্ব আর ইতিহাস স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জাদুঘরের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে বারবার মনে হচ্ছিল, প্রতিটি জিনিস শুধু প্রদর্শনী নয়, বরং জীবন্ত ইতিহাস। আমার ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে এগুলোকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছিলাম। প্রতিটি ক্লিক শুধু একটি ছবি নয়, বরং একেকটি অনুভূতির প্রতিফলন হয়ে উঠছিল। এমনকি আলো আর ছায়ার খেলায় প্রতিটি ছবির মধ্যে অন্য রকম প্রাণ তৈরি হচ্ছিল। আমি যখন ছবিগুলো তুলছিলাম তখন লক্ষ্য করলাম, শুধু জিনিস নয়, পুরো পরিবেশটাই ছবির অংশ হয়ে যাচ্ছে। চারপাশের নীরবতা, মৃদু আলো, আর মাঝে মাঝে ভেসে আসা মানুষের কণ্ঠস্বর সবকিছু ছবির আবহকে আরো সমৃদ্ধ করছিল। মনে হচ্ছিল, আমি শুধু দৃশ্য নয়, সময়কেও ক্যামেরায় ধরে রাখছি।

সোনারগাঁ জাদুঘর আমাকে শিখিয়েছে ফটোগ্রাফি শুধু ছবি তোলা নয়, বরং অনুভূতিকে বন্দি করা। প্রতিটি ছবির ভেতর আমি যে আনন্দ, কৌতূহল আর বিস্ময় অনুভব করেছি, তা ছবিগুলোকেও বিশেষ করে তুলেছে। এমনকি সাধারণ মাটির হাড়ি পাতিল কিংবা কাঠেঁর ঢেকির ছবি তুলেও মনে হয়েছে আমি ইতিহাসের সাথে কথা বলছি। ভ্রমণ শেষে যখন ফিরে এলাম, তখন আমার ক্যামেরায় শুধু কয়েকটি ছবি নয়, বরং অনেক স্মৃতি জমা হয়ে ছিল। প্রতিটি ছবি আমাকে আবার সেই মুহূর্তে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আমি যখন সেগুলো দেখি, মনে হয় সোনারগাঁর সেই দিন এখনো আমার চোখের সামনে। এই ছবিগুলো শুধু স্মৃতি নয়, বরং সময়ের ভেতর লুকিয়ে থাকা গল্প, যা আমি নিজের মতো করে ধরে রাখতে পেরেছি।

জাদুঘরের ভেতরের অভিজ্ঞতা আমাকে ফটোগ্রাফির নতুন দিক চিনতে সাহায্য করেছে। আগে আমি ভাবতাম ছবি শুধু সুন্দর দৃশ্য ধরার মাধ্যম, কিন্তু এখন বুঝি প্রতিটি ছবির ভেতর লুকিয়ে থাকে গভীর অনুভূতি। নৌকা, হাড়ি পাতিল, ঢেকি বা ঢোল—প্রতিটি জিনিস ফ্রেমে ধরা পড়লেও, আসলে তার ভেতরে ধরা পড়ে মানুষের জীবন আর ইতিহাস। সোনারগাঁ শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন জাদুঘর শুধু ঘোরার জায়গা নয়, এটি ফটোগ্রাফির জন্য এক অনন্য বিদ্যালয়। এখানে এসে আমি শিখেছি ছবির ভেতর কিভাবে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর মানবিক আবেগকে ধারণ করা যায়। আমার জন্য এটি শুধু ভ্রমণ নয়, বরং এক গভীর অভিজ্ঞতা, যা আমাকে নতুনভাবে ছবি দেখার চোখ দিয়েছে।

জানিনা আমার আজকের ফটোগ্রাফি গুলো আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আমার কাছে কিন্তু প্রতিটি ফটোগ্রাফি বেশ ভালো লেগেছে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | ফটোগ্রাফি |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y22s |
পোস্ট তৈরি | @kawsar7731 |
লোকেশন | ঢাকা , বাংলাদেশ |
পরিচিতি
আমি কাউছার আহমেদ। আমার ইউজার নাম @kawsar7731। আমি পেশায় একজন চাকুরী জীবি। ঘুরে বেড়াতে আর প্রিয় মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলতে আমি বেশ পছন্দ করি। তবে সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে এবং গল্প করতে। নতুন কে আবিস্কার করা এবং নতুন কে নিয়ে এগিয়ে চলতেও আমি বেশ পছন্দ করি।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
