অধিক জনগণ সমস্যা নাকি সম্পদ।।

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই, আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। পৃথিবীতে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৮১৯ কোটি বা ৮.১৯ বিলিয়ন। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা বছরে প্রায় ০.৮৫% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রতি বছর আনুমানিক ৭ কোটি মানুষের বৃদ্ধি হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যা ২০৮০-এর দশকে প্রায় ১০.৩ বিলিয়ন তথা ১০৩০ কোটিতে পৌঁছাবে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ বা বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশসমূহের মধ্যে এক নাম্বারে রয়েছে ভারত। যার জনসংখ্যা প্রায় ১৪৬ কোটি বা ১.৪৬ বিলিয়ন। এরপর রয়েছে চীন, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৪২ কোটি বা ১.৪২ বিলিয়ন।

একটি দেশে অধিক জনগণ থাকা কখনো কখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা গেলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই অধিক জনসংখ্যাকেই একটি শক্তিশালী সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে অনেক সময় বোঝা মনে করা হয়। চাকরির সংকট, খাদ্য ঘাটতি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সংকট, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদির কারণে। কিন্তু বাস্তবে, জনগণই একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি। যদি জনগোষ্ঠীর দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়, তাহলে সেটিই হতে পারে একটি দেশের অগ্রগতির প্রধান নিয়ামক।

বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ আজ তাদের জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো চীন। এই বিশাল জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে, চীন সরকার তাদের জনগণকে শিক্ষিত, প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বহু বছর ধরে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলেই চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তাদের রপ্তানি নির্ভর শিল্প, উৎপাদনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পেছনে আছে দেশের বিপুল পরিমাণ দক্ষ শ্রমশক্তি।

আরেকটি উদাহরণ হলো ভারত। ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, এবং তারা এই জনসংখ্যাকে 'ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড' হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি, কল সেন্টার, স্টার্টআপ এবং বৈদেশিক আউটসোর্সিং খাতের অগ্রগতির পেছনে রয়েছে তাদের যুব সমাজের বিশাল অংশ, যারা প্রযুক্তিতে দক্ষ ও উদ্যমী।

একইভাবে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশও জনসংখ্যাকে সমস্যা নয়, বরং সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে কয়েক লক্ষ নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে, যাদের কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশের জনসংখ্যা যদি সুশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান হয়, তাহলে তারা কেবল চাকরি প্রার্থী নয়, বরং চাকরি প্রদানকারী হতে পারে।

তবে এ সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি-

প্রথমেই রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ: অশিক্ষিত বা আধাশিক্ষিত জনসংখ্যা অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মানোন্নয়ন এবং কর্মমুখী প্রশিক্ষণ জরুরি।

দ্বিতীয় নাম্বারে রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা: সুস্থ সবল মানবসম্পদই উৎপাদনশীল হতে পারে। দুর্বল রোগা মানুষ উৎপাদন করতে পারে না।

তৃতীয় নাম্বারে রয়েছে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও সহজ ব্যবসা পরিবেশ: নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিলে তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। সেই সাথে স্বাবলম্বী হতে পারে হাজার হাজার মানুষ।

চতুর্থ নামার উন্নত অবকাঠামো ও প্রযুক্তি: প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করে। রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, অধিক জনগোষ্ঠী তখনই একটি দেশের জন্য বোঝা হয়, যখন তারা অদক্ষ, বেকার ও অসুস্থ থাকে। কিন্তু যদি রাষ্ট্র তাদের মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারে, তবে সেই দেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

এখন সময় আমাদের নিজেদের দিকে তাকানোর। আমরা কি আমাদের জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করতে পারছি? নাকি এখনো তাদের সমস্যার অংশ হিসেবে দেখছি? প্রশ্ন রইল সবার কাছে।

Image Source- https://pixabay.com/photos/pedestrian-feet-steps-people-road-8037900/

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।