ভূমিকম্পের ভয়াবহতা ও আমাদের করণীয়।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত কয়েকদিন ধরে ব্যক্তিগত কারণে মনটা বেশ খারাপ। পরাপর দুজন কাছের মানুষকে হারিয়েছি এই কদিনে। সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তবে আস্তে আস্তে পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আজ সকালে হঠাৎ করে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখতে গিয়ে জানতে পারলাম তুরস্ক এবং সিরিয়াতে ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। সেখানে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছে। খবরটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। তারপর ইউটিউবে এই ভূমিকম্প সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম ভিডিও দেখতে লাগলাম।

Polish_20230207_213558452.jpg

সেই ভিডিও গুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ করে একটি ভিডিওতে চোখ আটকে গেলো। ভিডিওটি আমাদের দেশের একটি নিউজ চ্যানেলের টকশোর ভিডিও। যখনই বড় কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয় তখন এই ধরনের টকশো আমরা দেখতে পাই। সেই টক শো এর বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশে এই মাত্রার ভূমিকম্প হলে অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে? সেই টকশোতে একজন অতিথি ছিলেন যিনি আমার বেশ পছন্দের একজন মানুষ। তিনি হচ্ছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। বিভিন্ন সময় দেখেছি দেশের যেকোনো দুর্যোগে তিনি বেশ ভালো ভূমিকা পালন করেন।

তবে এই টক শো এর কথাগুলি শোনার পরে বুঝতে পারলাম আমরা আসলে কতটা বিপদজনক অবস্থায় রয়েছি। বিশেষ করে ঢাকা শহরের বাসিন্দা যারা রয়েছেন তারা। তাদের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম ১৯১৮ সালে একবার এই অঞ্চলে অনেক বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো। প্রতি ১০০ বছর পর নাকি আবার সেই ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল অনেক বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। আর অবশ্যই এই ঝুঁকির লিস্টে সবচাইতে উপরে ঢাকা শহরের নাম। কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন এই শহরটাকে এমনিতেই ডিনামাইটে পরিণত করেছে।

তবে এই টকশো থেকে নতুন আরো একটা দিক জানতে পারলাম। সেটা হচ্ছে ঢাকা শহরের মাটির নিচ দিয়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা গ্যাসের লাইনের কথা। তাদের আলোচনা থেকে এই বিষয়টা বুঝতে পারছিলাম যে ভূমিকম্পের ফলে যত মানুষ মারা যাবে। তার থেকে বেশি মানুষ মারা যাবে এই গ্যাসের লাইনগুলোর থেকে তৈরি বিস্ফোরণের ফলে। এমনিতেই ঢাকা শহরের বিল্ডিং গুলো বেশিরভাগই বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হয়। দুটি বিল্ডিং এর মধ্যে যে পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখার কথা সেটা নেই বললেই চলে। ভূমিকম্প হলে মানুষ যে একটি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই জায়গাও ঢাকা শহরে নেই। যার ফলে যদি কোন মানুষ ভূমিকম্প বুঝতেও পারে। তারপরেও সে নিরাপদ জায়গায় সরার কোন সুযোগ পাবে না। কারণ সেই নিরাপদ জায়গাটাইতো নেই।

শুনতে পাই প্রায় দুই কোটির উপরে লোকের বসবাস এই ঢাকা শহরে। বিশ্বের সবচাইতে জনবহুল শহরের ভেতরে একদম উপরের দিকে নাম থাকে ঢাকা শহরের। যার ফলে এখানে যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা হবে অনেক বেশি। আবার যদি কোন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যায় বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাহলে ভবনে আটকে পড়া লোকজনের সাহায্য করার মত লোকজনের প্রচন্ড অভাব রয়েছে। কারন এই সমস্ত কাজে আমাদের দক্ষতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

যে দেশটি প্রচন্ড ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের উচিত ছিল ভাল মানের রেসকিউ টিম গঠন করা এবং তাদের সর্বোচ্চ মানের লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা। কিন্তু যখনই কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তখন শুধু টকশোতে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়। তারপর সবাই সবকিছু ভুলে গিয়ে আগের মতই অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১০০ বছরের হিসাবটা শোনার পর থেকেই মাথার ভেতরে মনে হচ্ছে একটি ঘড়ি চালু হয়ে গিয়েছে। সেই ঘড়ির কাটাটা একটু একটু করে এগিয়ে চলছে। আর মনে হচ্ছে আমাদের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে।

অবশ্য সমস্যা যে শুধু ঢাকা শহরে হবে তা নয়। ঘনবসতিপূর্ণ প্রত্যেকটা শহরাঞ্চল এই বিপদের সম্মুখীন হবে। আমাদের শহরটা এক সময় বেশ নিরিবিলি ছিল। কিন্তু এখন যেদিকে তাকায় শুধু উঁচু উঁচু দালান কোঠা দেখতে পাই। আমাদের শহরের অবস্থাও অনেকটা ঢাকার মত হয়ে গিয়েছে। ভূমিকম্প হলে আপনি যে নিরাপদ কোথাও গিয়ে দাঁড়াবেন সে জায়গাটা এখন খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর এই ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেটা আগে থেকে বুঝতে পারা সম্ভব না। একমাত্র সঠিক বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা এবং সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই বিপদ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা যেতে পারে।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

ভাইয়া কেমন আছেন? আসলে আপনাকে সান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা আমার জানা নেই। আশা করি অতিদ্রুত সকল শোক কাটিয়ে আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। খুব যুগ উপযোগি একটি পোস্ট করেছেন আপনি। আসলেই ইউটিউব এ তুরস্ক আর সিরিয়ার ভয়াবহ অবস্থা দেখে নিজেদের জন্য বেশ চিন্তায় হয়। ২ কোটি মানুষের বসবাস এই ঢাকায়। কি হবে যদি একবার ভূমিকম্প হয়?

এই মাপের ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহর স্রেফ একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

 2 years ago 

আসলে কাছের মানুষ যদি পরপারে চলে যায় তাহলে মন খারাপ হওয়ারই কথা। তবুও বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে। হয়তো সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। যাইহোক ভাইয়া ভূমিকম্পর ভয়াবহতা হয়তো আমরা এখনো সেভাবে দেখিনি তবে ১০০ বছর পর যদি ভয়াবহ কোন ভূমিকম্প হয় তাহলে সত্যি অনেক ভয়ানক কিছু হতে পারে। অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা, জনবসতি সেই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারবে না। আসলে সেই সময়টাতে গিয়ে আরো বেশি অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে উঠবে। এখন থেকে যদি সব নিয়ম কানুন মেনে নগর গড়ে ওঠে এবং উঁচু বিল্ডিং গুলো গড়ে ওঠে তাহলে হয়তো সাধারণ মানুষগুলো রক্ষা পাবে।

আপু এখন থেকে ১০০ বছর পরে না ১৯১৮ সালে আমাদের এই অঞ্চলে বড় মাপের ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই হিসেবে ইতিমধ্যে ১০০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। আমরা আসলে এখন একটি বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আছি।

 2 years ago 

সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা কর এমন ভুমিকম্প যেন এ দেশে কখনো না হয় তাহলে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ঢাকা শহর কমপক্ষে আগামী ৫০ বছরের জন্য বাসযোগ্যতা হারাবে । আর উদ্ধার তৎপরতার কি অবস্থা হবে তাতো আমরা রানা প্লাজা থেকেই জানতে পেরেছি।

একদম ঠিক বলেছো। যে দেশের একটি বিল্ডিং এর উদ্ধার তৎপরতা চালাতে দুই মাস সময় লেগে যায়। সেই দেশে লক্ষ লক্ষ বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়লে তখন কি একটা ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেটা চিন্তা করতেই গা শিউরে উঠছে।

 2 years ago 

তুরস্ক এবং সিরিয়াতে ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো আর সেই ভূমিকম্পে অনেক লোক মারা গেছে এবং অনেক বিল্ডিং ধুলোয় মিশে গেছে। ভূমিকম্পের কয়েকটি ভিডিও দেখলাম এটা দেখে আসলে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। আসলে আপনার পোস্টটি পড়ে অনেকটা ভয়ও পেলাম কারণ 100 বছর পর যদি ১০০ বছর আগের ভূমিকম্পটি হয়, তাহলে বাংলাদেশের কি পরিমান ক্ষতি হবে সেটাই ভাবছি। কারণ বাংলাদেশে তো আর পরিকল্পনা বা পরিকল্পিত সিকিউরিটি না মেনে বিল্ডিং তুলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর ঢাকা শহরে যে পরিমাণ বিল্ডিং রয়েছে বিশেষ করে পুরান ঢাকায়, এগুলোতো হালকা নাড়াচাড়া পড়লেই এসব ধুলোয় মিশে যাবে। আর ছড়ানো ছিটানো ঢাকা শহরে গ্যাস পাইপ গুলোর কথা বলছি। সেটা যদি বিস্ফোরণ হয় তবে সেগুলোকে নেভানোর মত ক্যাপাসিটি থাকবে কিনা সেটাও সন্দেহাতিত। এদিক থেকে ভূমিকম্পে যে শহরের মানুষ একটা নিরাপদ জায়গাতে বাসস্থান নিবে বা আশ্রয় নিবে সেই জায়গাটুকু ফাঁকা নেই ঢাকা শহরে। তাই একটু চিন্তিত হয়ে গেলাম আপনার পোষ্টটি পড়ে। তবে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন ধন্যবাদ ভাই।

এই ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহর একটা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। সেখান থেকে কোন লোক বেঁচে বের হতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। হয় ভূমিকম্পে মারা যাবে না হলে আগুনে পুড়ে মারা যাবে।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাই যে যেভাবে পারছে সেভাবে গ্যাসের লাইন টেনে নিচ্ছে। আবার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে বড় বড় বিল্ডিং তুলছে, ফলে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে।

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া খুব খারাপ লাগলো ভূমিকম্পের কথা শুনে। যদিও কয়েকটি ভিডিও দেখেছিলাম আর সেখানে দেখতে পেলাম বাড়িঘর ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গিয়েছে। তবে এটা ঠিক ঢাকা শহরে যে পরিমাণ ঘনবসতি যদি এই রকম ভূমিকম্প হয় তখন কিন্তু মানুষ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ ও জায়গা পাবে না। ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য।

এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ঢাকা শহরের কি অবস্থা হবে সেটা চিন্তা করে আসলেই আতঙ্কিত বোধ করছি। কারণ ঢাকাতে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। পুরো দেশের জন্য একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বড় কোন ভূমিকম্প হলে।

 2 years ago 
আসলে মানুষ মরার কথা শুনলে এভাবেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।আর কাছের মানুষ হলে তো কথাই নেই।তাই প্রথমে আপনার আত্নীয়দের জন্য দোয়া করি,আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের জান্নাত দান করেন এবং আপনাদের ধৈর্য্য ধারন করার শক্তি দিয়ে থাকেন।আসলেই ইউটিউব এ তুরস্ক আর সিরিয়ার ভয়াবহ অবস্থা দেখে আমাদের মাঝেও এর ভয়াবহতা অনুভব হয়েছে।কারন সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ন শহরের মধ্যে ঢাকাও আছে।এমনকি আমাদের এ দেশে কোন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে তা উত্তরনের কোন দক্ষ লোকবলও নেই।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া,এত সুন্দর করে এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

ঢাকা শহরকে এখন আমার মনে হয় কোন একটি আগ্নেয়গিরির মত। যেটার যেকোনো সময় বিস্ফোরণ হবে।

 2 years ago 

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই অবগত আছি, দাদা। ভূমিকম্পের ভয়াবহতা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আমরা নিউজে সব সময় দেখতে পাই। অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা থাকলে ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয় কাজগুলো করতে সবারই অসুবিধা হবে যদি এরকম কোন সিচুয়েশন ঘটে। ভূমিকম্প ঘটলে খোলা জায়গায় গিয়ে সবাইকে আশ্রয় নিতে হয় কিন্তু সেরকম কোনো জায়গা নেই অপরিকল্পিত শহর ব্যবস্থায় যা সত্যি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্যাপার। সর্বোপরি সরকারকে এই বিষয়ে সব থেকে সচেতন হওয়া জরুরী।

যাদের সচেতন হওয়া জরুরি তারা তো রীতিমতো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। অবশ্য তাদের খুব বেশি চিন্তাও নেই। কারণ তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য দেশের বাইরে অবস্থান করে।

 2 years ago 

হ্যাঁ দাদা একদম ঠিক কথা বলেছেন।