মাইলস্টোন কলেজের মেইন ক্যাম্পাসের (দিয়াবাড়ি) স্মৃতিময় দিনগুলো

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলে ভালো আছেন। দুদিন আগে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের মেইন কম্পাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। সেই বিষয় সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত আছেন। তাই আমি আর সেই বিষয়ে কোন কথা বলবোনা। আমি মাইলস্টোন কলেজের মেইন ক্যাম্পাসের স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।


dcampus.jpg

কলেজের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত Source


২০১১ সালে আমি মাইলস্টোন কলেজে ইন্টার প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। তখন আমি ওসমানী হল নামে কলেজের একটি ছাত্রাবাসে থাকতাম। সেটি ছিল উত্তরা ১১ নাম্বার সেক্টরের ১০/এ রোডে। শহীদ মনসুর আলী হসপিটালের কাছেই। আমাদের হল থেকে আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়াগামি রাস্তার স্লুইচগেট, তুরাগ নদী, এবং ইজতেমা মাঠ খুব সুন্দর মতো দেখা যেত। সৌভাগ্যজনক ভাবে এখনো তা দেখা যায়।

দিয়াবাড়ির বর্তমানে যেখানে মেইন ক্যাম্পাস অবস্থিত, অর্থাৎ যেখানে বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেখানে কেবলমাত্র দুটি বিল্ডিং ছিল। স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখাশুনা করার জন্য কয়েকজন স্টাফ ছিল সেখানে। কোন ক্লাস হতোনা সেখানে। খেলাধুলার মাঠ ছিল এবং আমরা প্রতি শুক্রবার সেখানে খেলাধুলা করার জন্য যেতাম। তাছাড়া আমাদের কলেজের অনুষ্ঠানগুলো সেখানে অনুষ্ঠিত হতো। যেমন, স্পোর্টস, নবীন বরণ অনুষ্ঠান, বিদায় অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বড়বড় অনুষ্ঠানগুলো সেখানে অনুষ্ঠিত হত।

১১ নাম্বার সেক্টরের শেষে যে খালটি রয়েছে সেই খালের পর আর তেমন কোন বড় বড় বিল্ডিং ছিলনা। বর্তমানে যেখানে মেট্রোরেল অবস্থিত, সেখান থেকে খালপাড় পর্যন্ত ছিল গাড়ির গ্যারেজ এবং ড্রাইভিং শেখানো প্রতিষ্ঠান। আমরা মাঝে মাঝে ড্রাইভিং গ্যারেজের মাঠেও খেলতাম। আমার মনে আছে, বর্তমানে যেখানে মেট্রো স্টেশনে স্থাপিত হয়েছে, সেখানে রাস্তার মাঝখানে একটি মসজিদ ছিল। যার কারনে দুপাশের রাস্তাকে সংযোগ দেওয়া যায়নি। বর্তমান মেইন ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় রিক্সা যেতে চাইতোনা। আমরা খুব অনুনয় করে তাদেরকে নিতাম।

দিয়াবাড়ির ওই এলাকাটা কাশফুলের জন্য বিখ্যাত। তখনও সেখানে কাশফুল ছিলো। কিন্তু ভয়ে দেখার জন্য কেউ যেতনা। এমনই ছিল দিয়াবাড়ির অবস্থা। কলেজের সেই মাঠ আমার অনেক স্মৃতি বিজড়িত মাঠ। কারন আমরা অনেক ক্রিকেট, ফুটবল সেখানে খেলেছি। হোস্টলের অধিনায়কত্ব করেছি। কলেজের অনেক অনুষ্ঠানে সেখানে গিয়েছিলাম।

২০১৩ সালে উত্তরা ছেড়ে আসার পর সেখানে আর যাওয়া হয়নি। ২০১৭ সালে আমার সার্টিফিকেট তুলার জন্য আমি ১১ নাম্বার গরিব-এ-নেওয়াজ এভিনিউতে অবস্থিত মেইন বিল্ডিং-এ যাই(মেইন ক্যাম্পাস দিয়াবাড়ি। মেইন বিল্ডিং ১১নং সেক্টরে)। তখন আমি আমার ফর্ম মাস্টারের সাথে দেখা করতে চাইলে, রিসিপশনে বসা আপুটি আমাকে জানান আমার ফর্ম মাস্টার যিনি ছিলেন তিনি তখন মেইন ক্যাম্পাসের দায়িত্ব পালন করছেন। আমি তার কাছ থেকে স্যারের নাম্বারটি নিয়ে স্যারকে ফোন দিলে তিনি জানান তিনি মেইন ক্যাম্পাসে আছেন।

২০১৩ সালের পর ১৭ সালে আমি তখন প্রথম এবং শেষবারের মতো দিয়াবাড়ি গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে আমি খুব অবাক হয়েছি। এই চার বছরে কত উন্নত হয়েছে উত্তরা! দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাস আমি চিনতেই পারিনি। কয়েকটি ভবন উঠেছিল সেখানে। পুরোদস্তুর ক্লাস চলছে। দেখে বেশ ভালো লাগলো। কারণ আমাদের সময় মাঠ থাকার কারণে খুব করে চাইতাম সেখানে ক্যাম্পাস হোক, হোস্টেল হোক। আমরা সেখানে থাকবো। কারণ তাহলে আমরা প্রতিদিনই খেলতে পারতাম।

যাইহোক, স্যারের সাথে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বললাম। তিনি আমার সাথে অনেক গল্প করলেন। তিনি আমাকে জানালে আমাদের সময় যেই অবস্থা ছিল তা থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। অবশ্য তিনি না বললেও তা আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। অবাক করা তথ্যটি তিনি যা জানালেন, তা হচ্ছে, আমরা যে মাঠটি দেখেছি, যেই মাঠে খেলেছি, তখন যে দুটি ভবন ছিল, এগুলো সবই মাটির নিচে চলে গেছে। একতলা সমান উঁচু করা হয়েছে কলেজ মাঠ, পুরো ক্যাম্পাস। আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। কিন্তু খুশিও হয়েছি। শত হোক, মাইলস্টোন কলেজ আমার হৃদয় গেঁথে আছে। আমি আজকে যে পর্যায়েই থাকি না কেন, আমাকে এই পর্যায়ে আনার পেছনে কলেজের শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। তাই যখন এই দুর্ঘটনার কথা আমি শুনেছি, খুব কষ্ট পেয়েছি। মনে হয়েছিল দুর্ঘটনায় আহত-নিহতরা যেন আমার আপন ছোট ভাই-বোন। সে বিষয়ে অবশ্য কথা বলতে চাচ্ছিনা। ভালো থাকবেন।


gif.gif

Sort:  
 5 days ago 
 5 days ago 

মাইলস্টোন কলেজের দিয়াবাড়ি তো আপনার তাহলে অনেক পরিচিত একটি জায়গা। সেখানে ঘটে যাওয়া এই বিমানের দুর্ঘটনা প্রতিটি বাংলাদেশীকে কাঁদিয়েছে। আসলেই আমাদের কোমলমতি ছোট ছোট ভাই বোন গুলো কিভাবে চলে গেল। যতবার এই ঘটনার কথা মনে পড়ে ততবার যেন চোখে বেয়ে যাও চলে আসো। কি যে হয়ে গেল। যেখানে এক সময় হাজার হাজার শিশু খেলা করত ক্লাস করত সেখানে আজ মৃত্যুপুরী। ভাবলেই খারাপ লাগে।

 4 days ago 

হুম, দিয়াবাড়ি অনেক পরিচিত। আর হ্যাঁ, কোমলমতি ছেলেমেয়েদের মৃত্যু খুবই হৃদয়বিদারক।