শৈশবের স্মৃতি।

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

শুভেচ্ছা সবাইকে।

কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।প্রত্যাশা করি সবাই সবসময় ভালো থাকেন,নিরাপদে থাকেন। আজ ৬ই জ্যৈষ্ঠ,গ্রীষ্মকাল ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে মে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ। আজ শৈশবের হাজারও স্মৃতির মধ্য থেকে একটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

c1.jpg

source

প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে শৈশবের স্মৃতি বেশ গুরুত্বপুর্ন। সে সকল স্মৃতি কোনটা যেমন মধুর তেমনই ্কোনোটা বেদনার। তবে শৈশবের স্মৃতিগুলো যখন মনে পরে তখন অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে।বেশ ভালো লাগে শৈশবের বিভিন্ন স্মৃতিগুলো নিয়ে কথা বলতে। আজ তেমনই একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

আমি তখন সম্ভবত থ্রিতে পড়ি ডিসেম্বর মাস। রেজাল্ট দেয়া হয়েছে ফাইভে উঠেছি। নতুন ক্লাস শুরু হবে জানুয়ারিতে। নতুন বছরে নতুন স্কুল ড্রেস সাথে নতুন জুতা। তখন আমদের স্কুল স্যু ছিল বাটার সাদা পিটি স্যু। কিনে আনা হয়েছে স্যু ।প্যাকেট সহ রাখা হয়েছে আলনায়। তখন স্যু রেক এর চল তেমন ছিল না। আলনায়ই কাপড় রাখার পাশাপাশি নিচে স্যু রাখার ব্যবস্থা ছিল। সেখানেই রাখা ছিল।

আমার ছোট দু' ভাই সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে ।পিঠাপিঠি দু'জন তাই একই ক্লাসে ভর্তি করান হয়েছে । যাতে স্কুলে যেতে পাছন্দ করে ।কান্নাকাটি না করে। বয়স একজনের ৫ আর একজনের ছয় বছর।তখন ছেলে ধরার গল্প বেশ শোনা যেতো। তাই আমার ভাইদের আমার বড় ভাই স্কুলে আনা নেয়া করতো।

এক রাতে আমার আব্বা এক ৮ বয়সী ছেলেকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলো। আব্বা বলল যে বাজারে বসে ছেলেটি কান্না করছিল। এবং আব্বার কাছে টাকা চাইছিলো কিছু খাওয়ার জন্য। আব্বা ছেলেটির সাথে কথা বলে ছেলেটিরবিভিন্ন তথ্য নেয়ার চেস্টা করলো। কিন্তু ছেলেটি কিছুই বলতে পারছিলো না। এবং আব্বাকে ছাড়তেও চাইছিলো না। বলছিলো সে বাসা থেকে হারিয়ে গেছে বাসার ঠিকানা জানে না। তাই আব্বার ছেলেটির কথা শুনে মায়া হলো।দেখতে বেশ সুন্দর ছিল ছেলেটি। এবং বেশ ভদ্র। আব্বা ভাবলো কাল থানায় দিয়ে আসবে আজ রাতে আমাদের বাসায় রেখে। ছেলেটিকে দেখে আম্মা বেশ বিরক্ত হলো। অপরিচিত এক ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য। কেননা আম্মার ছিল ছেলে ধরার ভয়। তখন প্রায়ই খবরে আসতো ছোট বাচ্চাদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করে ছোট ছেলে মেয়েদের চুরি করে । তাই ভয় পাচ্ছিল আম্মা। কিন্তু যখন আব্বা নিয়ে এসেছে তখন ছেলেটিকেতো আর রাতে বাহিরে বের করে দিতে পারে না। তাই রাতে বাসায় খাওয়া দাওয়া করিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হলো। আর ছেলেটিকে পেয়েতো আমার ভাইয়েরা বেশ খুশি। খেলতে বসে গেলো ছেলেটির সাথে। আম্মা রাতের বেলায় বাসার গেটে তালা মেরে চাবিটি তার খাছে রেখে দিলেন। যেন ছেলেটি বের হতে না পারে।

সকাল বেলায় আব্বা এক জরুরি কাজে বের হয়ে গেলেন। আর আম্মাকে বলে গেলেন ছেলেটিকে চোখে চোখে রাখতে বাসায় এসে বিকালে ছেলেতিকে নিয়ে থানায় যাবেন। যথারীতি সকালে আমার ভাইয়ারা স্কুলে গেলো এবং স্কুল শেষে ফিরেও এলেও। খেয়ে দেয়ে ঘুম থেকে উঠে খেলতে গেলো মাঠে।হঠাৎ বাসায় নিয়ে আসা ছেলেটির খোঁজ় করলো আম্মা। কিন্তু ছেলেটিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।আমার বড় ভাই মাঠে গিয়ে দেখলো যে আমার ছোট ভাইয়ারা আছে নাকি ছেলে্টি নিয়ে গেছে। কিন্তু ভাইয়াদের দেখতে পেয়ে সবাই স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলল। এরপর খোঁজ শুরু হলো বাসায় কিছু খোয়া গেছে কিনা। তেমন কিছুই হারায়নি। বাবার পকেট থেকে ২০০ টাকার মতো মিসিং। কিন্তু কিছুক্ষন পর আমার চোখ গেলো আলনার দিকে। সেখানে আমার নতুন স্কুলের জুতা নেই। সারা বাড়ি খুঁজে যখন পাওয়া গেলো না। তখন ধরেই নেয়া হলো সেই ছেলেটি নিয়ে পালিয়েছে। তখন আমার কি যে কান্না। স্কুলে কিভাবে নতুন জুতা পরে যাবো। পরে আবার কিনে দেয়া হবে বলায় সেই কান্না থামলো।আসলে প্রিয় জিনিস যখন হারিয়ে যায় তখন বেশ কস্ট লাগে। তা যত ছোট জিনিসই হোক না কেনো। আজও আমরা ভাই বোনেরা যখন এক সাথে হই এই ঘটনা নিয়ে কথা হয়। এ ঘটনা শোনার পর আমার নানা আব্বাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলেন যে তিনি কিভাবে এমন একটা কাজ করলেন। অনেক বড় কিছু ঘটার সম্ভাবনা ছিল। তাই সাবধান হতে বললেন। সেই ঘটনার পর থেকে আম্মা আমাদেরকে বেশ চোখে চোখে রাখতেন। এবং আমাদের আবাসিক এলাকার বাহিরে যেতে দিতেন না খেলা করতে।অপরিচিত কাউকে বাসায় নিয়ে আসা ঠিক না। তাকে সাহায্য করতে হলে অন্য ভাবেও করা যায়।সেই দিন তেমন বড় কিছু ঘটেনি তাই রক্ষা।
আজ এ পর্যন্ত। আবার দেখা হবে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেনীলাইফস্টাইল
পোস্ট তৈরি@selina 75
তারিখ২০শে মে, ২০২৫ ইং
লোকেশনঢাকা,বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি। স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা। এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

image.png

image.png

image.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 yesterday 

cmc.png

 yesterday 

xp2.png

xp3.png

xp4.png

xp5.png

 12 hours ago (edited)

আপু আপনার ছোটবেলার স্মৃতিচারণ পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।খুবই সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে আপনার ছোটবেলার অনুভূতিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন।আসলে এটা ঠিক বলছেন,প্রিয় জিনিস হারিয়ে গেলে সেটা অনেক কষ্ট হয়,সেটা ছোট হওক বা বড়।তাই অপরিচিত কাউকে বাসায় নিয়ে আসা ঠিক না।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।