গ্রীষ্ম মানেই লিচু আর শৈশবের স্মৃতির গল্প

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো '" গ্রীষ্ম মানেই লিচু আর শৈশবের স্মৃতির গল্প "'।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

গ্রীষ্মকাল এলেই মনটা যেন অজান্তেই পেছনে ফিরে যায়।ছেলেবেলার সোনালি দিনগুলোতে, যখন লিচু ছিল শুধুই একটি ফল নয়, বরং আনন্দ, উত্তেজনা আর ছোট ছোট দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতীক। তখনকার দিনগুলোয় সময় যেন একটু ধীরে চলত, আর গ্রীষ্মের দুপুর গুলো ছিল আমাদের নিজেদের রাজত্ব। লিচু গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে হাতে বাঁশের খুঁটি, চোখে রোদচশমার মতো করে হাত তুলে আমরা খুঁজে বেড়াতাম কোন ডালে সবচেয়ে পাকা লিচু ঝুলছে।আমাদের বাড়ির পেছনে ছিল একটা বড় লিচু গাছ, যেটা নিয়ে আমাদের যেন গর্বের শেষ ছিল না। বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় এলেই আমরা গাছটার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতাম।কবে ফুল ধরছে, কবে ডগা গুলোতে ছোট ছোট কাঁচা লিচু দেখা যাচ্ছে। প্রথমে সেই লিচু গুলো একেবারে সবুজ, তারপর ধীরে ধীরে হলদে-লালচে রঙে রূপ নিচ্ছে। এই রঙ বদলের প্রতিটি ধাপ যেন আমাদের জন্য একেকটি নতুন খবর, একেকটি উত্তেজনার তরঙ্গ।

পাকা লিচুর মৌসুম এলেই গাছের নিচে আমাদের ভিড় লেগে যেত। মাটিতে পড়ে থাকা কচি লিচু কুড়িয়ে খাওয়ার আনন্দটা কোনো পাকা লিচুর স্বাদকেও হার মানায়। কখনো কখনো দাদু নিজে গাছে উঠে ডাল নাড়িয়ে দিতেন, আর আমরা নিচে দাঁড়িয়ে ঝুড়ি হাতে ধরে রাখতাম। সেই ঝুড়ি ভর্তি লিচু দেখলেই চোখে আনন্দের জল আসত। মা তখন কিচেনে বসে একদিকে লিচু ছাড়িয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে রাখতেন, আর অন্যদিকে আমাদের বকাঝকা করতেন বেশি খেলে পেটের অসুখ হবে বলে। কিন্তু আমরা কি শুনি? বরং আরও একগোছা লিচু চেয়ে বসতাম।

গ্রীষ্মের সেই ছুটির বিকেল গুলোতে প্রতিবেশীদের বাচ্চারা একসাথে মিলে লিচু খাওয়ার প্রতিযোগিতা করত। কার লিচু বেশি রসালো, কারটার বিচি ছোট, কে কতগুলো একসাথে খেতে পারে, এসব নিয়েই চলত হৈ চৈ। কখনো আবার একেবারে গাছেই উঠে বসতাম, আর সেখান থেকে লিচু ছিঁড়ে খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। ঝুঁকি ছিল, ধমক ছিল, তবুও সেই স্বাধীনতার স্বাদ আজকের দিনে খুবই দূরের কিছু মনে হয়।

আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি একবারের লিচু চুরি। পাশের বাড়ির বিশাল লিচু গাছে লোভ সামলাতে না পেরে আমরা কয়েক জন চাচাতো জ্যাঠাতো ভাই বোন মিলে রাতে চুপি চুপি ঢুকে পড়েছিলাম। গাছে উঠেছিল আমার জ্যাঠাতো ভাই, আর আমরা ছিলাম নিচে, হাতে একটা পুরনো ব্যাগ। খুব সাবধানে কাজ চলছিল, কিন্তু হঠাৎ কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুরু হয়ে গেলে সব এলোমেলো।ব্যাগ ফেলেই দৌড়, তবুও হাতে ধরা পাঁচটা লিচু যেন সেই রাতে আমাদের সবচেয়ে বড় বিজয় ছিল। এখন মনে পড়লে হাসিও পায়, চোখও ভিজে আসে।

আজ এই ব্যস্ত জীবনে, যখন শহরের বাজার থেকে কেজিতে লিচু কিনে আনে আমার আব্বু , তখন সেই শৈশবের গন্ধটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। পলিথিনে মোড়ানো পাকা ফল দেখে মনের মধ্যে যে হাহাকার জাগে।সেটা কেবল সেই গাছতলায় কাটানো দিনগুলোই বুঝতে পারে। লিচু এখনো খাই, ভালোও লাগে, কিন্তু সেই প্রথম লিচুর রস মুখে মেখে জামা নোংরা করার আনন্দ আর নেই। নেই সেই বকাঝকা, নেই সেই লুকিয়ে লুকিয়ে খাওয়া, নেই সেই গ্রীষ্মের মাদকতা।

তবুও, যখনই গাছে থোকা থোকা লিচু দেখি, মনে হয় যেন সেই পুরনো দিনগুলো হাত বাড়িয়ে ডাকছে। শৈশব আর লিচু এই দুই শব্দই আমার কাছে এক হয়ে গেছে। যতদিন বেঁচে থাকি, ততদিন হয়তো লিচুর রসের চেয়ে বেশি করে এর স্মৃতির স্বাদই আমাকে তৃপ্ত করবে।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।