স্মৃতিচারণ: শৈশবের সেই ক্লাস ফাইভের প্রেম
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
বুধবার, ০২ ই জুলাই ২০২৫ ইং
আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন ভালোবাসা মানে ছিল না গোলাপ দেওয়া, ডেটিং করা, কিংবা ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা। বরং তখন প্রেম মানেই ছিল ক্লাসে কারো পাশে বসার জন্য মন কাঁপা, টিফিন ভাগ করে খাওয়া, হোমওয়ার্ক দেখে দেওয়ার অজুহাতে একটু সময় বেশি পাওয়া। আমার শৈশবের এমন এক গল্পই আজ তুলে ধরতে বসেছি। তখন প্রেম গুলো ছিল না এখনকার মতো এতো নোংরা। প্রেম জিনিসটা পবিত্র হলেও বর্তমানে তা একদম নোংরায় পরিণত হয়েছে। আসলে আগের কার প্রেম গুলো ছিল একদম খাঁটি।
শীতের এক সকালে আমাদের ক্লাসে ওর আগমন। নতুন ছাত্রী। আমি, স্বভাবতই একটু চুপচাপ ধরনের ছেলে। কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সেদিন প্রথমবার আমি আমার জীবনে কোন মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। আসলে এর আগে এরকম কোন মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি।বয়স তখন ছিল খুবই কম। প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা ছিল না।টিফিনের সময় ও একা বসেছিল। আমি নিজের ভাগের বিস্কুটের প্যাকেটটি ওর দিকে এগিয়ে দিই। ও একটু চমকে তাকায়, তারপর হেসে বলে,তুই আমাকে দিবি?
আমি উত্তরে বলেছিলাম হ্যাঁ, কারণ তুই তো আমাদের ক্লাসের নতুন।তাই তুই আমাদের অতিথি।প্রতিদিন ক্লাস শুরু হতো একরাশ উত্তেজনা নিয়ে ও আসবে তো? কোন জায়গায় বসবে? টিফিনে কি আজ আবার একসাথে খেতে পারব? আসলে তখনকার প্রেম ভালোবাসা বলতে এরকমটা ছিল। এখনকার মতো এতো বেশি নোংরা সঙ্গ ছিল না। তখন একজন আরেকজনের সাথে কথা বলা, পড়ালেখা শেয়ার করে পড়া এবং খেলা ধুলা করার সময় একসাথে খেলা ধুলা করা এটাই ছিল তখনকার সময়ের প্রেম ভালোবাসা। সময়ের পরিবর্তনের কারণে এখন সব কিছু একদম পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম ওকে কিছু লিখে দেব। কিন্তু ভয় পেতাম হাসবে না তো? কারো কাছে বলবে না তো?অবশেষে এক শুক্রবার, একটি পাতার কাগজে খুব ছোট করে লিখেছিলাম।তুই খুব ভালো। আমি চাই সবসময় তুই আমার পাশে থাক। স্কুল শেষে একসাথে হাঁটতে পারব।চিঠিটা বহুবার ভাঁজ করেছিলাম, আবার খুলে দেখেছিলাম। কিন্তু কোনো দিনও ওকে দিতে পারিনি। স্কুল ব্যাগের গোপন খাপে রেখে দিয়েছিলাম, কিন্তু তাকে দেওয়ার মতো সাহস হচ্ছিল না আমার। কেননা, আমি খুবই লাজুক প্রকৃতির ছিলাম।
একদিন সে হেসে কারো সাথে কথা বলছিল, হয়তো ক্লাসেরই আরেকজন ছেলে। হঠাৎ মনে হলো বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠলো। এমন অনুভূতি আগে কখনো হয়নি।সেদিন বুঝেছিলাম ভালোবাসা মানেই শুধু মিষ্টি নয়, কখনো কখনো কষ্ট, অধিকারবোধ আর অকারণে মন খারাপও। কিন্তু আমি কিছু বলিনি। ওর চোখে আনন্দ থাকলেই যেন আমিও খুশি থাকতাম।ক্লাস ফাইভের পর আমার বেশ কিছু কারণে কারণে আমি আরেকটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। স্কুল পাল্টে গেলো, শহরও বদলে গেলো। বিদায়ের শেষ দিনটায় ও কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।
শুধু বলেছিল,তুই যাচ্ছিস? আর আসবি না? আমি হেসেছিলাম, গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। তখন বলিনি তোর জন্যই এই স্কুলটা আমার এত প্রিয় হয়ে উঠেছিল।চলে আসার পর অনেক রাত ঘুমাতে পারিনি। মনে হতো আবার যদি একদিন দেখা হতো।এখন আমি বড় হয়েছি, প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে সবকিছু। হয়তো কোথাও এখনো আছে সেই মেয়েটি একটা চাকরিতে, একটা পরিবারে, বা হয়তো স্মৃতিতে। মাঝে মাঝে ফেসবুকের বন্ধুর তালিকায় খুঁজি, কোনোদিন পাইনি।
তবে একটা জিনিস আমি জানি সেই প্রথম ভালো লাগাটা ছিল একদম খাঁটি। সেখানে ছিল না কোনো শারীরিক আকর্ষণ, না কোনো লাভ লোকসানের হিসেব। শুধু ছিল শিশুসুলভ কোমল একটা অনুভব, আর সেই অনুভবই আজও আমার হৃদয়ে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভালোবাসা হিসেবে রয়ে গেছে।
সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Vote@bangla.witness as witness
Daily task
https://x.com/Riyadx2P/status/1940428647128867219?t=DlV1b2rLWCDuA7O_0UC2bQ&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.