স্মৃতির অগোচরে বাবা , শুধুই স্মৃতিময়,, ফেলে আসা স্মৃতি গুলো, কতনা মধুময়||~~

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


আসসালামু আলাইকুম/আদাব


সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ব্যস্ততম সময় এর মধ্যেও ভালো আছি।আর সেই সাথে আমার ব্লগে আপনাদের সকলকে স্বাগতম জানাচ্ছি।

IMG_20221212_224105.jpg


আজ 12 ই ডিসেম্বর।ঠিক আজকের এই দিনে আমার বাবা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন। আমার পৃথিবী জুড়ে বাবার মত আর কেউ এত ভালোবাসে নি আমাকে। এটা আজও আমি উপলব্ধি করতে পারি।
আমার বাবা ছিলেন খুবই সহজ-সরল ভালো মানুষ।আমার বাবার মধ্যে রাগ, জেদ, ক্ষোভ, হিংসা,বিদ্বেষ এগুলো কোনদিন কখনো চোখে পড়েনি।আর বাবা ছিলেন অনেক ভীতু মনের মানুষ একা ঘরে ঘুমাতে পারতেন না।রাতে বাসায় চোর আসলে আপোষেই চোরকে সব দিয়ে দিতেন।আমাদের বাসায় চুরি হওয়ার খুব মজার মজার ঘটনা আছে। বাবা কে কেন্দ্র করে। যা বাবার ভীতু মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
বাবা ছিলেন মেহমান বান্ধব। বাসায় প্রতিদিন কোন না কোন মেহমান কে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। এবং নানা রকমের রান্না বান্না করে খাওয়াতেন। আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়ানো যেন বাবার প্রিয় শখ। এবং মেহমানদের খাওয়াতে পারলে মনে প্রশান্তি পেত।আসল কথা হলো মানুষকে খাওয়াতে পারলে বাবা খুব তৃপ্তি পেতেন।এবং দুই তিনটা ব্যাগ ভরে ভরে বাজার আনতেন।আর বাবার বাজার করা দেখে প্রতিবেশীরা খুবই ক্ষ্যাপা তো আমার বাবাকে। বাবা কোনদিন আমাকে নাম ধরে ডাকে নি। প্রতিনিয়তই সে আমাকে মা বলে ডাকতেন। এবং আমি একটু অভিমান করলেই বলতো পাগলি মা আমার। আমার বাবাকে আমাদের গ্রামের লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, সবাই খুব বেশি ভালোবাসতেন। এবং অনেক বেশি সম্মান দিতেন।বাবা যখন সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়তেন। তখন দেখতে যে কি ভাল লাগত।তা আপনাদেরকে ভাষায় বোঝাতে পারব না। এজন্য আমি নিজেও বাবাকে অনেক সাদা পায়জামা এবং পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছিলাম।বাবা আমার হাতে রান্না করা পোলাও এবং মাংস খুব পছন্দ করতেন।আজ ও পোলা মাংস রান্না করতে গেলে, বাবার কথা খুব বেশি মনে পরে। আর ঠিক তখনই দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। বাবাকে খুব বেশি মিস করছি। খুব বেশি মনে পড়ছে। খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে। আসলে পৃথিবীতে বাবা নামক বটবৃক্ষের ছায়া যখন মাথার উপর থেকে সরে যায়,, তখনকার প্রচন্ড তাপদাহ কিভাবে তৃষ্ণার্ত করে ফেলে,বাবা নামক ব্যক্তিটির জন্য।বন্ধুরা বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।। তাই আজ দুদিন ধরে বাবার কথা মনে করে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম। এবং অশ্রু গড়িয়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছিল।আপনারা সকলেই দোয়া করবেন আমার বাবাকে যেন মহান বিধাতা জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।পৃথিবীর যে সকল বাবারা পরপারে গিয়েছেন মহান আল্লাহতালার সকল বাবাদের কে জান্নাত বাসী করুন।আমিন।



বন্ধুরা বাবাকে স্মরণ করে আপনাদের সাথে আমার আজকের লেখা একটি স্বরচিত কবিতা শেয়ার করছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।


স্মৃতিময় বাবা

IMG_20221212_224105.jpg


সেলিনা সাথী

♥বাবা তুমি স্মৃতি হয়ে
দিচ্ছ মনে দোলা,
স্মৃতিগুলো চোখের জলে
যায় না কভু ভোলা।

মাকে ছেড়ে বাবা তুমি
কেন গেলে চলে?
মায়ের মনে শত ব্যথা
হৃদয়ে পেখম মেলে।

তোমার মত এত ভালো
কেউ বাসেনা মাকে,
একলা বাড়ি একলা ঘরেই
বেশিটা ক্ষন থাকে।

হাজার হাজার স্মৃতির ভিরে
কাঁদে আমার মা,
ছেলেমেয়েরা তোমার মতন
মাকে বোঝে না।

মায়ের নিরব চোখের ভাষা
তোমায় শুধু খোঁজে,,
এই কথা কি অন্য কেউ
আর কী বলো বোঝে।

মা-বাবারা বোঝা হয়
একটি সময় এলে,,
মনুষ্যত্ব আর বিবেক বুদ্ধি
লোপ পেয়ে যাই ভুলে।

মায়ের মন আজব বটে
সন্তানদের তরে,,
মায়ের চোখে ঘুম আসে না
ছেলে না এলে ঘরে।

কি খেতে চাও মাগো তুমি
লাগবে তোমার কিছু,
এই বোধটা নেই তো কারো
শুধুই খোঁজে ইস্যু।

পাহাড় সমান কষ্ট মায়ের
বাবা তোমায় ছাড়া,,
অবুঝ মনের ব্যথাগুলো
দিচ্ছে পাহারা।

মায়ের জন্য বাবা তুমি
আবার এসো ফিরে,,
সুখ শান্তি ফিরে আসুক
তোমার গড়া নীড়ে।

বার ডিসেম্বর বাবা তুমি
দূর আকাশের তারা,
বুকের মাঝে কাঁপন বাবা
করছে আমায় তাড়া।

বাবা-মায়ের ফুলবাগানের
পাঁচ পাঁচটি টি ফুল
দুই ভাগে ভাগ হলো
একুল আর ওকুল।

হে বিধাতা বাবাকে আমার
জান্নাত করো দান,
বাবা যেন হৃদয় মাঝে
মায়া মমতার টান।

স্মৃতির অগোচরে বাবা
শুধুই স্মৃতিময়,,
ফেলে আসা স্মৃতি গুলো
কতনা মধুময়।

dropshadow_1629707620635.jpg

আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।




New_Benner_ABB.png


🌼ধন্যবাদ🌼

Sort:  
 2 years ago 

প্রথমে আপনার বাবার জন্য দোয়া রইল আপু। মহান আল্লাহ তা'আলা যেন আপনার বাবাকে বেহেস্ত নসিব করেন।বাবাকে নিয়ে খুব অসাধারণ একটি কবিতা আজকে লিখেছেন। আমারও তো বাবা নেই।বেশ ভালো লাগলো কবিতাটি আমার কাছে।

 2 years ago 

আসলে এতিম হওয়ার যন্ত্রণাটা অনেক বেশি তীব্রতর। আবু যার বাবা নেই শুধু তারাই বোঝে। সকল বাবাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া। রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সাগীরা।♥♥

 2 years ago 

আপু আপনার কবিতা পড়ে চোখে জল চলে আসলো। আমারও হঠাৎ করেই বাবার কথা খুব মনে পড়ে গেল। কিন্তু আমিও আপনার মতো এমনি কপাল পোড়া ইচ্ছে করলেই বলতে পারবো না বাবা তোমায় খুব ভালোবাসি আর তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবীর সকল বাবাদের জন্য দোয়া রইল। যাদের বাবা নেই দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের সবার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন প্রিয় আপু মনি বাবা এমনই একটি সম্পদ যার তুলনা কারো সাথে হয়না।।বাবা নামক আশীর্বাদের ছাতাটি মাথা থেকে সরে গেলে,, সমাজের অনেকেই অনেক বেশি অবহেলা করে।
রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি ছগিরা।♥♥

 2 years ago 

আসলে বাবার মতো মানুষ হয় না ৷ পৃথিবীর সেরা মানুষটিই বাবা ৷ সন্তানের উপর বাবা বট বৃক্ষের মতো দারিয়ে থাকে ৷ বাবা না থাকেই কেবল বোঝা যায় বাবা মানুষটি আসলে কি ৷ যাই হোক বাবাকে নিয়ে দারুণ একটি কবিতা লিখেছেন আপু ৷ সত্যিই অনেক সুন্দর হয়েছে কবিতাটি ৷ কবিতাটি পড়ে অনেক বেশি ভালো লাগলো ৷ ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য ৷

 2 years ago 

তবুও গর্ব করে বলতে ইচ্ছে করে আমার বাবা মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বাবা তাই বাবার প্রতি এত ভালোবাসা কি করে ভুলে যাই।বাবার আদর মায়া-মমতা শাসন সবকিছুই খুব বেশি মনে পড়ে।♥♥