গ্রাম বাংলার শান্ত প্রকৃতি, মিষ্টি রোদে ভেজা বিকেল, আর আমের বাগানের স্নিগ্ধ ছায়া—এই সবকিছু মিলিয়ে একটি দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই অনবদ্য। গতকাল এমনই একটি বিকেলে আমার পুরনো বন্ধু রিপনের সাথে দেখা হলো, আর তারপর আমরা তার পরিবারের আমের বাগান ঘুরে দেখলাম। এই ব্লগে আমি সেই সুন্দর মুহূর্তগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেব।দিনটি ছিল রবিবার, আবহাওয়া বেশ পরিষ্কার আর মনোরম। দুপুরের খাওয়া শেষ করে আমি রিপনকে ফোন দিলাম। সে বলল, "আজকে আমাদের বাগানে নতুন আম ধরেছে, চলো একবার ঘুরে আসি!" কথাটা শুনেই আমার মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠল। আমি তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নিলাম—হালকা রঙের পাঞ্জাবি আর স্যান্ডেল পরে বেরিয়ে পড়লাম।

রিপনদের বাড়ি আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাড়ায়, প্রায় ২০ মিনিট হাঁটা পথ। রাস্তার দুধারে সবুজ ক্ষেত, কখনো সরষে ফুলের হলুদ আভা, কখনো ধানের মাঠের দোল খাওয়া সবুজ ঢেউ। পথে একটু বিশ্রাম নিলাম একটি বটগাছের নিচে, যেখানে কিছু বুড়ো মানুষ গল্প করছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে শুনলাম এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে।রিপনদের বাড়ি পৌঁছে দেখি সে বারান্দায় বসে গিটার বাজাচ্ছে। আমাকে দেখেই হাসি দিয়ে বলল, "এত দেরি করে ফেললি কেন? আমি তো তোর জন্য অপেক্ষা করছি!" আমরা দুজনে মজার মজার গল্প শুরু করলাম—স্কুলের দিনের স্মৃতি, কলেজের বন্ধুদের নিয়ে হাসিঠাট্টা, আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা।

রিপনের মা আমাদের জন্য ঠান্ডা বেলের শরবত আর মুড়ি-মুড়কি দিলেন। শরবতের স্বাদ ছিল অসাধারণ—কাঁচা আম, পুদিনা পাতা আর মিষ্টির মিশেলে তৈরি। আমরা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাগান দেখার জন্য প্রস্তুত হলাম।রিপনদের বাড়ির পিছনেই প্রায় দুই একর জুড়ে আমের বাগান। বাগানের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল সারি সারি আমগাছ, যেগুলোর ডালপালা মাথা উঁচু করে আকাশ ছুঁতে চাইছে। গাছগুলোতে ছোট-বড় আম ঝুলছে, কাঁচা সবুজ থেকে হলদে-সবুজ—প্রত্যেকটি যেন প্রকৃতির অলংকার।বাগানে ঢুকতেই একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে এলো—কাঁচা আমের টক-মিষ্টি সুবাস, গাছের কচি পাতার গন্ধ আর মাটির সজীবতা। রিপন বলল, "এই গন্ধটা পাইসো? এটাই তো প্রকৃতির সুগন্ধি!" আমরা ধীরে ধীরে বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।

রিপনের বাবা একজন প্রকৃতিবিদ্ধ মানুষ, তিনি এই বাগানে নানা জাতের আম রোপণ করেছেন। রিপন আমাকে একে একে সব গাছ চিনিয়ে দিল।বাগানে শুধু আমগাছই নয়, পাখিরাও যেন এখানে নিজেদের আড্ডাখানা বানিয়েছে। দোয়েল, শালিক, টিয়া আর কোকিলের ডাক বাগানকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। একটা বটগাছের নিচে ছোট একটি পুকুরও ছিল, যেখানে পদ্মফুল ফুটে আছে। আমরা সেখানে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিলাম, পানির শীতলতা পায়ে লাগালাম। রিপন একটা বাঁশের লম্বা খুঁটি নিয়ে একটা কাঁচা আম পেড়ে আনল। সেটা কেটে লবণ-মরিচ দিয়ে আমরা চেখে দেখলাম। টক, তবে সঙ্গে একটা মিষ্টি আভাস—এমন স্বাদ শুধু গ্রামের আমেই পাওয়া যায়!

বিকেল ধীরে ধীরে সন্ধ্যায় রূপ নিচ্ছিল। আকাশে লাল-কমলা রঙের আভা, আমগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সোনালি আলো ঝিলিক দিচ্ছিল। আমরা বাগান থেকে কিছু কাঁচা আম আর পাকা আম সংগ্রহ করে ফিরলাম। রিয়াদের মা বললেন, "এবার আম পাকলে তোমাকে আবার আসতে হবে, জামাইয়ের মতো আম খাওয়াব!" হাসতে হাসতে আমি বাড়ি ফিরলাম। সেদিনের সেই আমের বাগানের সৌন্দর্য, বন্ধুর সাথে আড্ডা, আর প্রকৃতির মাঝে কাটানো সময়টা মনে থাকবে বহুদিন।গ্রাম বাংলার সবচেয়ে সুন্দর দিকগুলোর মধ্যে একটি হলো এর ফলবাগান, বিশেষ করে আমের বাগান। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো, বন্ধুর সাথে হাসি-আনন্দে দিন পার করা—এগুলোই জীবনের সত্যিকারের সম্পদ। যদি কখনো সুযোগ পাই, আবারও এমন একটি বিকেলে আমের বাগানে হারিয়ে যাব।

আমার বাংলা ব্লগের ভাইয়া ও আপুদের সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী কোন ব্লগে।

আল্লাহ্ হাফেজ

ক্যামেরা পরিচিতি

Device	Motorola g34 5g
Camera	52 MP
County	Bangladesh
Location	Rangpur, Bangladesh

আমার নাম মোঃ আবু বকর (সিদ্দিক) ।আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক।আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা।আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর কারমাইকেল কলেজ এর(IHC)ডিপার্টমেন্ট থেকে অনার্স করতেছি।আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। সবথেকে বড় পরিচয় আমি "আমার বাংলা ব্লগ"কমিউনিটির একজন সদস্য।আমি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি।বিশেষ করে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে ভীষণ ভালো লাগে আমার।পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। আমার সব থেকে বড় ইচ্ছা আমি একজন উদ্যোক্তা হব।আমি মনে করি ধৈর্য,পরিশ্রম, বিশ্বস্ততা এগুলো সফল হতে সম্মুখ ভূমিকা পালন করে। ধন্যবাদ।

Vote@bangla.witness as witness

Or

Set@rme as your proxy

আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য সবাইকে অসংখ্য "ধন্যবাদ।