চুল কাটিলেও দোষ না কাটিলেও দোষ||উভয় সংকট
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ বাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি মজার ঘটনা শেয়ার করব।ব্যপারা টা আপনাদের জন্য মজার হলেও আমার জন্য কিন্তু সাজার।
প্রথমে বলে নেই আমি বেশ আত্মভোলা মানুষ।নিজের ব্যপারে খুব একটা খেয়াল থাকে না।তারউপর সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টিউশন ক্লাস,নিজের পড়াশুনা সব কিছু মিলিয়ে এত ঝামেলায় থাকি যে আয়নায় নিজের মুখ দেখার সময় পাই একমাত্র সকালে স্নান করে বের হবার পর।তখন অনেক কিছুই মনে পড়ে এই যেমনঃচুল ছোট করতে হবে,দাড়ি কাটতে হবে,মাঝে মাঝে একটু মুখের যত্ন নিতে হবে।এরপর টিউশন শুরু হয় তারপর যে লাউ সেই কদু।সারাদিন আর কিছু মনে পড়ে না। আবার পরের দিন সেই সকাল বেলা মনে পড়ে এই যা চুল কাটা লাগবে।
যাই হোক বৃহস্পতিবার হ্যাংআউট শেষ করলাম।সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে, কারন একসাথে খাওয়াদাওয়া করব সবাই।তাই আমিও সবার সাথে বসে গেলাম।খাওয়াদাওয়া শুরু হওয়া মানেই সেখানে রাজনিতী থেকে শুরু করে অর্থনিতী সব চলতে থাকে।এর একটু পর বাবা আমাকে বলল,"তা তোমাকে একতারা কিনে দেব নাকি হিমালয়ের পাসপোর্ট"।আমি তো খুশি হয়ে গেলাম।তাইলে মনে হয় এবার পুজায় বেশ বাইরে ঘুরতে যাওয়া হবে।আমি খুশিতে বলেই ফেললাম,"মাত্র এই কয়দিনের মাঝে ভিসা,পাসপোর্ট ম্যানেজ হবে কিভাবে?"
আমার এই বোকামী দেখে দিলেন এক ধমক।বললেন চুল দাড়ি যে বানিয়েছ তাতে বাউল অথবা সন্ন্যাসী ছাড়া ছাত্র বলে তো মনে হয়না।টিউশনি গুলোও দুইদিন পর থাকবে না।এরকম মাস্টার দিয়ে কেউ পড়ায় নাকি।আমি বললাম সারাদিন ব্যস্ত থাকি তাই সময় পাইনা।তখন উনি বললেন,"কাল শুক্রবার কাল কেটে ফেলবা।"
আমি মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ।এরপর নিজের গাটের পয়সা দিয়ে কাটা লাগবে,তার থেকে এখন টাকা টা বাবার থেকেই আদায় করি।পরে চুল কাটার পয়সা দিয়ে কিছু খাওয়া যাবে।তাই মিন মিন করে বললাম আসলে মাসের শেষ তো। টাকা পয়সা নাই হাতে।টাকা পয়সা আসলেই কেটে নেব।
তখন বাবা বললেন,"কাল যাওয়ার সময় আমার থেকে টাকা নিয়ে যেও।"আমি তো মনে মনে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ে দিলাম।আর বললাম মিশন সাকসেস ফুল।
এরপর শুক্রবার সকালে একটি টিউশন থাকে টিউশন শেষ করে বাবার থেকে টাকা নিয়ে রওনা দিলাম।এরপর মনে হল দেখি তো চুল কাটার আগে আর পরে আমার পার্থক্য কেমন হয় সেটার জন্য একটি সেলফি তোলা যাক।
এরপর পৌছে গেলাম সেলুনে।এলাকায় জেন্টস পার্লার আছে।কিন্তু এই বিষয়ে আমার ফিলোসফি টা একটু কিপ্টামির দিকে।চুল ২জায়গা তেই কাটা হয়।কেন আমি মিছামিছি ৫০টাকার কাজ ২০০ টাকায় করাব? তার থেকে এখানে ৫০ টাকা দিয়ে চুল কেটে বিকেলে বাকি ১৫০ টাকা দিয়ে বিরিয়ানী খাব।
যাই হোক পৌছে গেলাম সেলুনে।আমি বরাবরই এই সেলুনেই চুল কাটি।আর এই দাদার থেকেই চুল কাটি।দাদার নাম তীর্থ।আর আমার চুল কাটার স্টাইল ও বরাবর একই থাকে।আমি বরাবরই "ক্রু-কাট" যাকে বলি আর্মি ছাট দেই।কিন্তু এবার দাদা মাথায় ভূত ঢুকিয়ে দিল।বলল সামনে পুজো।এবারো যদি আর্মি ছাট দাও তাইলে আর দেখতে হবে না,তোমার সিংগেল ই মরা লাগবে।
যাই হোক কথা টা অন্তরে তীরের মত বিধল। তাই বললাম দিন তাইলে স্টাইল করে কেটে। আমি কিন্তু স্টাইল অত বুঝি না।আমার মুখের সাথে মানাবে এমন একটা কাটিং দিয়ে দিন।এখান থেকেই সমস্যার শুরু।
এরপর দাদা গভীর মনোযোগের সহিত আমার চুল কাটতে থাকল।আমিও বাধ্য ছেলের মত চুপচাপ বসে থাকলাম।কাটা শেষ হতে দেখলাম দাদা চুলে জল-টল দিয়ে বেশ স্টাইল করে দিল।আমার দারুন লাগল।আপনি একটি জিনিস খেয়াল করবেন চুল কাটার পর সেলুন থেকে আপনাকে যতসুন্দর স্টাইল করে দেবে আপনি বাড়িতে হাজার চেষ্টা করেও অত সুন্দর করতে পারবেন না।
যাই হোক খুশি হয়ে দাদা কে ৫০টাকার জায়গায় ৬০টাকা দিলাম।এরপর গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরে এলাম।কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই বাধল বিপত্তি।আমার চুল কাটার শ্রী দেখে মায়ের মাথায় আগুন ধরে গেল।শুরু করলেন বকাদেওয়া।বললেন পাশের চুল ছোট,সামনের গুলো বড় এটা কেমন চুল কাটা।এখনই গিয়ে যেন আমি সামনের গুলো কেটে আসি।তাকে যতই বুঝাই যে সামনের চুল কাটলে বিচ্ছিরি দেখাবে উনি ততই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন।
আমি এখানেও ব্যবসার সুযোগ দেখতে পেলাম।তাই বললাম আচ্ছা ৫০টাকা দাও আমি সাইজ করে আনছি।এই বলে ৫০টাকা নিয়ে বাইরে গেলাম।একটু পর এসে বললাম শুক্রবার নাপিত দের হাফ দিন কাজ তাই তারা বাড় চলে গেছে।সামনে শুক্রবারে কাটব।টাকা টা আমার কাছেই রইল।এই বলে মা কে শান্তনা দিলাম।
তারপর আপনারাই বলুন চুল কাটা কি এতই বাজে হয়েছে? ১০ এর মাঝে কত রেটিং দেওয়া যায়? আপনাদের খারাপ লাগলে সামনে শুক্রবার আবার সাইজ করে নেব।
ফটোগ্রাফার | বৃত্ত |
---|---|
ডিভাইস | poco x2 |
লোকেশন | গোবিন্দগঞ্জ |
VOTE @bangla.witness as witness

OR
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
না দাদা চুল কাটা মোটেই খারাপ হয়নি। আপনাকে তো আমি 10-11 দিব। কিন্তু শিক্ষক হয়ে আপনি যেভাবে বাবা-মা থেকে টাকা আদায় করলেন তা যেন আপনার স্টুডেন্টরা শিখে না যায়।
না না ছাত্রছাত্রী শিখবে না।ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার আজকের চুল কাটার গল্প পড়ে। বাবার কাছ থেকে কিভাবে টাকা আদায় করতে হয় তা আপনার কাছ থেকে শিখে নিলাম। একজন শিক্ষক কতটা চালাক। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সত্যি ভাইয়া আপনার চুলকাটা দারুণ হয়েছে। এটা একদম সত্যি কথা কিছু কিছু কাজ আছে করলেও দোষ না করলেও দোষ। যেমন আপনার চুলকাটাটা।আপনি একজন ভালো ছাএ হয়ে মা- বাবাকে টাকা নেই বলে মিথ্যা বলেছেন এটা ঠিক নয়। সত্যি বলতে বাবা-মার কাছ থেকে কিছু নেওয়া দোষের কিছু নয়, তবে মিথ্যা বলে নয়।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হাহাহা। আসলেই আপু মাসের শেষ।টানাটানি যাচ্ছে।তাও এরপর থেকে আপনার পরামর্শ মানার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভাইয়া , ভালোই লাগলো আপনার ঘটনাটি পড়ে । চিরন্তন লেগেছে ,কারন আমার ভাইয়ারাও এমন করতো ।হিহিহি ,চুল কাটা খারাপ হয়নি ,ভালোই হয়েছে ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ধন্যবাদ আপু ধন্যবাদ।
আসলে এটা ঠিক বলেছেন ছেলেদের চুল নিয়ে হলো একটা জালা। যদি একটু বড় হয় তাহলে ও দোষ, আবার একদম ছোট করে ফেললেও দোষ। তার সাথে একটু স্টাইলিং কোন কাটিং দিলো দোষ হয়ে পড়ে। কিন্তু আপনি যেভাবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিলেন এটা বেশ মজা লাগলো। কিন্তু আপনি তো টিচার। স্টুডেন্টদের মতো আচরণ করলেন। তবে পুরো পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।
আমি কিন্তু এখনো ছাত্র ও আছি।ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনাকে ১০ এ ৮ দিলাম। যাইহোক আপনার চুল কাটার গল্পটি শুনে বেশ মজা পেলাম। সিঙ্গেল মরার ভয়ে যে স্টাইলিশ চুল কাটিয়েছেন তাতে আপনার মায়ের মাথায় আগুন ধরে গেল 😁😁। তবে ৫০ টাকা দিয়ে চুল কাটার এবং ১৫০ টাকা দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার প্ল্যানটা কিন্তু বেশ ভালো 😊।
প্রশংসা শুনে খুশি হলাম আপু।ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।
চুলকাটা আজকালকার ছেলেদের মতই হয়েছে আর ভালোই লাগছে। সাথে মা বাবার সাথে বিজনেস টাও ভালোই হল। বড় হয়ে আম্বানি হবে মনে হচ্ছে।আর ভিসা পাসপোর্টটা হয়ে যাক। একবার ঘুরে যাও। ভালোই হবে।
তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক দিদি।অবশ্যই যাব।ধন্যবাদ
আসলে বাঙ্গালীদের মাথায় যে কত রকমের বুদ্ধি থাকে তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানে। আর যাই হোক এমন কিছু চালাকি রয়েছে যা পরিবারের জন্য অমঙ্গল কর,সেদিকে বিবেচনা রাখতে হবে মাথায়।
ভাইয়া আমি যেটাই করি আগে পরিবারের দিক ভেবেই করি। সেই ক্লাস টেন থেকে পরিবার থেকে টাকা নেই না।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর উপদেশ আর মন্তব্যের জন্য।