লাইফ স্টাইল পোস্ট - " এক রাতের নান-গ্রীল আর ঝুম বৃষ্টির গল্প " || Written by @maksudakawsar ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। বেশ ব্যস্ততায় যাচেছ সময়। সেই সাথে তো রয়েছে প্রচুর মানসিক চাপ। সব মিলিয়ে বেশ হিমশিম খেতেই হরো চ্ছে। তবুও এরই মধ্যে চলে যাচ্ছে সময় আর দিন। আর সেই সাথে জীবন থেকে চলে গেল আরও একটি ঈদ। বুঝতেই পারলাম না এবারের ঈদ কখন আসলো আর কখন গেল। যাই হোক আমিও চলে আসলাম আজ আবার আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

image.png

Image created- maksudakawsar, with AI Tools

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.16_ec9dda1f.jpg

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.17_38f7c085.jpg

আজকাল ঢাকায় সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম—বাসায় গ্যাস না থাকা। কখন আসবে, কখন যাবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। একদিকে চাকরিজীবনের চাপ, আরেকদিকে সংসারের দায়িত্ব—সবকিছু সামলে প্রতিদিন রান্না করাটা একটা যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই যুদ্ধের মাঝে কয়েকদিন এমনই কেটেছে যে রান্নাঘরের চুলা জ্বলে উঠতেই পারেনি। একদিন ঠিক করলাম—আজ আর না, আজ বাইরে কিছু খেয়ে আসি। রাত প্রায় ১০টা বাজে। বাসার একদম কাছেই একটা পরিচিত রেস্টুরেন্টে গেলাম—নান আর গ্রীলের জন্য। হালকা সবজি, মসলা গ্রীল আর গরম গরম নান রুটি—এই চিন্তা করতেই মন ভালো হয়ে যায়। ঢুকে হোটেল বয়কে অর্ডার দিলাম—"দুইটা নান, এক প্লেট গ্রীল, সাথে মিক্সড ভেজিটেবল।” ব্যস, বসে গেলাম অপেক্ষায়।

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.17_f39a9960.jpg

রেস্টুরেন্টে ভিড় ছিল না খুব বেশি, হয়তো রাত হয়ে গেছে বলেই। এমন সময় হঠাৎ করেই যেন আকাশ ফেটে পড়ল। ধুম-ধাম শব্দ করে শুরু হলো বজ্রসহ বৃষ্টি। প্রথমে মনে হলো হয়তো সামান্যই হবে, কিন্তু না! আমরা যতক্ষণে খাওয়া শেষ করলাম, বাইরে তখন রীতিমতো ঝড়ের মতো বৃষ্টি। রাস্তার সব রিকশা উধাও। কেউ দাঁড়ায় না। কিছু রিকশা এলেও সবাই অগ্রিম যাত্রী নিয়ে গেছে। সবাই কেবল নিজের মতো করেই ছুটছে—ভিজছে, ছুটছে। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম রেস্টুরেন্টের সামনের টিনের নিচে, গায়ে হাত দিয়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি। আশেপাশে আরও অনেক মানুষ। সবার মুখে একরকম চিন্তার ছাপ—কে কখন, কিভাবে বাড়ি ফিরবে সেই ভাবনা। মিনিট গড়িয়ে যাচ্ছে মিনিটে, সময় গড়িয়ে রাত ১১টা ১৫। আর তখনই মনে পড়ল—বাসার গেট ১২টার পর বন্ধ হয়ে যায়! তার মানে হাতে সময় মাত্র ৪৫ মিনিট।

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.15_633be115.jpg

বৃষ্টি কিন্তু থামার নাম নিচ্ছে না। ছাতা নেই, প্লাস্টিকও নেই। সবকিছু ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করলাম কয়েকজন রিকশাওয়ালাকে অনুরোধ করতে—“ভাই একটু চলেন না, বাসা তো বেশি দূরে না।” কিন্তু কেউই রাজি নয়। তারা নিজের মতো করে ছুটে যাচ্ছে অন্যদিকে। কেউ বলে “ভাই ভিজতে পারুম না,” কেউ বলে “এইদিকে যামু না।” সেই মুহূর্তে একটা অসহায়ত্ব ভর করল। শহরে থাকি, কিন্তু শহরের ভেতরেই যেন কোথাও আটকে গেছি। মনে হলো—চাকরি আছে, বাসা আছে, রেস্টুরেন্টে খেতে পারি, কিন্তু তবুও এই এক ফালি পথ পেরোনোটা যেন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। বাইরে
অবশেষে অনেক চেষ্টা করে, অনেক অনুরোধের পরে এক রিকশাওয়ালা রাজি হলো। তবে শর্ত ছিল—ভাড়াটা একটু বেশি দিতে হবে। আমরা রাজি হলাম। বৃষ্টিতে ভিজে হলেও ফিরে যেতে চাই। যতক্ষণে রিকশায় উঠলাম, ততক্ষণে কাপড় ভিজে গা কাঁপছে। রিকশা চলতে শুরু করল, আর আমরা একরকম কৃতজ্ঞতার সাথে তাকিয়ে রইলাম ওই মানুষটার দিকে, যিনি অন্তত আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। রিকশার ছাঁদ ততটা কাজ করছিল না। চারদিক দিয়ে ঠাণ্ডা পানি এসে জামা-কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছিল। মাথার ওপর ভিজে ছাতা, আর পায়ের নিচে জল জমে যাওয়া রাস্তায় ছুটে চলা—সব মিলিয়ে একটা ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা। শহরের আলোকজ্জ্বল রাস্তাগুলোও যেন সেদিন কেমন ম্লান হয়ে গিয়েছিল।

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.18_6bafe034.jpg

ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় রাত ১১টা ৫৫ মিনিট। দারোয়ান কপাট বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর আমরাও পৌঁছালাম ঠিক সময়মতো। গেট খুলল, আমরা ঢুকলাম। ততক্ষণে শরীর ঠাণ্ডায় কাপছে, গায়ের কাপড় থেকে জল ঝরছে। বাসায় ঢুকে মনে হলো—একটা যুদ্ধ জিতে ফিরলাম। এটা শুধু এক রাতের গল্প নয়। এটা শহরজীবনের প্রতিচ্ছবি। এমন কত মানুষ প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। হয়তো কেউ অফিস থেকে ফিরছেন, কেউ হসপিটাল থেকে, কেউ বাজার থেকে—তাদের মধ্যে অনেকেই আটকে পড়েন এই বৃষ্টি, যানজট কিংবা গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা নিয়ে।

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.15_ca6bca1c.jpg

নগরজীবন যতই আধুনিক হোক, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সবসময়ই থাকতে পারে। তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার। মানবিকতা এখনও আছে। সেই রিকশাওয়ালার মতো মানুষেরাই প্রমাণ করে, এখনও কেউ কেউ ভীষণ দরদ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। পরিকল্পনা ছাড়া বাইরে যাওয়া উচিত নয়। রাতের বেলা, বিশেষ করে বর্ষাকালে ছাতা বা রেইনকোট ছাড়া বাইরে যাওয়া বোকামি। ঘরের চুলার গুরুত্ব বোঝা যায় যখন সেটা না থাকে। গ্যাস না থাকা একটা ছোট সমস্যা মনে হলেও, সেটাই আমাদের জীবনযাত্রার ওপর কতটা প্রভাব ফেলে তা বোঝা যায় এইসব অভিজ্ঞতায়।

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.16_567c6a4d.jpg

সেই রাতে ভিজে ভিজে বাসায় ফেরা, ভাড়া বেশি দিয়ে হলেও রিকশা খোঁজা, আর সময়ের আগে গেট পেরিয়ে ঢুকে পড়া—সব মিলিয়ে মনে হলো যেন আমি কোনো অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে দিয়ে গেলাম। ছোট শহুরে জীবনেও কত গল্প জমে থাকে, শুধু দরকার সেটা মন দিয়ে দেখার। এই লেখাটি আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা জানানোর জন্যই নয়, বরং সেইসব মানুষদের কথা বলার জন্য লিখলাম, যারা প্রতিদিন এমন কঠিন মুহূর্তে পড়ে যান। তারা হয়তো কারো কাছে গল্প করে না, হয়তো শুধু ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে চুপচাপ ঘরে ফিরে যান। কিন্তু আমি জানি—তাদের প্রতিটা রাতের গল্প, প্রতিটা ভিজে যাওয়া পথের অভিজ্ঞতা একেকটা শহরের জীবন্ত অধ্যায়।

WhatsApp Image 2025-07-29 at 20.18.17_c2e5b6a9.jpg

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীলাইফস্টাইল
ক্যামেরাVivo y18
পোস্ট তৈরি@maksudakawsar
লোকেশনবাংলাদেশ

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️