লাইফ স্টাইল পোস্ট - " বন্ধুর সাথে আড়ং এ কেনাকাটার একটি বিকেল " || Written by @maksudakawsar ||
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। বেশ ব্যস্ততায় যাচেছ সময়। সেই সাথে তো রয়েছে প্রচুর মানসিক চাপ। সব মিলিয়ে বেশ হিমশিম খেতেই হরো চ্ছে। তবুও এরই মধ্যে চলে যাচ্ছে সময় আর দিন। আর সেই সাথে জীবন থেকে চলে গেল আরও একটি ঈদ। বুঝতেই পারলাম না এবারের ঈদ কখন আসলো আর কখন গেল। যাই হোক আমিও চলে আসলাম আজ আবার আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

Image created- maksudakawsar, with AI Tools

বৃষ্টি কিংবা রোদ—শহরের বিকেলগুলো যেন প্রতিদিন এক নতুন রূপে ধরা দেয়। ঢাকার আসাদ গেইটের আড়ং-এর সামনে দাঁড়িয়ে আমরা দুজন, আমি আর আমার প্রিয় বন্ধু, একসাথে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। দু’জনেই জানতাম, আমাদের আসার মূল কারণ কিছু কেনাকাটা। কিন্তু এর বাইরেও ছিল কিছু অদৃশ্য টান—আড়ংয়ের উষ্ণ সৌন্দর্য, নান্দনিক সাজানো পণ্য আর এক কাপ কফির মতো মুগ্ধতা, যা প্রতিবারই আমাদের টেনে নিয়ে যায়।আড়ং-এর দরজা দিয়ে ঢুকতেই যে জিনিসটা প্রথম চোখে পড়ে তা হলো, নিপুণ সাজানো শেলফ আর তার ওপর সাজিয়ে রাখা বাঙালিয়ানার ছোঁয়ায় গড়া হস্তশিল্প পণ্য। সেদিনটা ছিল তুলনামূলক শান্ত, তেমন ভিড় ছিল না। এই সুযোগে আমরা ধীরে ধীরে দেখতে শুরু করলাম একেকটা আইটেম।

প্রথমেই চোখে পড়লো কিছু দারুণ ডিজাইনের সিরামিক সেট। পরিপাটি করে সাজানো কাপ-সসার, বাটি, প্লেট—সবকিছুতেই ছিল এক ধরনের শিল্পের গন্ধ। আমরা দুজনেই খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম একটির দিকে তাকিয়ে। হালকা নীল-সাদা প্রিন্টের কাপ সেট, যার হ্যান্ডেলটাও ছিল শৈল্পিক ঘূর্ণির মতো। আমি হেসে বললাম, “এটা হলে সকালবেলার চা-ও যেন ক্লাসিক হয়ে যায়!” বন্ধু মাথা নাড়ল, “ঘরে এমন কাপ থাকলে, অতিথিরাও ভেবে নেবে, আমরা অনেক স্টাইলিশ!” হাতছানি দেয় চায়ের মগ, গ্লাস আর চিনির পাত্র। সিরামিকের পাশেই ছিল এক র্যাক ভর্তি কফি মগ আর নানা রকম গ্লাস। কিছু গ্লাসের ডিজাইন এতটাই অনন্য ছিল যে মনে হচ্ছিল এগুলো শুধু পানীয়ের জন্য নয়, বরং শোকেসে সাজিয়ে রাখার মতো। একটা গাঢ় সবুজ রঙের মগ হাতে নিয়ে বন্ধুটি বলল, “তুই জানিস, মাঝে মাঝে শুধু কাপ দেখেই চায়ের ইচ্ছে হয়।” আমি মুচকি হেসে বললাম, “আসলে জিনিসগুলো শুধু ব্যবহারের না, এরা মুড বদলায়।” একটা লাল সাদা চিনির পাত্র ছিল—ছোট, গোল আর টেরাকোটার ছোঁয়া-দেওয়া কভারসহ। বন্ধুটি বলল, “এটা যদি কাউকে উপহার দেওয়া যায়, ওর চায়ের সময়টা আরও বেশি সুন্দর হয়ে যাবে।”

নিচতলার শাড়ি আর সালোয়ার কামিজের সেকশনে গিয়েও কিছু সময় কাটালাম। যদিও সেদিন আমাদের কেনার তেমন প্ল্যান ছিল না এই সেকশন থেকে, তবুও চোখ তো মনকে বাঁধা দেয় না। একটা পেস্টেল রঙের কাতান শাড়ির দিকে তাকিয়ে বন্ধু হঠাৎ বলে উঠলো, “বিয়েতে এই রঙটা দারুণ লাগবে!” আমি বললাম, “তোর মুখে এটা জমে যাবে।” সে একগাল হেসে বললো, “তাই না! একদিন পরে নিয়ে আসবো মা’কে সঙ্গে করে।” এই রকম কথার মাঝে কিছু কিছু মুহূর্ত থাকে, যা কখনও হারিয়ে যায় না। সে মুহূর্ত হয়তো কোনো দামি জিনিস কেনার না, কিন্তু একে অন্যের মনের সাথে মিশে যাবার। এরপর উঠলাম ওপর তলায়। সেখানেই চোখে পড়লো অসাধারণ কিছু হোম ডেকোর আইটেম। বিশেষ করে, দেয়াল ঘড়ি আর মোমদানি—একেকটা যেন সময় আর আলোয় মিশে যাওয়া গল্প বলে। একটা কাঠের ফ্রেমে ঘড়ি ছিল যার ডায়ালে হাতের কাজ করা পেইন্টিং। এমন ঘড়ি দেখলে বোঝা যায়, সময় কেবল কাটে না, বরং থেকে যায়।

একটা ব্রোঞ্জ রঙের ছোট মোমদানি দেখে মনে হচ্ছিল, যেন কোন ধ্রুপদী গানের রেশ। বন্ধু বলল, “এটা আমার সাজঘরের টেবিলে রাখলে একদম মানাবে।” আমি ভাবলাম, সাজঘর তো শুধু প্রসাধনী রাখার জায়গা না, বরং সেখানে এমন ছোট জিনিসগুলো মন ভালো রাখার একেকটা চাবিকাঠি। সবশেষে আমরা ঢুকলাম আড়ং-এর প্রসাধনী বা বিউটি সেকশনে। এই জায়গাটা সবসময় একটু বেশি আকর্ষণ করে। কারণ এখানে আছে হাতের তৈরি সাবান, হারবাল লোশন, লিপবাম, বডি স্প্রে—সব কিছুতেই দেশি ঘ্রাণের ছোঁয়া। একটা বডি মিস্ট নিয়ে বন্ধুটি ঘ্রাণ নিলো, তারপর আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “এইটা নিস! এটা অনেক রিফ্রেশিং।” আমি ঘ্রাণ নিয়ে বললাম, “আহা! যেন গ্রামবাংলার কোনো বাগানে হাঁটছি।” এমন অনেক ছোট ছোট পণ্য ছিল যেগুলো শুধু ঘ্রাণ নয়, বরং মনে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। আমরা দুজনই কয়েকটি আইটেম পছন্দ করলাম—একটি হালকা গোলাপি টোনের লিপবাম, আরেকটি নারকেল দুধ-ঘ্রাণের বডি লোশন, সঙ্গে একজোড়া নরম সুগন্ধি সাবান। এসব আইটেম মানে শুধু নিজের যত্নই নয়, বরং এক ধরনের আত্মিক সংযোগ, সময়ের মাঝে নিজেকে একটু ভালোবাসা দেওয়া।

কেনাকাটা শেষে যখন বিল দিচ্ছি, তখনই বন্ধুটি হালকা গলায় বললো, “আজকের দিনটা কেমন জানিস? মনে হচ্ছে যেন একটা ছোট ছুটির মতো।” আমি বললাম, “হ্যাঁ, এই সময়টা শুধু আমাদের দুজনের ছিল।” দিন, সময়, টাকা—এসব সবসময় থাকে, কিন্তু কিছু মুহূর্ত কেবল অনুভবের জন্য থাকে। বাইরে বেরিয়ে যখন রোদ মাথার ওপর, আর আমাদের ব্যাগে ভরে থাকা সামান্য কিছু প্রসাধনী, কাপ আর স্মৃতি—তখন মনে হচ্ছিল, আমরা দুজনই কিছু একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ে ফিরছি। আড়ং শুধু একটি দোকান নয়, এটি একটি অনুভব। এখানে প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে মিশে থাকে সংস্কৃতি, শৈল্পিকতা এবং ভালোবাসা। আসাদ গেইটের আড়ং-এ কাটানো সেই এক বিকেল, যেখানে সময় বয়ে গিয়েছিল ঘড়ির কাঁটার মতো নয়, বরং প্রতিটি মুহূর্ত যেন ছিল একেকটি থেমে থাকা ফ্রেম—চিরকাল মনে রাখার মতো।

সেদিন আমরা হয়তো অনেক দামি কিছু কিনিনি, কিন্তু যা কিনেছি তার প্রতিটা পেছনে ছিল ভাবনা, স্পর্শ আর বন্ধুত্বের ছায়া। সময়ের ভেতর হারিয়ে যাওয়া এই বিকেলটা, হয়তো আর কখনও আসবে না, কিন্তু তার স্মৃতি থেকে যাবে, ঠিক এক কাপ চায়ের মতো—শান্ত, উষ্ণ আর আন্তরিক। জানিনা আমার আজকের পোস্ট কেমন লাগলো আপনাদের কাছে। আশা করবো প্রতিদিনের মত করে আজকের পোস্টও বেশ ভালো লাগবে।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | লাইফস্টাইল |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y18 |
পোস্ট তৈরি | @maksudakawsar |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
